অ্যামস্টারডামে বিমান হাইজ্যাক নিয়ে যা ঘটল
স্থানীয় সময় বুধবার (৬ নভম্বের) বিকেলে নেদারল্যান্ডসের রাজধানী অ্যামস্টারডামে শিফোল বিমানবন্দরে বিমান ‘হাইজ্যাক’ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে যায় ।
শিফোল নেদারল্যান্ডসের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। যাত্রীর পরিমাণের দিক থেকে এটি ইউরোপের তৃতীয়-ব্যস্ততম বিমানবন্দর এবং বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ইউরোপের সবচেয়ে ব্যস্ততম বিমানবন্দর।
বিমানবন্দর থেকে উডডয়নের সময় একটি ফ্লাইট থেকে ‘হাইজ্যাক সংকেত’ আসার পরই আতংক, উৎকন্ঠা আর রুদ্ধাশ্বাসের লম্বা সময় পার করতে হয় সরকার, প্রশাসন, নিরাপত্তাবাহিনী, এভিয়েশন কর্মী আর হাজার হাজার যাত্রীকে।
ইসি-এলকিউপি হিসাবে নিবন্ধিত উড়োজাহাজটি এয়ার ইউরোপার একটি এয়ারবাস এ ৩৩০-২০০ ছিল। ইউএক্স ১০৯৪ ফ্লাইট হিসাবে আমস্টারডাম থেকে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদ রওনা হচ্ছিল।
এয়ার ইউরোপা (ইউএক্স) স্পেনের তৃতীয় বৃহত্তম বিমানসংস্থা। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই স্প্যানিশ বিমানসংস্থাটি ৫২টি উড়ােজাহাজের বহর নিয়ে ইউরোপসহ বিশ্বের ৪৫টি গন্তব্যে উড়ছে।
উড্ডয়নের জন্য টারমাক থেকে রানওয়ে যাওয়ার ঠিক আগেই ঘটে ঘটনা। ককপিট থেকে এয়ার ট্রাফিক কর্ট্রোলে (এটিসি) স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসে ‘বিমান হাইজ্যাক’ সংকেত। এটিসি দ্রুত পাঠায় বিমানবন্দরে নিরাপত্তার দায়িদ্ব থাকা ডাচ রয়্যাল মিলিটারি পুলিশকে। শুরু হয় ‘হাইজ্যাক’ থেকে বিমান, যাত্রী ও ক্রু উদ্ধারের মহা তৎপরতা।
এরপরই বিমানবন্দরটিতে জারি করা হয় সবোর্চ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা। বন্ধ করে দেয়া হয় বিমান ওঠানামা। নিরাপত্তা বলয়ে আনা হয় রানওয়ে, টারমাক ও টার্মিনালসহ পুরো এলাকা এবং নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয় অন্য যাত্রীদের। বন্ধ করে দেয়া হয় সকল যাতায়াত পথ। প্রস্তুত করা হয় হেলিকপ্টারসহ জরুরী সকল পরিষেবা। কমান্ডো অভিযানের প্রস্তুতি নেয় ডাচ রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ।
পরিস্থিতি নিয়ে মুহুর্তেই খবরের শিরোনাম হয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়-‘উড়োজাহাজে “সন্দেহজনক পরিস্থিতি”। সবোর্চ্চ সর্তকতা জারি আমস্টারডাম শিফোল বিমানবন্দরে’।
বিমানবন্দরই শুধু নয় রেল স্টেশনসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও নিরাপত্তার চাদরে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। মিডিয়ার বদৌলতে লেদারল্যান্ডস ছাড়া বিশ্বব্যাপী মানুষ বিশেষ করে ঔ মুর্হুতে ব্যস্ত এই বিমানবন্দর ব্যবহারীদের পরিবারের উৎকন্ঠার প্রহর কাটে বেশ কিছু সময়।
বিমান হাইজ্যাক ঘটনার খবরে ‘আতঙ্কিত’ যাত্রীদের চিৎকার আর ‘সশস্ত্র পুলিশ’ বাহিনীর দৌড়াঝাপে এসময় বিমানবন্দরে সৃষ্টি হয় বিশৃংখল ও অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। যাত্রীদের নিরাপত্তা বলয়ে আটকে রাখে পুলিশ।
এরপর ‘হাইজ্যাকার’মোকাবেলায় পূর্ন শক্তি নিয়ে ডাচ রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ অভিযান চালায় বিমানবন্দরের টারমাকে থাকা উড়োজাহাজটিতে। বেশি সময় লাগে নি। সফল অভিযান। নিরাপদে বের করে আনা হয় সকল যাত্রীকে।
আবারও মুহুর্তেই বিশ্বের নামী-দামি অনেকগুলো মিডিয়ার খবর,’নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শিফোল বিমানবন্দরে একটি উড়োজাহাজ হাইজ্যাক করার চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে ডাচ রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ। ফ্লাইটে থাকা যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে একজন সন্দেহভাজনকে’।
এরপর ডাচ রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ অভিযানের বর্ণনা দিতে যা জানালেন তাতে সবাই হতবাক, স্তম্ভিত । তারা জানালেন, বিমান হাইজ্যাকের সংকেত বা বার্তাটি ভুল ছিল। পাইলট অসতর্কতায় সংকেত সক্রিয় হয়ে যায়। ভুলে সংকেত সুইচে চাপ দিয়ে ফেলেছিলেন পাইলট।
এরই মধ্যে এয়ার ইউরোপা কর্তৃপক্ষও টুইট বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়ে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। টুইটে কর্তৃপক্ষ বলে, ‘আজ বিকেলে আমস্টারডাম – মাদ্রিদ ফ্লাইটে ভুলক্রমে একটি সতর্কতা সক্রিয় হয়েছিল, যা বিমানটি হাইজ্যাকিংয়ের পড়ার দিকে ইশারা করে। এটি সম্পূর্ণ ‘মিথ্যা বিপদাশঙ্কা’ ছিল। কিছুই ঘটেনি, সমস্ত যাত্রী নিরাপদে এবং বিমানের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা গভীরভাবে ক্ষমা চাইছি।’