গ্রিসে বাংলাদেশি নারীকে হত্যার লোমহর্ষক জবানবন্দি ঘাতকের

গ্রিসে প্রবাসী বাংলাদেশি নারী কর্মী রুনা আক্তারকে হত্যার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে তার ঘাতক সাবেক সহকর্মী। ৪০ বছর বয়েসী এই বাংলাদেশি নিজেকে রুনার প্রেমিক দাবি করে স্পষ্ট করে বলেছেন,স্বামীকে তালাক না দেয়ায় এবং পাওনা টাকা ফেরত না পাওয়ায় রুনাকে হত্যা করেছেন। আর এ ঘটনার জন্য তিনি মোটেই অনুতপ্ত নন।

রবিবার বিকেলে রাজধানী এথেন্সের কিপসেলির তেনেদু স্ট্রিটে নিজ বাসার সামনে বাংলাদেশি সহকর্মীর হাতে নির্মমভাবে খুন হন রুনা আক্তার (৩৬)। প্রকাশ্যে দিনের আলোতে তাকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাত করে ঘাতক। গত্যাকারী ৪০ বছর বয়েসী ওই বাংলাদেশিকে গ্রিক পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং এ ঘটনায় স্থানীয় থানায় একটি মামলা হয়েছে।

জবানবন্দির বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ঘটনাটি ফলাও করে প্রচার করেছে গ্রিসের সংবাদ ও গণমাধ্যমগুলোতে।

Travelion – Mobile

নিহত রুনা আকতারের দেশের বাড়ি নারায়নগঞ্জ জেলার কলাবাগ এলাকায়। তবে গ্রেফতার হওয়া ঘাতকের পরিচয় গ্রিক পুলিশ ও মিডিয়া পরিচয় প্রকাশ করেনিা এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসে ঘটনা সর্ম্পকে অবগত থাকলেও আটক বাংলাদেশির পরিচয়-তথ্য এখনও পাননি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

জবানবন্দীতে ঘাতক জানান, এথেন্সের একটি ক্লিনিং কোম্পানিতে রা দুই জন এক সঙ্গে কাজ করতেন। এক পর্যায়ে বিবাহিত রুনার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। স্বামীর সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদ করে তার কাছে চলে আসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন রুনা আক্তার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিশ্রুতি রাখেননি রুনা। উপরন্ত রুনা ও তার বেকার স্বামী নানা সময়ে তা কাছ থেকে ধার নিয়ে ২০ হাজার ইউরো বকেয়া করেছিল। পাওনা নিয়ে এই দম্পতি সঙ্গে বিরোধও হয়।

আরও পড়তে পারেন : দ. আফ্রিকায় বাংলাদেশি নারী হত্যার অভিযোগে স্বামী আটক

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দিতে গিয়ে তিনি জানান, তাদের সম্পর্ক এগোতে না দেখে রুনার সঙ্গে শেষ বোঝাপড়ার সিদ্ধান্ত নেন। রোববার বিকেলে রুনা বাসায় রওনা হন। পথে ওমোনিয়া এলাকার একটি দোকান থেকে ছুরি কিনে সঙ্গে নেন। ছুরিটি পকেটে লুকিয়ে রেখেছিলেন।

রুনাকে জরুরী কথার অজুহাত দেখিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে সামনের রাস্তায় আসার অনুরোধ জানান। রুনা আসলে প্রথমেই জানতে চান, স্বামীকে তালাক দিবেন কিনা? রুনা অপরাগতা জানান এবং তার জীবন থেকে সরে যেতে বলেন। তখন ঘাতক পাওনা টাকা ফেরত চাইলে রুনা তা অস্বীকার করেন। এতে রেগে গিয়ে রুনার উপর হামলা চালায়। ছুরি দিয়ে বার বার আঘাত করে। এ সময় রুনা বাঁচার আকুতি জানিয়েছিল। এক পর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন, হত্যাকারী জানান ।

সংবাদ মাধ্যমের খবরে উল্লেখ করা হয়, দিনের আলোতে চোখের সামনে রাস্তার মাঝখানে রুনাকে ছুরিকাঘাতের ঘটনাটি দেখে আশপাশের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাদের কয়েকজন দ্রুত পুলিশকে খবর দেন। এ সময় ঘাতক দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে পালিয়ে যায়।

পুলিশ এসে রুনা আক্তারকে আশংকাজনক অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে ইরিথ্রোস স্ট্যাভরোসে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচাতে পারেনি। চিকিৎসকরা জানান, শরীরজুড়ে ছুরির আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রুনার মৃত্যু হয়।

আরও পড়তে পারেন : নিউইয়র্কে পানিতে ডুবে প্রাণ হারালো বাংলাদেশি শ্যালক-ভগ্নিপতি

পুলিশ অপরাধীকে খুঁজে বের করার জন্য ব্যাপাক অভিযানে নামে। এ সময় রাস্তার একটি ডাস্টবিন থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটি খুঁজে পায় তারা। রুমার স্বামীর কাছ থেকে পুলিশ ঘাতক সহকর্মীর কথা জানতে পারে। প্রযুক্তির সাহায্যে মোবাইল ফোন ট্রাক করে থিরাস স্ট্রিটে কাছাকাছি একটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘাতককে আটক করে পুলিশ।

ঘটনার সময় রুনার স্বামী বাসায় থাকলেও বাইরের পরিস্থিতি সর্ম্পকে কিছুই জানতে পারেননি বলে পুলিশকে জবানবন্দী দেন। তিনি শুধু জানান,”কারো সাথে দেখা করার জন্য রুনা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!