চীনে করোনা-রোগীর চিকিৎসা এখন রোবট-ডাক্তারদের হাতে!
৫-জি পাওয়ারের রোবট। এ টু জেড সব কাজ করতে পারে। ডাক্তারি তো বটেই। হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষী থেকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও তাদের। যান্ত্রিক হাত বাড়িয়ে রোগীদের নির্দ্ধিতায় ছুঁচ্ছে এই রোবটরা।
শরীরের তাপমাত্রা মাপছে, ওষুদও দিচ্ছে। সময় হলেই খাবারের থালা সাজিয়ে রোগীদের সামনে হাজির করছে ডাক্তার-রোবটরা। রোগীদের জামাকাপড় কাচা, তাদের পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও এদেরই ওপরে।
বিজ্ঞানীরা মতে, মানুষের থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ । এয়ার ড্রপলেটে বাহিত হয়েই একজনের থেকে অন্যজনের শরীরে দ্রুত সংক্রমণ হচ্ছে এই ভাইরাসের। আক্রান্ত রোগীদের ধারে কাছেও যাওয়াও তাই বিপজ্জনক। চিকিৎসা করতে গিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীরাও হচ্ছেন রোগী।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক নিউজ চ্যানেল সিএনএ-র প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনার সাঁড়াশি চাপ থেকে রেহাই পেতে তাই এই অভিনব উপায় বার করল উহানের স্বাস্থ্য দফতর এবং চীনা অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস। করোনারোগীদের চিকিৎসায় নামানো হল প্রশিক্ষণ দেওয়া রোবটের দল।
রোবটদের ডেটা সিস্টেমে কীভাবে রোগীদের আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে, সেখানে কী কী করণীয়, কেমন ভাবেই বা হবে চিকিৎসা, ক্রমণ কতটা হলে কী ওষুধ দিতে হবে সব কিছুই ভরে দেওয়া হয়েছে ।
ডাক্তার-রোবটের প্রজেক্ট প্রথম শুরু হয় চীনের উচাং হাসপাতালে। এখন করোনা-ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল রাজধানী উহানসহ হুবেই প্রদেশের প্রায় সব হাসপাতালেই এই রোবটদের আমদানি শুরু হয়ে গেছে। শনিবার থেকেই উহানের বিভিন্ন হাসপাতালে পুরোদমে কদমে কাজে নেমে পড়েছে ডাক্তার-রোবটরা।
চিকিৎসা শুধু নয়, আইসোলেশন ওয়ার্ডে রোগী-ডাক্তার-স্বাস্থ্যকর্মীদের দিনের পর দিন একঘেয়েমি কাটাতে হাল্কা নাচ-গানও করছে তারা। চীনের অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রোবট মানুষের মতোই কথা বলতে পারে। মুখের অভিব্যক্তিও আছে। রোগীরা ওষুধ না খেলে বকাঝকাও করছে।
ডাক্তাররা জানাচ্ছেন, হাসপাতালের ওয়ার্ড স্যানিটাইজ করার কাজও করছে এই রোবটরা। গত ৭ মার্চ সংক্রমণ সন্দেহে উহানে ২০০ জনকে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। ১০টি হাসপাতালে নতুন করে তৈরি হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড। তাছাড়া উহানের প্রায় প্রতিটি হাসপাতালেই ঠাসাঠাসি ভিড়। ফি দিন গাদা গাদা বর্জ্য জমা হচ্ছে যা হাসপাতালের কর্মী ও ডাক্তারদের জন্যও বিপজ্জনক।
এইসব আগে সাফাইয়ের দায়িত্ব ছিল হাসপাতাল কর্মীদের উপরেই। সেটা করতে গিয়েই অনেকে ভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছিলেন। উহানে এখনও পর্যন্ত হাজার দুয়েক ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা আক্রান্ত। চীর মূল ভূখণ্ডে করোনা সংক্রামিতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে চার হাজার। উহানেই আক্রান্ত প্রায় তিন হাজার।
অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের গবেষকরা বলছেন, আক্রান্ত রোগীদের কাছে যাওয়াটা প্রাণঘাতী। সারাদিনই রোগীদের সংস্পর্শে থাকতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্মীদের। সেক্ষেত্রে ঝুঁকি কমাতেই এই রোবটদের কাজে লাগানো হয়েছে। আর রোগীরাও এমন রোবট-বন্ধুদের পেয়ে নাকি বেশ খুশি। মন খারাপ হলেই নেচে দেখাচ্ছে রোবটরা। ওষুধও খাওয়াচ্ছে যত্ন করেই।