লেবাননের বেসরকারী হাসপাতালে রোগী নেওয়া বন্ধ

আদালতের "অন্যায্য" রায়ের প্রতিবাদ

লেবাননের বেসরকারী হাসপাতালগুলি রোগী নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু জরুরী পরিস্থিতিতে যা প্রয়োজন তা খোলা থাকবে …কেমোথেরাপি বা ডায়ালাইসিস রোগী এবং অস্ত্রোপচার বন্ধ করা হবে না। সোমবার থেকে ১৫ মে শনিবার পর্যন্ত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুত মেডিকেল সেন্টার, হোটেল ডিয়েউ হাসপাতাল এবং নটর-ডেম ডেস সিকোর্স হাসপাতালসহ সকল হাসপাতাল রোগীদের ভর্তি করবে না।

২০১৫ সালে কিশোরী এলা ট্যানোসের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হারানো জন্য দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে জারি করা “অন্যায্য” রায়টির প্রতিবাদ জানাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সোমবার বেসরকারি হাসপাতালের সিন্ডিকেটের প্রধান ডা. স্লেমন হারুন ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন। রোববার দুপুরে জারি করা বিবৃতি আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুত মেডিকেল সেন্টার (এইউএমবিসি) জানিয়েছে যে, “ডা. রানা চারা এবং এইউএমবিসি বিরুদ্ধে বৈরুত আদালতের আপিলের “নতুন অবিচারের কারণে” এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

গত সপ্তাহে, বৈরুতের আপিল আদালত ডা. ইসমাম মালাউফ এবং ডা. রানা চারা পাশাপাশি তাদের দুটি হাসপাতাল নটরডেম ডেস সিকোর্স হাসপাতাল এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অফ বৈরুত মেডিকেল সেন্টারকে (এইউএমবিসি) এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ করেছিলেন। বিচারক তারেক বিটার রায় দিয়েছেন যে, দুই চিকিৎসক ও দুই হাসপাতালকে অঙ্গ হারানো ইলা ট্যাননসকে ৯ বিলিয়ন লিরা ফি প্রদানের পাশাপাশি ন্যূনতম মজুরির চেয়ে চারগুণ মাসিক উপবৃত্তি প্রদান করার আদেশ দেন। এছাড়া তার বাবা হাসান এবং মা এলিয়ানা প্রত্যেককেই ৫০০ মিলিয়ন লিরা প্রদানেরও আদেশ দেওয়া হয়েছে।

Travelion – Mobile

১০ বছরের ইলা ট্যাননসের জীবন বাঁচাতে জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে তার পা ও পায় কেটে ফেলতে হয়েছিল। কিশোরটি “স্ট্রেপ্টোকোকাস” নামে অত্যন্ত বিরল ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের শিকার হয়েছিল। ফ্লু আক্রান্ত হওয়ায় প্রথমে নোট্রে-ডেম ডেস সিকোর্স হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাওলুফ চিকিৎসায় ছিলেন। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যায় নেওয়া হয় এবং ডা. চারা তত্বাবধানে দেখাশোনা করার জন্য আম্বকিতে স্থানান্তরিত করা হয়, যেখানে দেরীতে ডায়াগস্টিক করার কারণে তার চারটি অঙ্গ কেটে ফেলে দিতে হয়।

আদালতের রায় চিকিত্সা সম্প্রদায়ের মধ্যে শোক ও ক্ষোভদেখা দিয়েছে এবং শুক্রবার অর্ডার অব ফিজিশিয়ান্সের প্রধান ডা. শরাফ আবু শরাফ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটি বিবৃতি জারি করেছেন, “সিন্ডিকেট কাউন্সিল রায়ে ক্ষতিপূরণ ক্ষেত্রে বিস্ময় প্রকাশ করছে এবং দৃঢ় অস্বীকৃতি প্রকাশ করছে, যা লেবাননে বিদ্যমান অর্থনৈতিক মানগুলির সাথে সম্পূর্ণ অসঙ্গতিপূর্ণ।”

চিকিত্সক সম্প্রদায় দৃঢ়ভাবে সমর্থন জানিয়েছে যে, চিকিৎসকরা বিরল ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে কিশোরী ট্যানসেসের ’জীবন রক্ষা করতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। অধিকন্তু, আবু শরাফ লিখেছেন যে, কোনও ডাক্তার “পুরো জীবন পরিশ্রম করেও” দাবি করা ফি দিতে পারবেন না। যখন লেবাননে ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর থেকে তীব্র অর্থনৈতিক সঙ্কটে লিরা মূল্যের ৯০ শতাংশেরও বেশি দরপতন হয়েছে এবং স্বাস্থ্য খাতসহ আয়ের মূল্যকে মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

বেসরকারি হাসপাতালের সিন্ডিকেটের প্রধান ডা. স্লেমন হারুন হারুন বলেন যে, “লেবাননে এ জাতীয় শাস্তি কখনও দেওয়া হয়নি … এবং ভবিষ্যতে এটিকে নজির হিসাবে বিবেচনা করা হলে এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।” তিনি জানান চিকিত্সকরা আবারও এই রায়কে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবে এবং বিচারকের “অস্বীকৃতিজনক” আর্থিক জরিমানা রহিতের আবেদন জানাবে, তিনি জানান ।

তার মতে, এই রায়টি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য বিশেষত খারাপ সময়ে আসে। এটি উদ্বেগের বিষয়টিও জাগিয়ে তুলেছে যে, বিরল ও জটিল রোগের ক্ষেত্রে চিকিত্সা ঝুঁকি নিতে নারাজ হবে, ফৌজদারী অবহেলার অভিযোগের আশঙ্কায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!