প্রবাসীর শার্ট-প্যান্ট পুড়িয়ে পাওয়া গেল কোটি টাকার স্বর্ণ

সৌদি আরব থেকে এয়ার অ্যারাবিয়ার একটি ফ্লাইটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন প্রবসাী বাংলাদেশি কুমিল্লার মোহাম্মদ সোলায়মান ও মোহাম্মদ জাকির হোসেন। দুজনই বিমানবন্দরের গ্রিন চ্যানেল পার হন। এ সময় গতিবিধি সন্দেহজনক হলে একজন কাস্টমস গোয়েন্দা কর্মকর্তা দুজনকে আটকায় এবং পকেট তল্লাশী করে।

জাকির ও সোলায়মান দুই প্রবাসীর প্যান্টের পকেটে থেকে ১০০ গ্রাম ওজনের ৬টি করে মোট ১২টি স্বর্ণের চুড়ি উদ্ধার হয়।

দুজনের কাছ থেকেই ১২ টি স্বর্ণের চুড়ি উদ্ধার হওয়ায় সন্দেহ বেড়ে যায় শুল্ক গোয়েন্দাদের। তখন দুজনের দেহ তল্লাশি করার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। তল্লাশি করেও প্রথমে কিছুই পাওয়া যায়নি। তবে তাঁদের দুজনের পড়নে থাকা শার্ট, প্যান্টের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মনে হয় গোয়েন্দাদের।

Travelion – Mobile

প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

ওজন কেন বেশি, সেই ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলে জাকির ও সোলায়মান চুপ থাকেন। পরে দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে দুজনই স্বীকার করেন, জামা ও প্যান্টের কাপড়ের ভেতর স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া রয়েছে।

অনেক চেষ্টার পরও তাঁদের প্যান্ট ও জামা কেটে স্বর্ণ আলাদা করা যাচ্ছিল না। তখন খবর দেওয়া হয় একটি জুয়েলার্সের দুই স্বর্ণকারকে। তাঁরা বিমানবন্দরে আসেন; কিন্তু স্বর্ণের প্রলেপ বের করতে পারেননি।

পরে জামা ও প্যান্ট তাঁতিবাজারে ওই স্বর্ণকারদের কারখানায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর পাঁচ ঘণ্টা ধরে সেগুলো পুড়িয়ে সেখান থেকে বিশেষ কায়দায় উদ্ধার করা হয় স্বর্ণ। স্বর্ণের পরিমাণ ছিল ১ কেজি ৩৪৫ গ্রাম; যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৮ লাখ টাকা।

জামা পুড়িয়ে স্বর্ণ উদ্ধার করা স্বর্ণকার মুসা খান জানান, জামা ও প্যান্ট টানা পাঁচ ঘণ্টা আগুনে পোড়াতে হয়েছে। এরপর স্বর্ণ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’

স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত ব্যক্তিরা অভিনব সব কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। তবে গত ১৪ অক্টোবরের এ ঘটনায় জাকির ও সোলায়মান যেভাবে স্বর্ণের প্রলেপযুক্ত জামা ও প্যান্ট পরে স্বর্ণ এনেছেন, তা একেবারেই নতুন পদ্ধতি বলে জানান শুল্ক গেয়েন্দা কর্মকর্তারা।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জাকির কিংবা সোলায়মান কাউকেই প্রথমে সন্দেহ করিনি। কারণ তাদের বেশভূষা দেখে মনেই হয়নি, তাঁরা নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন। প্যান্টের পকেট থেকে স্বর্ণের চুড়ি পাওয়ার পর সন্দেহ বেড়ে যায়। তখন দেহ তল্লাশির সিদ্ধান্ত হয়।’

‘জাকির ও সোলায়মান দুজনই রংমিস্ত্রি। তাঁদের জামা ও প্যান্ট পলেস্টারের কাপড়ের তৈরি। মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাঁরা স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া জামা ও প্যান্ট পরে বিমানবন্দরে এসেছিলেন’, তিনি যোগ করেন।’

চোরাচালান মামলায় জাকির ও সোলায়মানকে দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল বিমানবন্দর থানা-পুলিশ। পরে দুজনই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জামার ভেতরে স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে স্বর্ণ পাচারের ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে। এই চক্রে যুক্ত অন্য সদস্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
সূত্র : প্রথম আলো

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!