ইতালিতে এক কোটি ৬০ লাখ মানুষ কোয়ারেন্টিনে!

করোনভাইরাসের প্রাদূর্ভাব রোধে

ইতালি সরকার করোনভাইরাসের প্রাদূর্ভাব রোধে কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ জনগোষ্টিকে লকডাইনের আওতায় আনছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লমবার্ডিসহ আরো ১৪ টা প্রদেশে অন্তত এক কোটি ৬০ লক্ষ মানুষকে বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

এই অবস্থা এপ্রিলের প্রথম দিক পর্যন্ত থাকবে। দেশটিতে নাটকীয়ভাবে করোনাভাইরাস বেড়ে যাওয়ায় ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, যাদুঘর এবং স্কি রিসোর্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।

Travelion – Mobile

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালি মারাত্মকভাবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। শনিবার এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। রবিবার সবশষ তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘন্টা কমপক্ষে ১৩৩ জন মারা যাওযার পর মোট মৃত্যুর সংখ্যা এখন ৩৬৬ জন।

নিশ্চিত আক্রান্তের সংখ্যা ৭,৩৭৫ জন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১,২৪৭ জন নতুন করে শনাক্ত হয়েছে।

বাণিজ্যিক কেন্দ্র মিলান এবং পর্যটকদের মূল আকর্ষণ কেন্দ্র ভেনিসে এই পদক্ষেপ এপ্রিলের তিন তারিখ পর্যন্ত চলবে।

ইতালিতে করোনাভাইরাসে
ইতালিতে করোনাভাইরাসে

লমবার্ডির পুরো উত্তর অঞ্চল যেখানে এক কোটি লোকের বাস, এবং ইতালির বাণিজ্যিক নগরী মিলান লক ডাউন বা বন্ধ রাখা হবে তবে জরুরি ভিত্তিতে কিছু করার প্রয়োজন হলে সেক্ষেত্রে নিয়মের ব্যত্যয় হতে পারে।

এছাড়া ১৪ টা প্রদেশের মধ্যে ভেনিস, পারমা এবং মোদেনা বন্ধ থাকবে যার ফলে এক কোটি ৬০ লক্ষ মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলবে।

প্রধানমন্ত্রী জিউসেপে কন্টি জানান, জরুরী অবস্থা বা স্বাস্থ্যে সুরক্ষার স্বার্থে নতুন পদক্ষেপের আওতায় প্রমাণসহ জরুরী পরিস্থিতি ছাড়া লমবার্ডিসহ ১৪ প্রদেশে কেউ প্রবেশ করতে বা বের হতে পারবে ন ।

আক্রান্ত বাকি প্রদেশগুলো হচ্ছে, মোদেনা, পারমা, পিয়াসেনজা, রেজ্জিও এমিলিয়া, রিমিনি, পেসারো এবং আরবিনো, আলেসান্দ্রিয়া, অ্যাসটি, নোভারা, ভারবানো কিউসিও ওসোলা, ভারসেই, পাদুয়া, ট্রেভিসো এবং ভেনিস।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা একটি জরুরি অবস্থা, একটি জাতীয় জরুরি অবস্থার মুখোমুখি হয়েছি, আমাদের ভাইরাসের বিস্তারকে সীমাবদ্ধ করতে হবে এবং আমাদের হাসপাতালগুলিকে উপচে পড়া ভিড় থেকে রোধ করতে হবে।”[

এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের মত মানুষ উত্তর ইতালিতে কোয়ারেন্টিনে রয়েছে।caption id=”attachment_22751″ align=”aligncenter” width=”700″]খাবারসহ নিত্যপ্রেয়াজনী জিনিপত্র সংগ্রহে রাখতে মলে শহরবাসীর ভিড় খাবারসহ নিত্যপ্রেয়াজনী জিনিপত্র সংগ্রহে রাখতে মলে শহরবাসীর ভিড়[/caption]
এই ধরনের ব্যাপক মাত্রায় কোয়ারেন্টিন করার পরিকল্পনা চীনও করেছিল। যে পদক্ষেপকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কাজে আসায় প্রশংসা করেছিল।

ইতালির প্রথম সারির রাজনীতিবিদ নিকোলা জিঙ্গারেত্তি বলেছেন, শনিবার তিনি টেস্ট করে দেখেছেন তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ইতালির মধ্য-বাম ডেমোক্রেটিক পার্টির এই নেতা ফেসবুকে লিখেছেন, “আমি ভালো আছি। কিন্তু কিছু দিন আমাকে বাড়িতে থাকতে হবে”।

ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলিতে যাতায়াতকারী কিছু পরিবহন রবিবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। মিলনের মালপেন্সা এবং লিনেট বিমানবন্দরগুলিতে ফ্লাইটগুলি আগমন অব্যাহত ছিল, যদিও কিছু নির্ধারিত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছিল।

ইতালির জাতীয় বিমানসংস্থা অ্যালিটালিয়া জানিয়েছে যে, সোমবার থেকে মালপেন্সার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত করা হবে এবং কেবলমাত্র লিনেট অভ্যন্তরীণ রুটেই চলাচল করবে। রাজধানী রোমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলি অবিরত থাকবে।

যে সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে
বিয়ের অনুষ্ঠান ও শেষকৃত্যসহ ধর্মীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান স্থগিত।
সিনেমা, নাইট-ক্লাব, ব্যায়ামাগার, সুইমিংপুল, যাদুঘর এবং স্কি রিসোর্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।
রেস্তোরাঁ এবং ক্যাফে খোলা থাকতে পারে কিন্তু সেক্ষেত্রে ক্রেতাদেরকে অবশ্যই এক মিটার দূরত্ব রেখে বসতে হবে।
মানুষজনদের বলা হবে যাতে করে তারা যতটা পারে ততটা ঘরে থাকে।
যদি কেউ কোয়ারেন্টিন ভঙ্গ করে তাহলে তাকে তিন মাস জেলে কাটাতে হবে।
সব ধরণের খেলাধুলার আসর বন্ধ থাকবে। ইটালির ফুটবল প্লেয়ার ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সব ম্যাচ পিছিয়ে দেয়ার আহ্বান করেছেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতালিকে পরামর্শ দিয়েছে যাতে করে দেশটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধে কঠিন নিয়ন্ত্রণ নেয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!