মিশিগানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কনস্যুলেট সেবা বন্ধের নেপথ্যে….

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানে প্রবাসীদের সেবায় নেওয়া বাংলাদেশ দূতাবাসের ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা কার্যক্রম নির্ধারিত সময়ের একদিন আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি সেবাপ্রার্থী। যাদের অনেকেরই পাসপোর্ট নবায়নসহ প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র নবায়ন ও সংগ্রহ বিষয় জরুরী হয়ে পড়েছে।

হঠাৎ করে বন্ধের বিষয়ে ওয়াশিংটন দূতাবাস এখনও পর্যন্ত কোন আনুষ্ঠানিক ব্যাখা বা বিবৃতি দেয়নি। তবে দূতাবাসকে সতায়তা করা স্থানীয় আয়োজক কমিটির দাবি, কনস্যুলেট সেবা দিতে ওয়াশিংটন থেকে আসা দূতাবাসের একজন উধর্বতন কর্মকর্তা কয়েকজন প্রবাসীর হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার জেরে কনস্যুলেট ক্যাম্পের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ক্যাম্পের তৃতীয় দিন রাতে নদীর পাড়ে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশির হাতে হেনস্তা হন ওয়াশিংটন দূতাবাসের প্রথম সচিব (পাসপোর্ট অ্যান্ড ভিসা) মুহাম্মদ আব্দুল হাই মিল্টন। দূতাবাসের তত্বাধানে চার দিনব্যাপী ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার ক্যাম্পের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এই কর্মকর্তা।

Travelion – Mobile

তবে, দূতাবাস কর্মকর্তার হেনস্তার জেরেই ক্যাম্প কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে, তা মানতে রাজি নন সেবাপ্রত্যাশী ও প্রবাসী সংগঠকদের অনেকে। এর সঙ্গে ক্যাম্পের নানা বিশৃংখলা ও উত্তেজনা পরিস্থিতি, আয়োজকদের দ্বন্দ্বও অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন তারা।

স্থানীয় সময় শুক্রবার (১৯ আগস্ট) হ্যামট্রামিকের আমিন রিয়েলেটি অফিসে শুরু হয়েছিল দূতাবাসের ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলেট সেবা কার্যক্রম। প্রথম থেকেই ই-পাসপোর্ট, নো ভিসা রিকোয়ার্ড (এনভিআর), দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ (ডিএনসি), অ্যাটেস্টেশন অব ডকুমেন্ট/পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (পিওএ), বার্থ রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (বিআরসি) ইত্যাদি সেবা নিতে মিশিগানপ্রবাসীদের ভিড় করেন ক্যাম্পে। কিন্তু ৪র্থ দিন সোমবার সকালে সেবাপ্রার্থীরা ক্যাম্পে এসে দেখেন, বাইরের দরজায় তালা ঝুলছে। হতাশা, ক্ষোভ নিয়ে ফিরে যান শত শত প্রবাসী ।

মিশিগানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট  সেবা কার্যক্রমের আয়োজক কমিটির সংবাদ সম্মেলন । ছবি সংগৃহীত
মিশিগানে বাংলাদেশ দূতাবাসের ভ্রাম্যমান কনস্যুলেট সেবা কার্যক্রমের আয়োজক কমিটির সংবাদ সম্মেলন । ছবি সংগৃহীত

সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেলে কনস্যুলার ক্যাম্পের আয়োজকরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে হেনস্তার ঘটনা তুলে ধরেন এবং এর জেরে ক্যাম্প বন্ধের কথা জানান। হেনস্তা ঘটনার জন্য তারা প্রবাসী বাংলাদেশি সংগঠক সাকের উদ্দিন সাদেক, রায়হান আহমেদ, আকিকুল হক শামীম, মুশেদসহ কয়েকজনকে দায়ী করেন।

আয়োজকরা বলেন, রোববার রাতে ডেট্রুয়েট ডাউনটাউন নদীর পাড়ে ঘুরতে যান প্রথম সচিব মিল্টনসহ দূতাবাস কর্মকর্তারা। এ সময় সেখানে হাজির হয়ে ৭-৮ জনের বাংলাদেশি দলটি মিশিগানে স্থায়ী কনস্যুলেটের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করেন। নদীর পাড়ে স্মারকলিপি নিতে অপরাগতা জানিয়ে দূতাবাসের অফিসিয়াল ই-মেইলে পাঠানোর পরামর্শ দেন সচিব । এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন তারা। প্রথম সচিবকে গালিগালাজ করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করতে চড়াও হয়।

আরও পড়তে পারেন : রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের আশ্বাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেনের

সংবাদ সম্মেলনে আয়োজক কমিটিরসদস্যদের মধ্যে মিশিগান স্টেট আওয়ামী লীগ সভাপতি ফারুক আহমেদ, সেক্রেটারি আবু আহমেদ মুসা, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাবেদ চৌধুরী, সেক্রেটারি সুমন কবির, বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আবদুল আহাদ, সেক্রেটারি সৈয়দ মতিউর রহমান শিমু।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে দলের নেতৃত্বকারী শাকের উদ্দিন সাদেকের দাবি, তারা ভ্রাম্যমান ক্যাম্পের অব্যবস্থা ও বিশৃংখলা নিয়ে আয়োজক কমিটির সদস্যদের মাধ্যমে দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত নদীর পাড়ে দেখা পেলে সমস্যাগুলো নজরে এনে স্থায়ী কনস্যুলেটের জন্য স্মারকলিপি দিতে চেয়েছিলেন শুধু। প্রথম সচিবকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন,”প্রথম ৩ দিনে শারীরিক প্রতিবন্ধী, বয়স্ক পুরুষ-নারী, শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা দেওয়া হয়নি। এ বিষয় নিয়েই তাদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয় এবং ওই সময়েই আমরা দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসা কলে ফেলি।”

সরেজমিন দেখা যায়, প্রথম দিনের কার্যক্রম সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হলেও ২য় দিন শনিবার সেবাপ্রত্যাশীদের চাপের সঙ্গে বিশৃংখলা ও অব্যস্থাপনা দেখা যায়। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা হয় শত শত সেবাপ্রত্যাশীদের। এ সময় তাদের অনেকে লাইনের বাইরের থাকা অন্যদের সেচ্ছাসেবকরা নিয়মবহির্ভূত সেবা দিচ্ছে বলে অভিযোগও তুলেন। এ নিয়ে পক্ষাপাক্ষিত্ব ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ তুলে আয়োজক কমিটির সদস্যদের মধ্যেও হট্টগোল লেগে যায়। আয়োজকদের বেশিরভাগই মিশিগানে আওয়ামী লীগ ঘরনার নেতা ।

এক পর্যায়ে মিশিগান মহানগর যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি দল ক্যাম্পে ছুটে আসে এবং মহানগর আওয়ামীলীগ নেতারাও পক্ষ নেন। এ নিয়ে দুই গ্রুপের বাক বিতণ্ডা ও মুখোমুখি অবস্থানে ক্যাম্প জুড়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দেয়। পরিস্থিতি শান্ত করতে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়। পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পর ফের সেবা দেওয়ার কাজ শুরু হয় এবং বিকেল ৫টার জায়গায় সন্ধ্যা ৮টা ১০ মিনিট পর্যন্ত চলে।

আরও পড়তে পারেন : যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পেয়েছেন আইজিপি বেনজীর আহমেদ

তৃতীয় দিন রোববার ক্যাম্পের বিশৃংখলা মোটামুটি নিয়ন্ত্রিত থাকলেও রাতে নদীর পাড়ে দূতাবাস কর্মকর্তার হেনস্তার ঘটনাটি হয়।

সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বেশ কয়েকজন সেবাপ্রত্যাশী এবং সচেতন বাংলাদেশি সংগঠকের সঙ্গে কথা হয়। তাদের অনেকের মতে, ক্যাম্পের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি, দূতাবাস কর্মকর্তার হেনস্তা সব মিলিয়েই শেষ দিনের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

তারা বলছেন, সুদূর ওয়াংশিংটন থেকে এসে হাতে গোনা কয়েকজন প্রবাসীর খারাপ আচরণের জন্য সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে শত শত প্রবাসীকে ভোগান্তি ফেলবেন, এমনটি কখনও দূতাবাস কর্তৃপক্ষ চাইবেন না।

এ বিষয়ে জানতে প্রবাসী গণমাধ্যমকর্মীরা দূতাবাসের প্রথম সচিব (পাসপোর্ট ও ভিসা) আব্দুল হাই মিল্টনের সঙ্গে যোগাযোগর চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। মুঠোফোনে বিভিন্ন সময় কল দিলেও তিনি সাড়া দেননি।। সেল ফোনের ম্যাসেজেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

ওয়াশিংটন দূতাবাস সাধারণ প্রবাসীদের প্রয়োজন ও ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সুষ্ঠ সমাধানের মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিবেন এবং আবার ভ্রাম্যমান সেবা চালু করবেন, এমন প্রত্যাশা সবার। এ ক্ষেত্রে দূতাবাসের সরাসরি তত্বাবধান ও আয়োজনের উপর জোর দিয়েছেন অনেকে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!