ইরান থেকে ফিরতে ৩৫০ কাশ্মীরি শিক্ষার্থীর আকুতি

ভারত সরকার যেহেতু করোনাভাইরাস (কোভিড -১৯) ক্ষতিগ্রস্থ দেশ থেকে তাদের নাগরিকদের বিমান পরিবহণ অব্যাহত রেখেছে, তেমনি ইরানে আটকা পড়ে থাকা প্রায় ৩৫০ জন কাশ্মীরি শিক্ষার্থী সরিয়ে নেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

ডিকেন হেরাল্ডের (ডিএইচ) প্রতিবেদনে বলা হয়, এই শিক্ষার্থীরা বার্ষিক ছুটিতে কাশ্মীরে যাওয়ার কথা ছিল, তবে তেহরান থেকে বিমান সংস্থাগুলি ফ্লাইট বাতিল করার পরে ইরানে আটকা পড়েছিল, যেখানে করোনার প্রাদুর্ভাবের ফলে প্রায় তিন ডজন লোক মারা গেছে।

চীনের পরেই করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনকভাবে থাবা বসিয়েছে এই ইরানেই। দেশটিতে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪৩। আক্রান্ত প্রায় ছ’শো। মারণ অসুখে আক্রান্ত সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট, উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। মারা গেছেন একজন সংসদ সদস্য সংক্রমণের আশঙ্কায় বাতিল হয়ে গেছে একাধিক উড়ান।

Travelion – Mobile

এমন পরিস্থিতে ইরানে আটকে পড়েছেন মেডিক্যাল কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনারত প্রায় ৩৫০ জন কাশ্মীরি শিক্ষার্থী। দেশে ফিরতে উদগ্রীব এসব শিক্ষার্থী আশঙ্কা সঙ্গের অপেক্ষা করতে হচ্ছে নিয়ে বিমানবন্দরেই ।

তাই তারা করোনাভাইরাস বিধ্বস্ত চীনের উহানের মতো উদ্ধার ফ্লাইটের ব্যবস্থার করুণ আকুতি জানিয়েছেন ভারত সরকারের কাছে।

তেহরান মেডিক্যাল কলেজের কাশ্মীরি ছাত্র উম পারভেজ বলেন, “২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে চেষ্টা করছি দেশে ফেরার। কিন্তু উড়ান বাতিল, বন্ধ বিমানবন্দর। তাই বাইরেই অপেক্ষা করছি। জানি না কবে, কীভাবে বাড়ি ফিরব। দয়া করে আমাদের জন্য কিছু করুন। অন্তত একটা ফ্লাইটের বন্দোবস্ত করুন, যাতে আমরা ফিরতে পারি।”

মৃত্যুর খবর বাড়াতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর পরিবারের উদ্বেগ বাড়ছে। ইরান থেকে সরিয়ে নিতে বাবা-মাকেও প্রতিদিনই আকুতি জানাচ্ছে শিক্ষার্থী।

“আমার ছেলে, যে ইরানে এমবিবিএস করছে, সে ফিরে আসতে মরিয়া, তবে এয়ারলাইন্সগুলি তেহরানের তাদের বিমান চলাচল বাতিল করায় তার বিকল্প নেই। সরকারের পক্ষ থেকে কেউই আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি বলে আমরা অসহায় ও নিরাশ বোধ করি”, বলেছেন আটকা পড়া এক শিক্ষার্থীর বাবা।

কাশ্মীরের অপর একজন অভিভাবক বলেন “আমি একটি ব্যাংকে চাকরী করছি, আমি গত পাঁচ দিন ধরে আমার ডিউটিতে যোগ দিতে যাচ্ছি না। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। সরকারকে অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করা উচিত যেন উহানের মতো ইরান থেকেও ওদের ফেরানোর ব্যবস্থা করে।”

অভিভাবক শাগুফাতা বলেছেন, তার দুই মেয়ে, উভয় মেডিকেল শিক্ষার্থী, তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কক্ষে আটকে আছে। “আমি আমার মেয়েদের সাথে কথা বলেছি। তারা খুব ভয় পেয়ে গেছে, আতঙ্কিত হয়েছে। দয়া করে তাদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের সহায়তা করুন,” তিনি বলেছিলেন।

শিক্ষার্থী ছাড়াও, ইরানে তীর্থযাত্রায় গেছেন আটকা পড়েছেন কাশ্মীর ও লাদাখের কয়েকশো মানুষ, যারা ফিরে আসার জন্য লড়াই করছেন।

প্রতি বছর কাশ্মীরের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং তীর্থযাত্রীরা ইরান যান। তাদের মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে ফিরে আসে। তবে একজন স্বাস্থ্যকর্মকর্তার মতে, এদের মধ্যে কাশ্মীরে করোনাভাইরাস হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করে এমন কাউকে পাওয়া যায়নি ।

বাণিজ্যিক উড়ানের জন্য তেহরান বিমানবন্দর বন্ধ করায় অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাদের একমাত্র আশা হ’ল কেন্দ্রীয় সরকার তাদের সন্তানদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা।

জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ডিএইচকে বলেছেন যে, তারা ইরানে আটকা পড়া কাশ্মীরি শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সাথে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ রাখছে। তিনি বলেন, “আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে তারা শিগগিরই তাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আহ্বান জানাবেন।”

ইরানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত গদ্দাম ধর্মেন্দ্র জানিয়েছেন, আটকে পড়া বাসিন্দাদের ভারতে ফিরিয়ে দিতে তাঁরা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ইরানের অবস্থা ক্রমেই বিপজ্জনক হচ্ছে। এই অবস্থায় ভারতীয়দের জন্য তাঁরাও চিন্তিত।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!