গ্রিসে রানি এলিজাবেথের অজানা ভ্রমণ!

কৌতূহলের বিষয় ছিল যে, বৃটেনের সদ্য প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ কখনোই গ্রিস সফর করেনি, যদিও তিনি বিশ্বের ২০০টি দেশ অতিক্রম করতে পেরেছিলেন।

সঠিক ঘটনাটি হল যে, তিনি রাজকীয় দায়িত্ব গ্রহণ করার পরে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রিস ভ্রমণ করেননি বটে, তবে, রাজকন্যা এবং ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসাবে তিনি ১৯৫০ সালের ডিসেম্বরের শুরুতে গ্রিসে এসেছিলেন।

গ্রিসের সঙ্গে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বিশেষ সম্পর্কের সবচেয়ে রঙিন অধ্যায়গুলির মধ্যে এই সফর একটি, যা রূপকথার মতো শোনায়।

Travelion – Mobile

তরুণ রাজকুমারী একটি ব্যক্তিগত সফরের জন্য গ্রিক রাজা পাভলোস এবং রানী ফ্রেডেরিকার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তখন মাত্র ২৪ বছর বয়সী, তিন বছরের বিবাহিত জীবন এবং দুই সন্তানের মা ।

যৌবন থেকে প্রৌঢ়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
যৌবন থেকে প্রৌঢ়ে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

তিনি তার স্বামী ডিউক অফ এডিনবার্গ ফিলিপ, যিনি তখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে একজন অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তারা একসাথে তৎকালীন ব্রিটিশ দখলাধীন মালটার রাজধানী ভ্যালেটা থেকে একটি যুদ্ধজাহাজে যাত্রা করেছিলেন এবং গ্রিসের উপকূ্লীয় জেলা ফালিরোতে অবতরণ করেছিলেন।

গ্রিসের রাজকীয় দম্পতি রাজা-রানী তাঁদের সম্মানের সাথে স্বাগত জানায়।

১৯৫০ সালের ৬ ডিসেম্বর বুধবার, একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে সেন্ট নিকোলাস দিবসে, পাঁচ মহাদেশ এবং সাত সমুদ্রের এক সময়ের পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারীকে দেখতে এবং উল্লাস করার জন্য শত শত নাগরিক রাজকীয় অবস্থানে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।

গ্রিসে গৃহযুদ্ধ সবেমাত্র শেষ হয়েছে এবং পরাজিত কমিউনিস্টরা অগত্যা নির্বাসন, বাস্তুচ্যুত এবং নিপীড়নের পথ গ্রহণ করেছিল। সংযত উত্তেজনার ছোঁয়াসহ শান্ত পরিবেশে রাজকুমারী এবং তার স্বামী একটি খোলা লিমুজিনে চড়েছিলেন এবং তাতোই প্রাসাদে রওনা হয়েছিলেন।

স্বামী ডিউক অব এডিনবরা, ফিলিপের সঙ্গে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
স্বামী ডিউক অব এডিনবরা, ফিলিপের সঙ্গে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।

রাজধানী এথেন্স শহর কেন্দ্র থেকে ২৭ কিমি দূরে অবস্থিত ১০ হজারের একরের জমি নিয়ে প্রাসাদ ছিল গ্রিক রাজপরিবারের গ্রীষ্মকালীন প্রাসাদ। যার বর্তমান সরকারি নাম ডেকেলিয়া।

রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ দম্পতি এথেন্সে এক সপ্তাহ অবস্থান করেছিলেন। ইংরেজ সাংবাদিকদের একটি দল এবং স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের একটি বড় নিরাপত্তা বাহিনী চব্বিশ ঘন্টা তাদের সঙ্গে ছিল।

এথেন্সে তাদের প্রথম যাত্রা ছিল মাউন্টেড অফিসারদের দলের সাথে। পথে ভদ্র এথেনিয়ানরা তাঁদের স্বাগত জানায়। তখন ফিলিপ তার স্ত্রীর জন্য অনুবাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন, যেহেতু তিনি নিজে গ্রিক বংশোদ্ভূত ছিলেন।

১৯৫০ সালে এলিজাবেথের গ্রিস সফরের বিবিসি ভিডিও দেখুন

YouTube video

প্রিন্স ফিলিপের জন্ম ১৯২২ সালের ১০ই জানুয়ারী গ্রিসের এক দ্বীপ কর্ফুতে। তিনি ছিলেন গ্রীসের প্রিন্স এ্যান্ড্রু এবং ব্যাটেনবার্গের প্রিন্সেস এলিসের কনিষ্ঠতম সন্তান এবং একমাত্র পুত্র বাবা-মায়ের দিকের এই বংশধারার ফলে তিনি ছিলেন একইসঙ্গে গ্রিস এবং ডেনমার্কের রাজকুমার। বাবা মায়ের সন্তানদের মধ্যে তিনিই ছিলেন একমাত্র ছেলে। খুবই আদরে কেটেছে তার শিশুকাল।

কিন্তু এর পরের বছরেই গ্রিসে এক অভ্যুত্থানের পর তাদের পরিবার সেদেশ থেকে বিতাড়িত হয়। একটি ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ তাদের নিরাপদে ইতালি নিয়ে যায়। ফল রাখার এক বাক্সের মধ্যে তৈরি করা বিছানায় বহন করা হয় শিশু ফিলিপকে।

গ্রিস ছেড়ে যাওয়ার আগে সোলিয়ার পোশাক পড়া ছোট্ট রাজকুমার ফিলিপ
গ্রিস ছেড়ে যাওয়ার আগে সোলিয়ার পোশাক পড়া ছোট্ট রাজকুমার ফিলিপ

রাজা ষষ্ঠ জর্জের সম্মতিতে ১৯৪৭ সালের ২০ নভেম্বর লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন । বিয়ের আগে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিতে হয় গ্রিক রাজপুত্র ফিলিপকে। গ্রিক পদবি বাদ দিয়ে তিনি নেন মায়ের ইংরেজ পদবি মাউন্টব্যাটেন। বিয়ের অনুষ্ঠানের আগের দিন প্রিন্স ফিলিপকে ‘হিজ রয়্যাল হাইনেস’ উপাধি দেওযা হয় । আর বিয়ের দিন সকালে তাকে করা হয় ‘ডিউক অফ এডিনবরা।’
গত বছরের ৯ এপ্রিল সকালে বাকিংহ্যাম প্যালেসের উইন্ডসর ক্যাসেলে ৯৯ বছর বয়সে মারা যান ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপ । তিনি ৭৩ বছরের দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে।

গতকাল বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা যান। ১৯৫২ সালে বাবা রাজা জর্জের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় এলিজাবেথ উত্তরাধিকারী হিসেবে ব্রিটিশ সিংহাসনে বসেন।

রানির মৃত্যুর পর তাঁর বড় ছেলে ৭৩ বছর বয়সী তৃতীয় চার্লস প্রথাগতভাবে ব্রিটিশ সিংহাসনে রাজা হিসেব আরোহণ করেছেন।

আরও পড়তে পারেন :
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেছেন
কথা ছিল না রানি হওয়ার, সেই এলিজাবেথই ৭০ বছর উজ্জ্বল করেন ব্রিটিশ রাজসিংহাসন
ব্রিটেনের নতুন রাজা চার্লস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!