কলকাতা বিমানবন্দরে প্রতিবন্ধী দুই নারীকে এমন অপমান!

'এর অর্থ হচ্ছে আমাকে ট্রাউজার খুলতে বলা'

ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে দু’জন প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী নারীকে তল্লাশির নামে অবমাননা ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিবন্ধী নারীদের অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের একটি সেমিনারে যোগ দিতে তারা দিল্লি যাচ্ছিলেন।

রোববার (১৯ অক্টোবর), বেসরকারি বিমানসংস্থা গো-এয়ারের একটি ফ্লাইটে দিল্লি যাবার সময় নেতাজী সুভাষচন্দ্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই আচরণের ঘটনার শিকার হন প্রতিবন্ধী দুই অধিকারকর্মী। নিরাপত্তা কর্মীদের আচরণের প্রতিবাদ করার পর তাদের দু’জনকে যেতে দেয়া হয়, তবে তারা জানান, তারা ‘অপমান ও বিদ্রূপের’ শিকার হয়েছেন।

পোলিওর কারণে শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়া কুহু দাস জানান, তাকে বিমানবন্দরে চেকিংয়ের সময় তার ক্যালিপার বা কাঠের পা খুলে স্ক্যানার মেশিনে দিতে বলা হয়। তিনি বিমানবন্দরের একজন মহিলা নিরাপত্তাকর্মীকে বলেন, তার পক্ষে ট্রাউজার না খুলে ক্যালিপার খোলা সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও তাকে তা করতে বলা হয়। এটা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়- কারণ এর অর্থ হচ্ছে আমাকে ট্রাউজার খুলতে বলা।

Travelion – Mobile

কুহু বলেন, তিন বছর বয়সে তার পোলিও হয় এবং বহু বছর ধরেই তিনি টিটানিয়াম রড দিয়ে তৈরি ক্যালিপার ব্যবহার করছেন। এর আগে ভারতের বাইরে কোনো বিমানবন্দরে তাকে এমন অবস্থায় পড়তে হয়নি।

জিজা ঘোষ নামে অপর অধিকারকর্মী সেরেব্রাল পলসিতে আক্রান্ত। হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন। তাকে বলা হয় যে তিনি, একা বিমানে যেতে পারবেন না। জিজা একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী, যে নিজে নিজে পৃথিবীর নানা জায়গায় গেছে। সহযাত্রী জিজা অত্যন্ত অপমানিত বোধ করেছে বলে জানান কুহু।

ভারতীয় একটি সংবাদ মাধ্যমকে জিজা ঘোষ বলেছেন “বিমানবন্দরে আমি হুইলচেয়ারের জন্য অনুরোধ করেছিলাম, তবে এটি আসতে দেরি করে। আমি যখন বিমান সংস্থাটির (গোএয়ার) সাথে যোগাযোগ করি, সংশ্লিষ্ট কর্মী উত্তরে জানান যে তাদের কর্মী সংকট আছে এবং অবশেষে আমি চেক-ইন কাউন্টারে পৌঁছালে কর্মীরা বলে যে আমি একা ভ্রমণ করতে পারছি না।”

নিরাপত্তা কর্মীদের আচরণের প্রতিবাদ করার পর তাদের দু’জনকে যেতে দেয়া হয়, তবে তারা জানান, তারা ‘অপমান এবং বিদ্রূপের শিকার হয়েছেন’।

কুহু বলেন,আমরা একে বৈষম্যমূলক বলে প্রতিবাদ করার পর চেকইন কাউন্টারের লোকটি দুঃখপ্রকাশ করেন। কিন্তু আমি তার ওপর রাগ করছি না। একটি বিমানসংস্থা প্রতিবন্ধীদের সাথে কী আচরণ করছে সেটাই আসল ব্যাপার।

এ ঘটনার খবর ভারতের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর কলকাতা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক টুইটার বার্তায় দুঃখ প্রকাশ করে।

এই ঘটনার জবাবে বিমানবন্দরে দায়িত্বে নিয়োজিত ভারতের কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ) -এর একজন কর্মকর্তা বলেন, “ আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে এবং কুহু দাসকে তার ট্রাউজার খুলে ফেলার উপক্রম করা মহিলা অফিসারটির কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছি। আমাদের মহিলা অফিসার মিজ দাসকে তার পাকলিপারগুলি (কাঠের কৃত্রিম পা) দেখাতে বলেছিলেন, এটি স্ট্যান্ডার্ড চেকিং কার্যপ্রণালী। তাকে বিব্রত করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না”।

২০১৭ সালে, সিআইএসএফ বলেছিল যে প্রতিবন্ধী যাত্রীদের বিমানবন্দরে সুরক্ষা চেকের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ খুলতে করতে হবে না। এছাড়াও, এক্স-রেয়ের মাধ্যমে হুইলচেয়ারগুলি স্ক্রিন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কারণ এতে সমস্যা হয়। কিন্তু সে নির্দেশ দৃশ্যত বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীদের কাছে পৌঁছেনি।

গত মাসে দিল্লী ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিবন্ধী ভিরালি মোদীর সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছিল সিআইএসএফের কর্মীর বিরুদ্ধে। ১৩ বছর ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে হুইল চেয়ারে চলা ভাইরালি বলেছিলেন যে, সিআইএসএফ কর্মীরা তাকে হেনস্থা করেছিলেন। বলেছিলেন, “নাটক করবেন না, আপনাকে উঠে দাঁড়াতে হবে”।

২০১৬ সালে হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন এমন একজন প্রতিবন্ধী অধিকারকর্মী সিনেমা হলে জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় উঠে দাঁড়াতে পারেননি বলে তাকে আক্রমণ করা হয়।

ভারতে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি। কিন্তু দেশটিতে তাদের সহায়তার অবকাঠামো অত্যন্ত নগণ্য। অধিকারকর্মীরা বলেন, তারা প্রতিনিয়ত বিরূপ মনোভাব, বৈষম্য, ও হয়রানির শিকার হন, বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!