বাহরাইনে করোনা আক্রান্তের ৬৮ শতাংশই প্রবাসী, বাড়ছে সংক্রামণ
বাহরাইনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার পর্যন্ত দেশটিতে তিন হাজার ১৬২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে ১ হাজার ৫৫৫ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ভাল খবর হলো আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যুের হার অনেক কম। এ পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন ৮ জন।
তবে আশংখার খবর হলো এ পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে দুই হাজারের বেশি বিভিন্ন দেশের প্রবাসী কর্মী। অবশ্য গত বুধবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা জিডিএন জানিয়েছে, বাহরাইনে আক্রান্ত করোনাভাইরাসের সংক্রমণে শিকার হওয়া লোকজনের ৬৮ শতাংশই প্রবাসী শ্রমিক।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বাহরাইনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তেমন বেশি ছিল না। ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম আক্রান্তের পর থেকে প্রায় দুই মাসে দেশটিতে সংক্রমিত লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র দুই হাজার। কিন্তু ২১ এপ্রিল থেকে হঠাৎ করেই তা বেড়েছে। গত ১০ দিনে সংক্রমিত হয়েছেন প্রায় এক হাজার। আর নতুন করে সংক্রমিত লোকজনের মধ্যে প্রবাসী শ্রমিকদের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। এদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২১০ জনে দাঁড়িয়ে বলে বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশি কমিউনিটি সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ছাড়া ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন তিন দেশের প্রত্যেকের এক শর বেশি করে নাগরিক করোনাভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়েছেন।
প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে বাহরাইন সরকারকে। তাই প্রতিরোধের বিষয়ে আলোচনার জন্য বৃহস্পতিবার বাহরাইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল শেখ রশিদ বিন আবদুল্লাহ আল খলিফা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ রশিদ বিন আল জায়ানি বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন।
বাহরাইন পুলিশের ওয়েবসাইটে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে চার দেশের রাষ্ট্রদূতদের বৈঠকের খবর প্রচার করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাহরাইনে অভিবাসী শ্রমিকেরা বেশ গাদাগাদি করে থাকেন। এতে করে তাদের মধ্যে দ্রুত সংক্রমণের বিষয়টি এখন স্পষ্ট হয়েছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাহরাইন সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মূলত নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাহরাইন সরকার অভিবাসী শ্রমিকদের থাকার ব্যবস্থায় এমন পরিবেশ নিশ্চিত করতে চায়, যাতে করে তাদের কম জায়গায় বেশি জনকে থাকতে না হয়। এ ছাড়া অভিবাসী শ্রমিকেরা যাতে স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে মেনে চলে এজন্য চার দেশের রাষ্ট্রদূতকে তাদের নাগরিকদের সচেতন করতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বৈঠকের বিষয়ে বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম বলেন, প্রবাসীদের মাঝে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে চার দেশের দূতাবাসের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করা নিয়ে দেশটির দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী আলোচনা করেছেন। তারা প্রবাসীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ওপর জোর দেন। সে সঙ্গে বাহরাইনি ও প্রবাসী নির্বিশেষে সবাইকে সমান চিকিৎসা সুুবিধা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
জিডিএন গত বুধবার এক খবরে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগকর্তারা প্রায় ১১ হাজার অভিবাসী কর্মীকে কোয়ারান্টিনে রাখার পাশাপাশি তাদের বিনামূল্যে খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করছে। এক্ষেত্রে নিয়োগকর্তারা সরকারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে।
