হামলা শিকার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কলকাতার পিজি হাসপাতালে ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের সাড়ে ১২ নম্বর কেবিনে আছেন তিনি। তাঁর বাঁ পায়ে প্লাস্টার করা হয়েছে। গতকাল নন্দীগ্রামে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে গিয়ে হামলার শিকার হন তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী মমতা। সফর সংক্ষিপ্ত করে তাঁকে কলকাতায় ফিরিয়ে এনে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পিজি হাসপাতালের চিকিৎসকরা মিডিয়াকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর পায়ের পাতা, গোড়ালি, ডান হাত, গলা ও ডান কাঁধে চোট লেগেছে। বুকে ব্যথা অনুভব করছেন এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার এমআরআই, এক্স-রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর সিটিস্ক্যান করার কথা রয়েছে। আপাতত ২৪ ঘণ্টার জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন তিনি। তার চিকিৎসায় গঠন করা হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের মেডিকেল বোর্ড।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়,পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রাম আসনে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে সন্ধ্যায় রেয়াপাড়ায় রানিচকের একটি মন্দির থেকে বেরিয়ে আসার সময় ভিড়ের মধ্যে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয় । ঘটনার পরপরই দেহরক্ষীরা মাটিতে পড়ে যাওয়া মমতাকে টেনে তুলে গাড়িতে ওঠান। পরে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে গাড়িটি। মমতা অভিযোগ করেন, হামলার সময় পুলিশের কেউ ঘটনাস্থলে ছিল না। তাঁকে ইচ্ছাকৃত ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। এর পেছনে অবশ্যই ষড়যন্ত্র ছিল।

Travelion – Mobile

ইতিমধ্যে মমতার ওপর এই হামলার কারণে নির্বাচন কমিশন গতকালই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন তলব করেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় গতকাল রাতেই মমতাকে দেখতে হাসপাতালে ছুটে যান। এ সময় হাসপাতালের সামনে থাকা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা রাজ্যপালকে দেখে ‘ফিরে যাও’ ধ্বনি দেন।

এদিকে আজ দেয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর ‘আক্রমণ’ নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে ক্ষোভ উগরে দিল তৃণমূল। এদিন দলের নেতা ডেরেক ওব্রায়েন, পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যান কমিশনে। সেখান থেকে বেরিয়ে তাঁরা বলেন, “কমিশনকে বলা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর উপর হামলা হতে পারে এই পূর্বাভাস ছিলই। বিজেপির একাধিক নেতার পোস্টে সেই ইঙ্গিত মিলেছিল। তারপরেও মুখ্যমন্ত্রীকে নিরাপত্তাবিহীন অবস্থায় আক্রমোনের মধ্যে পড়তে হল। এর দায় কার?” তবে বিজেপির কোন নেতা কী পোস্ট করেছেন তা সাংবাদিকদের সামনে নির্দিষ্ট করেনি তৃণমূল।

মুখ্যমন্ত্রী মমতার আহত হওয়ার খবর নিয়ে ভারতে তোলপাড় শুরু হলেও এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। মুখ খোলেননি নন্দীগ্রামে এবারের নির্বাচনে মমতার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো তাঁর একসময়ের সতীর্থ ও বর্তমানে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীও। তবে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজ্য কংগ্রেস আর বিজেপি নেতারা।

মুখ্যমন্ত্রীর ওপর এ হামলাকে সহানুভূতি আদায়ের কৌশল বলে আখ্যায়িত করে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেন, ‘নিরাপত্তাবেষ্টনীতে থাকা একজন মুখ্যমন্ত্রীর ওপর এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে? গোটাটাই নির্বাচনী গিমিক। সহানুভূতি আদায়ের নাটক। আর যদি ঘটনাটি ঘটেই থাকে, তবে তাতে এ প্রশ্নই উঠবে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় নেমেছে? একজন মুখ্যমন্ত্রীর ওপর হামলা হলে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কী হবে?’ কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘এমন একজন ভিভিআইপি নেত্রীর নিরাপত্তায় গাফিলতি হয় কী করে? মমতার উচিত সিবিআই তদন্ত চাওয়া। আমরাও চাই, তদন্ত হোক।’

তবে মমতার ওপর এই হামলার প্রতিবাদ করেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা লালুপুত্র তেজস্বী যাদবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁরা অবিলম্বে এই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি ও মমতার দ্রুত আরোগ্য কামনা কামনা করেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!