দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রয়াত ইপিএস কর্মীর ব্যাংক ও বিমার টাকা আত্মসাৎ

দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতারণার মাধ্যমে প্রয়াত এক বাংলাদেশি ইপিএস কর্মীর বিমা ক্ষতিপূরণের অর্থ এবং ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার মামা অপর এক ইপিএস কর্মীর বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে মামার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে কোরিয়ান থানায়।

জানা গেছে, গত বছরের ২৫ জুন রাতে কোরিয়া প্রবাসে মারা যান বাংলাদেশি ইপিএস কর্মী মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি ব্রেইন স্ট্রোকে অক্রান্ত হয়ে হোয়াসংসির মাদুমিয়োং-এর একটি হাসপাতালের আইসিউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার দেশের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার সখিপুর উপজেলার কালিয়া গ্রামে।

অভিযোগ উঠেছে, মৃতের মামা আজিজুল হক দক্ষিণ কোরিয়ার বিমা কোম্পানিতে ভূয়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দাখিল করে ক্ষতিপূরণের অর্থ এবং কৌশলে ব্যাংকে সঞ্চিত অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। আজিজুল হকও দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত একজন ইপিএস কর্মী। তিনি মরহুম শহীদুল ইসলাম বিধবাকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে এই প্রতারণার আশ্রয় নেন বলে পরিবারের অভিযোগ।

Travelion – Mobile

আজিজুল হকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে লিখিত আবেদন করেন মরহুম শহীদুল ইসলামের বিধবা স্ত্রী নাজমিন আক্তার। তিনি অভিযােগ করেন যে, তার স্বামী মরহুম শহীদুল ইসলামের কোরিয়ান ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ১০,৫৯৯,০৫৫ কোরিয়ান ওন এবং কোরিয়ার সামসং বিমা কোম্পানি ৪,৬০২,৭৩০ (৪,০৯০,৮২০ + ৫১১,৯১০) কোরিয়ান ওন প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন মামা আজিজুল হক।

অভিযোগে বলা হয়, মৃত্যুর আগে শহীদুলের ব্যাংক একাউন্ট নম্বর ও ব্যাংকের গোপন নম্বর কৌশলে জেনে নিয়েছিলেন আজিজুল হক। আর মৃত্যুর পর শহীদের ব্যাংকের এটিএম কার্ডও হস্তগত করে প্রতারক আজিজ। অন্যদিকে আজিজুল হক মৃতের বিধবা স্ত্রী নাজমিন আক্তারের নাম ও ছবি ব্যবহার এবং স্বাক্ষর জাল করে এই মর্মে একটি আমমোক্তারনামা সামসং বিমা কোম্পানিতে উপস্থাপন করে যে, ক্ষতিপূরণের সমুদয় অর্থ মৃতের বাবাকে প্রদান করলে তার (নাজমিন আক্তারের) কোন আপত্তি নেই।

নিয়মানুযায়ী বিমা কোম্পানীতে উপস্থাপিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে সত্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এক্ষেত্রে তা করা হয়নি।

অন্যদিকে, ক্ষতিপূরণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের একটি তালিকা পাঠিয়ে মৃতের পরিবারের সাথে দূতাবাসের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু সেগুলো না পাঠিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকে পরিবার। পরবর্তীতে, বিমা কোম্পানীতে যোগাযোগ করে প্রকৃত ঘটনা জানা যায়।

বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিমা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিপূরণের বাকি অংশ পরিশোধ প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বলে নাজমিন আক্তারের পক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাস গত ২৮ ডিসেম্বর কোরিয়ার স্থানীয় থানায় আজিজুল হকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন আছে।

এ বিষয়ে আকাশযাত্রার সঙ্গে আলাপকালে নাজমিন আক্তার বাংলাদেশ দূতাবাস এবং কোরিয়ান পুলিশ প্রশাসনের কাছে আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধারসহ আজিজুল হকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আবেদন জানিয়েছেন। তিনি তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলামের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে সিউল দূতাবাসের একজন কূটনীতিক জানান, মৃত প্রবাসীর স্ত্রীর সই জাল করে টাকা উত্তোলন নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য কাজ এবং আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজিজুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছে আকাশযাত্রার। কিন্তু তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!