ইতালিতে করোনায় মৃত্যু ১০৭, এক বাংলাদেশিসহ আক্রান্ত ৩০৮৯ জন

বুধবার রাতে ইতালি থেকে পাওয়া সবশেষ খবর অনুসারে, দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন মোট ১০৭ জন। আর আক্রান্ত হয়েছেন হয়েছে ৩,০৮৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও রয়েছেন।

এই রোগের বিস্তার রোধে বৃহস্পতিবার থেকে কমপক্ষে ১৫ ই মার্চ পর্যন্ত স্কুল-কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সিভিল প্রোটেকশন এজেন্সি জানিয়েছে, গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে উচ্চ সংক্রামক ভাইরাসে ২৮ জন মারা যাওয়ার পরে ইতালিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৭।

Travelion – Mobile

দেশটিতে ১৩ দিন আগে এই প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,০৯৯ জনে।আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৩.৫ % মারা গিয়েছেন, এজেন্সিটির প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেলি জানিয়েছেন।

ইতালিতে এক বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেনঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

বুধবার মহাখালীতে আইইডিসিআরের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘ইতালিতে আমাদের দেশের এক নাগরিকের করোনাভাইরাসে আক্রান্তের তথ্য আমরা নিশ্চিত হয়েছি। আক্রান্ত ব্যক্তিকে তাঁরই বাসায় কোয়ারেন্টাইনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে থাকা আমাদের দূতাবাস নিশ্চিত করেছে যে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে আক্রান্তের ধরন গুরুতর না, তাই তাঁকে তাঁর বাসাতেই রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

জানা গেছে করোনায় আক্রান্ত ওই বাংলাদেশি মিলান শহরে বসবাস করেন। ইতালিতে প্রথম কোনো বাংলাদেশি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। দেশটিতে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি বসবাস করেন। মিলানের বাংলাদেশ কনসুলেট জেনারেল আগেই এক বিজ্ঞপ্তিতে উত্তর ইতালিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

লম্বার্ডির সমৃদ্ধ ও জনবহুল অঞ্চল, মিলানের আশেপাশে এবং ভেনেটো এবং এমিলিয়া রোমাগনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলিতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে, তবে পুরো ইতালীয় উপদ্বীপ এবং সিসিলির চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।

ইতালির রাজধানী রোমের স্প্যালানজানি ইনফেকশন রোগের হাসপাতালে করোনাভাইরাসের ২০ জন রোগী রয়েছেন, অন্যরা ইতালির রাজধানী ও বৃহত্তম শহরের বাড়িতে ও আশেপাশে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এমিলিয়া রোমগনার আঞ্চলিক সরকার বুধবার জানিয়েছে, তাদের মন্ত্রীসভার দুই সদস্য করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন এবং শিল্পমন্ত্রী স্টেফানো পাতুয়ানেলি একজন রোগীর সংস্পর্শে আসার পরে নিজ বাসার কোরায়ান্টাইনে রয়েছেন, যদিও পরীক্ষায় তার শরীরে ভাইরাস পাওয়া যায় নি।

এই প্রাদুর্ভাব উত্তরাঞ্চলের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করেছে, কিছু অঞ্চলে সিনেমা ও জাদুঘর বন্ধ হয়ে গেছে এবং ফ্যাশন শো এবং বাণিজ্য মেলা সহ অনেক অনুষ্ঠান বাতিল হয়েছে।

এদিকে ইতালির পেশাদার ফুটবল ম্যাচ এবং অন্যান্য বড় বড় ক্রীড়া অনুষ্ঠান ৩ এপ্রিল পর্যন্ত দর্শক-ভক্ত উপস্থিতি ছাড়া অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপে কন্টি। কন্টি তার ফেসবুক পেজে পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করে দর্শকদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ক্রীড়া ইভেন্টে জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে “সংক্রমণের আরও আশংখা রোধ করা সম্ভব হবে।”

এ ছাড়া তিনি ইতালীয়দের একে অপরের সঙ্গে হাত না মিলানো, আলিঙ্গন না করা এবং মানুষের সঙ্গে সরাসরি শারীরিক যোগাযোগ এড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৯০ হাজার ৮১৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। তাঁদের মধ্যে ১৩০ জন শেষ ২৪ ঘণ্টায় শুধু আক্রান্ত হয়েছেন। এই সময়ে শুধু চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে আরও ৩১। মোট ৭৩টি দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে।

চীন ছাড়া বাকি ৭২টি দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৭৯২ জন। তাঁদের মধ্যে চীনের বাইরে মোট মৃতের সংখ্যা ১৬৬। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!