অবৈধ প্রবাসীদের দেশে ফেরানোর অগ্রগতিতে ইইউর সন্তুষ্টি

মাসুদ বিন মোমেন ও গুনার উইগান্ড

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বৈধভাবে থাকার সুযোগ হারিয়েছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে ইইউ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। অবৈধ প্রবাসীদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এই ধারা অব্যাহত রেখে এসওপি অনুযায়ী বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানিয়েছে ইইউ।

ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইইউর কূটনৈতিক সংলাপে দুই পক্ষ ভারত–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইইউর সহযোগিতার নতুন কৌশলকে বিবেচনায় নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, ডিজিটালাইজেশন, সংযুক্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।

Travelion – Mobile

ঙ্গলবার ব্রাসেলসে দুই পক্ষের চতুর্থ কূটনৈতিক সংলাপ শেষে প্রচারিত যৌথ বিবৃতিতে এসব তথ্য জানানো হয়। কূটনৈতিক সংলাপে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের এবং ইইউর এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুনার উইগান্ড ইইউর নেতৃত্ব দেন।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইইউ তাদের নতুন সহযোগিতার কৌশল বাংলাদেশের কাছে উপস্থাপন করেছে। দুই পক্ষ মিয়ানমার, আফগানিস্তান, সামুদ্রিক নিরাপত্তাসহ এই অঞ্চলের রাজনৈতিক-নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছে।

ওই কৌশলকে বিবেচনায় নিয়ে ডিজিটালাইজেশন, সংযুক্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুই পক্ষ সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৌশলগত দিকনির্দেশনা এবং পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তাবিষয়ক নীতিমালায় সহযোগিতা জোরদারের জন্য নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক আলোচনা শুরু করা যায় কি না, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

ইইউর চলমান ভিসা কোডের ‘২৫ এ’ ধারা অনুযায়ী ইউরোপের দেশগুলোতে অনিয়মিত হয়ে পড়া বিদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর আলোকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বৈধভাবে থাকার সুযোগ হারিয়েছেন, এসওপি অনুযায়ী তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতিকে ইইউ স্বাগত জানিয়েছে।

এ ক্ষেত্রে পুরোনো যেসব তালিকার সুরাহা হয়নি, সেগুলো মীমাংসার পাশাপাশি এসওপি অনুযায়ী বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি পূরণে ইইউ আহ্বান জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশের দক্ষ ও আধা দক্ষ নাগরিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে বৈধ অভিবাসনের সুযোগ বাড়াতে ইইউর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এবং ইইউর অভিন্ন মূল্যবোধের অন্যতম হলো গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। এ প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু ধারার অপপ্রয়োগ নিয়ে ইইউ বৈঠকে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষ করে ডিজিটাল অপরাধ রোধ করার কথা থাকলেও এর কিছু ধারা ঝুঁকি তৈরি করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় চলমান কিছু মামলার বিষয়ে বাংলাদেশের কাছে ইইউ জানতে চেয়েছে।

ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল, তা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশকে উৎসাহিত করেছে ইইউ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ হালনাগাদ কিছু তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি নিজের অবস্থান ইইউকে জানিয়েছে।

কোভিড-১৯-পরবর্তী পরিস্থিতি উত্তরণে গণতান্ত্রিক সুশাসন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে দুই পক্ষ একমত পোষণ করেছে। বাংলাদেশ ও ইইউ যেকোনো জায়গায় যেকোনো ধরনের ধর্মীয় ও জাতিগত সহিংসতা-বৈষম্যের নিন্দা জানিয়েছে।

অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য–সুবিধা ইবিএ বা এভরিথিং বাট আর্মসের (অস্ত্র ছাড়া সবকিছু) অব্যাহতভাবে সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে ইইউ। এ প্রেক্ষাপটে শ্রম খাতে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তা প্রকাশের জন্য বাংলাদেশকে স্বাগত জানানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই কর্মপরিকল্পনা সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে ইইউ।

নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব কারখানা প্রতিষ্ঠায় বিপুল বিনিয়োগের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ পণ্যের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা যে জরুরি, সে বিষয়ে ইইউ আবার জোর দিয়েছে।

চার বছরের বেশি সময় আগে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের প্রশংসা করেছে ইইউ। রোহিঙ্গা সংকটের পরপরই রাজনৈতিক ও মানবিক সহায়তার জন্য ইইউকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ।

দুই পক্ষই রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে জোর দিয়েছে। ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ও ইইউর মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হওয়াকে দুই পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে। বিপুল তরুণ জনগোষ্ঠীর বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে ইইউ রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, উন্নত জীবিকার পাশাপাশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিতে জোর দিয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!