বাংলাদেশকে আর পেছনে টানতে পারবে না : ইতালিতে প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশ যেকোনো দেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশের ব্যাপক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে টানা তিনবারসহ চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন আর কারও কাছে ভিক্ষা চাই না। বরং আমরা নিজেরা সক্ষমতা অর্জন করেছি। এখন আমাদের আর কেউই পেছনে টেনে নিতে পারবে না, আমরা এগিয়ে যাবো।’

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় রাতে রোমের পার্কে দ্য প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড স্পা’তে সংবর্ধনায় দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। চার দিনের সরকারি সফরে ইতালি পৌঁছালে আওয়ামী লীগের ইতালি শাখা এ সংবর্ধনার আয়োজন করে।

Travelion – Mobile

সংবর্ধনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের উন্নয়ন প্রকল্পের শতকরা ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। এখন আর দাতারা আমাদের ভিক্ষা দিতে আসে না। বরং তারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী অভিহিত করে সহযোগিতা দিতে আসে। কারণ কারও কাছে আমরা ভিক্ষা চাই না।

নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের পদ্মাসেতু নির্মাণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেকোনো কাজ যে আমরাই পারি, তা আমরা প্রমাণ করতে সমর্থ হয়েছি।’ পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংক সরকারকে বদনাম দিতে চেয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম যে আমরা নিজস্ব অর্থায়নেই এই সেতু নির্মাণ করব। এখন আমরা নিজস্ব অর্থেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।’

রোমের পার্কে দ্য প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড স্পা’তে  প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায়  ইতালি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও প্রবাসীরা
রোমের পার্কে দ্য প্রিনসিপি গ্র্যান্ড হোটেল অ্যান্ড স্পা’তে প্রধানমন্ত্রীর সংবর্ধনায় ইতালি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও প্রবাসীরা

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কাজেই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যখনই আমরা ক্ষমতায় আসি না কেন আমরা দেশটাকে এমনভাবে গড়ে তুলব যেন বিশ্বসভায় বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে চলতে পারে। আমরা এখন দাবি করতেই পারি, বিশ্বে আমরা বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে সেই পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের পর্যায়ে রেখে যান। আমাদের সরকার সেখান থেকে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের এই অবস্থান ধরে রাখতে হবে। তাহলেই আমরা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারব। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে তিনটি মাপকাঠি রয়েছে, তা আমরা এরই মধ্যে অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, দেশে আর কেউ দরিদ্র থাকবে না, দেশে আর কেউ গৃহহীন থাকবে না। কেউ আমাদের সহানুভূতির চোখে দেখবে না। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। বিজয়ী জাতি হিসেবে আমরা মাথা উঁচু করে চলব— সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

ঘুষ না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন ঘুষ যে দেয় সেও যেমন অপরাধী আর যে নেয় সেও অপরাধী। যে নেয় শুধু সে অপরাধী নয়, যারা দেয় তারাও অপরাধী। এই দিয়ে দিয়ে অভ্যাসটা আপনারা খারাপ করলেন। আগামীতে আর করবেন না।’

‘প্রত্যেকটা জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছি। কোথাও কোন অনিয়ম হলে সঙ্গে সঙ্গে যেন ধরা পড়ে। ধরা পড়া শুধু না, তথ্য সরাসরি আমার কাছে চলে আসে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে  ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন ইতালি আওয়ামী লীগ নেতবৃন্দ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছেন ইতালি আওয়ামী লীগ নেতবৃন্দ

বিদেশে যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়, প্রবাসীদের সেভাবে নিয়ম মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের আচার-আচরণ, ব্যবহার সব কিছুতে যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।’ প্রত্যেক উপজেলা থেকে আরও ১ হাজার করে লোক প্রবাসে পাঠাতে সরকার একটা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

ডিজিটাল পাসপোর্টের পর এখন ই-পাসপোর্ট চালুর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন ই-পাসপোর্টের যুগ, আমরা ইতোমধ্যে ই-পাসপোর্ট দেওয়ার কাজ শুরু করে দিয়েছি। যাতে কেউ আর ধোঁকায় না পড়ে। সে ব্যবস্থাটাও আমরা করে দিয়েছি।’

বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি যে, প্রবাসী কেউ যদি দেশে যায় বিমানবন্দরে মাঝে মধ্যে খুব হয়রানির শিকার হতে হয়। আসলে আমাদের দেশের কিছু মানুষের চরিত্রই খারাপ। যেই শুনে বাইরে থেকে আসবে তখন ভাবে একটু চাপ দিলে বোধহয় ডলার পাওয়া যাবে।’

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ইতালি আওয়ামী লীগ সভাপতি ইদ্রিস ফরাজি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন হোসনে আরা বেগম। উপস্থিত ছিলেন ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার।

এর আগে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে রোমের ফিয়ামিসিনো বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা।

আগের খবর
ইতালিতে ৪ দিনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!