ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগদানের প্রক্রিয়ায় তুরস্কের অনুমোদন

পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ফিনল্যান্ডের যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিয়েছে তুরস্কের পার্লামেন্ট। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের পক্ষ থেকে সবুজ সংকেত দেওয়ার সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় এই অনুমোদন দেওয়া হলো। এর ফলে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে ফিনল্যান্ডের সামনে বড় একটি বাধা কাটল।

গতকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের পার্লামেন্ট এই অনুমোদন দেয়। এই বিষয়ে তুরস্কের ক্ষমতাসীন দলের আইনপ্রণেতা আকিফ কাগাতে কিলিক বলেন, ‘আমরা ফিনল্যান্ডকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়েছে।’

গত বছরের ফ্রেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে ফিনল্যান্ড ও সুইডেন। মূলত নিরাপত্তা শঙ্কা থেকে দেশ দুটি এই উদ্যোগ নেয়। ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের এমন উদ্যোগে আপত্তি ছিল তুরস্কের।

Travelion – Mobile

এর আগে এরদোয়ান বলেছিলেন, ‘পুরো স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চল সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অতিথিশালা। এ পরিস্থিতিতে আমরা তাদের (ফিনল্যান্ড ও সুইডেন) ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা সমর্থন করতে পারি না।’

নানা দেনদরবারের পর ফিনল্যান্ডের বিষয়ে নিজের অবস্থান বদলান এরদোয়ান। সপ্তাহ দুয়েক আগে তিনি বলেন, দেশটির ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়ায় সমর্থন দেবে তুরস্ক। এ বিষয়ে এরদোয়ানকে রাজি করাতে চলতি মাসে ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাউলি নিনিসতো আঙ্কারা সফর করেন।

আর ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ টুইটে বলেছেন, তুরস্কের অনুমোদনের ফলে ন্যাটো পরিবার আরও নিরাপদ ও শক্তিশালী হবে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, তুরস্কসহ ৩০টি দেশ ন্যাটোর সদস্য। জোটের নিয়ম অনুযায়ী, নতুন সদস্য যুক্ত করতে হলে সব সদস্যদেশের সমর্থন প্রয়োজন হয়। বিশ্লেষকেরা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য রাজি থাকলেও তুরস্কের বাধার কারণে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যেতে পারে।

এখন তুরস্কের পক্ষ থেকে অনুমোদন পাওয়ায় ফিনল্যান্ডের ন্যাটোভুক্ত হওয়ার পথ খুলে গেল। অন্যদিকে সুইডেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়ার বিষয়টি আপাতত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের ১ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। ৫৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে নিয়োগপ্রাপ্ত সেনার সংখ্যা মাত্র ১৩ হাজার। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে দুটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অভিজ্ঞতা রয়েছে ফিনল্যান্ডের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চলা এসব লড়াইয়ে দেশটি অনেক ভূমি হারিয়েছে।

এসব তিক্ত অভিজ্ঞতা ভোলেনি ফিনল্যান্ডের মানুষ। তাই সোভিয়েত উত্তরসূরি রাশিয়া তাদের দেশে হামলা চালাতে পারে, এ আশঙ্কায় ভুগছে ফিনল্যান্ডের বেশির ভাগ মানুষ। এ জন্য দীর্ঘদিনের নিরপেক্ষতার নীতি ত্যাগ করে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে সম্মতি দেয় তারা।

তবে ফিনল্যান্ডের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার উদ্যোগে নাখোশ রাশিয়া। গত বছরের মে মাসে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছিলেন, ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তার ওপর কোন হুমকি নেই। এরপরও ন্যাটোয় যোগ দিলে দেশটি বড় ভুল করবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!