ওমানে দুইদিনে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে করোনা আক্রান্ত
ওমানে গত সপ্তাহে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমতে থাকলেও চলতি সপ্তাহের শেষে এসে তা হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করেছে।
গত দুই দিনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এই দুই দিনে যথাক্রমে ২৯৮ জন ও ৩২২ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে, যা এই পর্যন্ত একদিনের সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ওমানে করোনভাইরাস আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৪ হাজার ৩৪১ জনে দাঁড়িয়েছে। যার বেশিরভাগই রাজধানী মাসকাটে এবং আক্রান্তের মধ্যে অধিকাংশই প্রবাসী। বৃহস্পতিবার ঘোষিত ৩২২ জনের মধ্যে ২৪২ জনই প্রবাসী এবং বাকি ৮০ জন ওমানি।
এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৩ জন সুস্থ হয়ে ওঠেছেন এবং ১৮ জন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সবশেষ একজন প্রবাসীর করোনায় মৃত্যুের কথা ঘোষণা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
জিসিসসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ওমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকার পরও হঠাৎ করে রেকর্ড পরিমান বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মধ্যে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে যে, সরকারের স্বাস্থ্য বিধি আর প্রতিরোধের পদক্ষেপগুলো কিছু কিছু জায়গায় উপেক্ষা করা হচ্ছে কিনা। ধারণা করা হচ্ছে কঠোর নির্দেশনার পরও কিছু ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যাতয় হওয়ায় এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। তেমন ইংগিত পাওয়া গেছে দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী কথায়।
এ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওমানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. আহমেদ আল সাইয়েদি বলেন,“এমন পরিস্থিতির জন্য পর্দার পেছনের ঘটনায় মূলত দায়ী। কিছু প্রতিষ্ঠান ও পৃষ্ঠপোষকদের গাফিলতির কারণেই আমাদের আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এক্ষেত্রে দেখা গেছে একজন করোনা আক্রান্তের সাথে ৭০ জন প্রবাসী বসবাস করলেও কোম্পানি কোন দায়িত্বশীল আচরণ করছে না। এসব আবাসনে কোম্পানিগুলোর কর্মীদের সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিতের কথা থাকলেও তার কোন ধার ধরা হচ্ছেনা।”
এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে নতুন করে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “যেসব কর্মী ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছে তাদের দ্রুত আলাদা করে ফেলা এবং যারা তার সংস্পর্শে এসেছে তাদেরও কোয়ারেন্টিইনে পাঠানোর জন্য নিয়োগকারিদের বলা হয়েছে।”
ট্রাক-ভ্যান চালক ও কার্গো অপারেটরদের মধ্যে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। তাছাড়া গতকাল একাধিক আক্রান্ত পাওয়া গেছে পণ্য ডেলিভারি টিম থেকে। যদিও দেশটির করোনা বিশেষজ্ঞরা দাবী করছেন, বাণিজ্যিক কাজকর্ম পুনরায় চালু করার সাথে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কোন সম্পর্ক খুঁজে পাননি।
এ কথার সাথে একমত পোষণ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন “মূলত ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কারণে আক্রান্ত বাড়ছে না বরং বিভিন্ন স্থানে জনসমাগম বাড়ার কারণে এমন হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে এখনো আমরা গণ ইফতারের সংবাদ পাচ্ছি যা সত্যিই দুঃখজনক”
তিনি জানান, আমরা এমনও শুনেছি যে একজন তার মা-স্ত্রীসহ মোট ১৭ জনকে করোনা আক্রান্ত করেছে। এছাড়া আমাদের কাছে ১৮ বছর বয়সী এক তরুণী এসেছিল যে কিনা এমন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছে যেখানে ৩০০ লোকের জমায়েত হয়েছে। এমন অনেক ঘটনায় মূলত ওমানে করোনা পরিস্থিতিকে খারাপের দিকে নিয়েছে বলে অভিমত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরওজানান, বর্তমানে প্রতিদিন দেশটিতে ১৫০০ থেকে ২০০০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত মোট পরীক্ষার হয়েছে সংখ্যা ৬১ হাজার জনের। বর্তমানে হাসপতালে ভর্তি রোগী ৯৬ জন, যার মধ্যে ৩১ জন আছে আইসিইউতে।
গত দুই দিনে উল্লেখযোগ্য হারে রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার আরো কঠোর ও কার্যকরভাবে সমস্যা সমাধান করতে চাইছে বলে জানান তিনি । এ জন্য কারফিউ দেয়া হোক বা না হোক সকল জনগণ যাতে সামাজিক দুরত্ব মেনে চলে আর জমায়েত এড়িয়ে চলে তা নিশ্চিত করায় সরকারের সামনের লক্ষ্ উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।