বৈরুত বিস্ফোরণ : ট্রমায় ভুগছে শিশুরা, এক লাখ গৃহহীন

৪ আগস্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতে যখন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখন বাসায় খেলছিল তিন বছরের লেবানিজ শিশু আবেদ ইতানি। বিস্ফোরণে ঘরের কাচের দরজা টুকরা টুকরা হয়ে যায়, টুকরা আঘাতে কেটে যায় ইতানির হাত–পা ।আহত অবস্থায় তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালে। জরুরি কক্ষে ইতানির চোখে পড়ে আহত ও রক্তাক্ত শিশু, বয়েসী আরও অনেকেকে । তারপর থেকে আর স্বাভাবিক আচরণ করছে না ইতানি, ট্রমা চলে গেছে ছোট্ট অবুঝ শিশুটি।

ইতানি একা নয় বৈরুতের সেদিনের ভয়াবহ বিস্ফোরণে আরও অনেকেই এখন ট্রমাগ্রস্থ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন সেভ দ্য চিলড্রেনের হিসাব অনুসারে, এই বিস্ফোরণে প্রায় এক লাখ শিশু গৃহহীন হয়েছে। এর মধ্যে এটি বড় অংশ ট্রমাগ্রস্ত।

বার্তা সংস্থা এপির খবরে বলা হয়েছে, বৈরুত বন্দরে ওই বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৭০ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ছয় হাজার মানুষ। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে, কমপক্ষে ৩১টি শিশু প্রাণ হারিয়েছে এই বিস্ফোরণে।

Travelion – Mobile

আবেদ ইতানির মা হিবা আচি এবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমি যখন হাসপাতালে যাই, তখন দেখতে পাই, ইতানি জরুরি সেবাকক্ষের এক কোনায় বসে কাঁপছে এবং রক্তাক্ত মানুষগুলোকে দেখছে। জরুরি সেবাকক্ষের পুরো মেঝে তখন রক্তে ভেসে যাচ্ছিল।’

তিনি জানান, তারপর থেকে ইতানি লাল যেকোনো কিছু দেখলেই ভয় পাচ্ছে। সে লাল জুতা পরতেও ভয় পাচ্ছে। ইতানি চাইছে এই লাল জুতাগুলো ধুয়ে দেওয়া হোক।

সেদিনের বিস্ফোরণে আহত দুই শিশুকে নিয়ে এক লেবানিজ মা
সেদিনের বিস্ফোরণে আহত দুই শিশুকে নিয়ে এক লেবানিজ মা

হিবা আচি বলেন, যেকোনো শব্দ শুনলে ইতানি কেঁপে ওঠে। খাবার খাচ্ছে না ঠিকমতো। সে হাসিখুশি ছিল, কিন্তু এখন আর কথা বলছে না। এ প্রসঙ্গে সেভ দ্য চিলড্রেনের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ জয় আবি হাবিব বলেন, ট্রমাগ্রস্ত হয়ে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের আচরণ করে।

ইতানির মতো আরও দুই শিশু ইয়াসমিন (৮) ও তালিয়া (১১)। এই দুই শিশুর মা জয়নাব গাজালে বলেন, এই বিস্ফোরণে তাঁদের ঘরের জানালা ভেঙে গেছে। তারপর থেকে শিশু দুটি আর একা ঘুমাতে চায় না। তিনি আরও বলেন, ‘আমার মেয়ে ইয়াসমিন আমাকে জিজ্ঞেস করে, “আমার ছোটবেলা এমন কেন?”’

এই বিস্ফোরণের পর অনেক শিশুর চিকিৎসা দিয়েছেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ মাহা গাজালে। তিনি বলেন, অনেক শিশু অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। তারা জিজ্ঞেস করছে, এমন ঘটনা আবার ঘটবে না তো? অনেক শিশু বাড়ি ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। কাচের দরজা-জানালার কাছে যেতে
ভয় পাচ্ছে।

রিকার্ডো মোলাসচির বাবা ইতালির এবং মা লেবাননের। ছয় বছর বয়সী এই শিশু লেবানন এসেছিল নানার বাড়িতে। তার নানা মারা গেছেন এই বিস্ফোরণে। তারপর থেকে রিকার্ডো সারাক্ষণ ক্ষিপ্ত থাকে। সে বিস্ফোরণের কারণ জানে না। কিন্তু বলছে, ‘আমি ওদের আগ্নেয়গিরির মধ্যে ফেলে দিতে চাই।’

এদের মতো ট্রমাগ্রস্থ অনেকেরই মা–বাবা চিন্তা করছেন দেশ ছাড়ার। এ প্রসঙ্গে ইতানির মা বলেন,‘এই দেশ ইতানির জন্য নিরাপদ নয়। কখনো ছিল না। কোনো দিনই নিরাপদ হবে না। আমি আর এখানে থাকতে
চাই না।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!