সৌদিতে খুনের শিকার দুই বাংলাদেশি পরিবার পেল ৩০ কোটি টাকা ‘রক্তপণ’

সৌদি আরবে হত্যার শিকার দুটি বাংলাদেশি কর্মীর পরিবার খুনিদের কাছ থেকে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ পেল ।

বাংলাদেশিরা হলেন, ২০১৯ সালে রাজধানী রিয়াদে গৃহকর্ত্রীর হাতে খুন হওয়া গৃহকর্মী আবিরন বেগম এবং ২০০৬ সালে দাম্মাম শহরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীর নিহত সাগর পাটোয়ারী।

সৌদি আরবে কোনো বাংলাদেশির অনুকূলে এটাই সর্বোচ্চ ‘ব্লাডমানি’ বা ‘রক্তপণের’ বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ আদায় বলে জানিয়েছে দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস।

Travelion – Mobile

বুধবার রিয়াদের বাংলাদেশ দূতাবাসের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও মধ্যস্থতায় ওই দুই বাংলাদেশি পরিবারের অনুকূলে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করা হয়।

২০১৯ সালে রিয়াদে খুন হওয়া সৌদি পরিবারের গৃহকর্মী আবিরন বেগমের পরিবারের জন্য পাঠানো হয়েছে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি) । ২০০৬ সালে নিহত সাগর পাটোয়ারীর পরিবার পাবে ৫১ লাখ সৌদি রিয়াল (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি) ।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আবিরন এবং সাগর হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়াও তুলে ধরা হয়েছে।

আবিরন হত্যা
খুলনার পাইকগাছার গৃহকর্মী আবিরন বেগম ২০১৯ সালে ২৪ মার্চ রাজধানী রিয়াদের আজিজিয়ায় নিয়োগকর্তার বাসভবনে গৃহকর্ত্রী আয়েশা আহমাদ সগির আল জিজানির হাতে খুন হন । এ ঘটনায় পুলিশ সৌদি গৃহকর্তা বাসেম সালেম সগির, গৃহকর্ত্রী আয়েশা আল জিজানী, এবং তাদের ছেলে ওয়ালিদ বাসেম সালেমকে গ্রেপ্তার করে।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আদালত আয়েশাকে গৃহকর্ত্রী মৃত্যুদণ্ড বা কিসাস (জীবনের বিনিময়ে জীবন) এবং অন্যান্য আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে করাদণ্ড ও ৫০ হাজার রিয়াল জরিমানার আদেশ দেয়। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলেও আদালত গৃহকর্ত্রী আয়েশার মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখে।

আসামির পরিবার ও সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে তখন আবিরনের পরিবারের কছে ‘রক্তপণের’ বিনিময়ে আসামিকে ক্ষমা করার অনুরোধ জানানো হয়। তার নিহতের পরিবার তখন ‘সর্বোচ্চ’ ক্ষতিপূরণের বিনিময়ে রাজি হয়।

সৌদি আরবে সর্বনিম্ন রক্তপণ ৩ লাখ রিয়াল। তবে নিহতের পরিবার ৪৮ লাখ ৮০ হাজার রিয়াল পরিশোধের বিনিময়ে ক্ষমা করতে রাজি হয়।

কিন্তু অভিযুক্তের পরিবার আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রক্তপণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হয়। এরপর রিয়াদের ডেপুটি গভর্নর নাবিল বিন আব্দুল্লাহ আল-তাওয়ীলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ক্ষতিপূরণ আদায়ে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও হস্তক্ষেপ কামনা করেন বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর ।

চলতি বছরের ১৫ মে আবিরণ বেগমের ওয়ারিশদের নামে ৪৮ লাখ ৮০ হাজার রিয়াল ক্ষতিপূরণের চেক ইস্যু করা হয়। এরপর সৌদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন পর তা দূতাবাসের একাউন্টে জমা হয়।

সাগর হত্যা
২০০৬ সালে ২৭ জুন অজ্ঞাত বন্দুকধারীর গুলিতে দাম্মাম শহরে নিহত হন কুমিল্লা জেলার বরুড়া থানার সাগর পাটোয়ারী। দীর্ঘ সময় আততায়ীকে শনাক্ত করতে না পারায় যথাসময়ে মামলাটির অগ্রগতি হয়নি।

২০১৮ সালের অগাস্টে দূতাবাসের শ্রমকল্যাণ উইং প্রতিনিধি দাম্মাম দক্ষিণ থানায় পরিদর্শনকালে জানতে পারে, সেখানে একটি চুরির মামলায় সৌদি নাগরিক উমর আল শাম্মেরি আটক আছেন, যিনি সাগর হত্যায় সন্দেহভাজন ছিলেন।

থানা থেকে জানানো হয়, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ উমরকে বিবাদী করে মামলা করলে এই বিষয়ে পুনঃতদন্ত করা হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সাগরের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দূতাবাস।

সামাজিক মাধ্যম এবং অজ্ঞাত বিভিন্ন লোকের সহযোগিতায় সাগরের পরিবারের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে বাংলাদেশ দূতাবাস। এরপর পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রতিনিধি আদালতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান।

২০২১ সালের ২৪ মার্চ উমর আল শাম্মেরিকে শিরশ্ছেদের রায় আসে। এরপর তার বাবা অর্থের বিনিময়ে মৃত্যুদণ্ডের দাবি প্রত্যাহারে আপোস প্রস্তাব করেন।

তখন রাষ্ট্রদূতের মধ্যস্থতায় ৫১ লাখ রিয়ালে তাতে সম্মতি দেয় সাগরের পরিবার।

গত ৬ ডিসেম্বর দাম্মামের সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকের ফয়সলিয়া শাখা থেকে দূতাবাসের ব্যাংক হিসাবে এই অর্থ জমা হয়।

সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!