পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমান থেকে চাকুরিচ্যুত

কার্যক্রমে বাধার অভিযোগ

কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টির অভিযোগে সিনিয়র পাইলট ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমানকে চাকুরিচ্যুত করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ। তিনি বাংলাদেশ পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি। বাপার দাবি, কোনো প্রকার কারণ দর্শানো বা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে ক্যাপ্টেন মাহবুবকে চাকুরিচ্যুত করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

গত ২৯ নভেম্বর এক চিঠিতে সিনিয়র এই ক্যাপ্টেনকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। চাকুরিচ্যুতির চিঠিতে বাপা সভাপতিকে তার সমস্ত পাওনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝে নিতে বলা হয়েছে।

বিমান সূত্র জানায়, গত ২৮ নভেম্বর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২৬৫ তম বোর্ড সভায় ক্যাপ্টেন মাহবুবুরের বিরুদ্ধে বিমানের কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ক্ষমতা প্রদান করা হয়। এর একদিন পরেই ক্যাপ্টেন মাহবুবকে চাকুরিচ্যুত করার চিঠি দেওয়া হয়।

Travelion – Mobile

গত ২০ নভেম্বর বিমানের সদরদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিমান বোর্ডের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান এবং বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। ফ্লাইট বিলম্ব এবং যাত্রীদের হয়রানির ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথা উল্লেখ করে সাজ্জাদুল হাসান বিমানের এমডিকে দোষীদের খুঁজে বের করার অনুরোধ জানান।

বাপা এবং বিমান সূত্রে জানা গেছে, গত বছর দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে ব্যয় সংকোচন করতে অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নির্দিষ্ট হারে পাইলটদেরও বেতন কেটে আসছিল বিমান কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়, আগস্ট থেকে কর্মকর্তাদের বেতন আর কাটা হবে না, কিন্তু পাইলটদের ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটি।

মূলত এ কারণে বিমানের পাইলটদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় সম্প্রতি চুক্তির অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন তারা। এতে সংকট তৈরি হয় বিমানের মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি ফ্লাইটে। পরে বিমান বোর্ড এবং পরিচালনা পর্ষদের আশ্বাসে পাইলটরা ফ্লাইটে ফেরেন। তবে এ কর্মসূচির কারণে কয়েকটি ফ্লাইটে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।

বেতন কাটা নিয়ে বিমানের নতুন আদেশে বলা হয়, বিমানে কর্মরত কর্মকর্তা এবং যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স শূন্য থেকে ৫ বছর, জুলাই মাসে তাদের কোনো বেতন কাটা হবে না। তবে যেসব ককপিট ক্রুর চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর, জুলাই মাসে তাদের বেতন থেকে ৫ শতাংশ এবং যারা ১০ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন তাদের বেতন ২৫ শতাংশ কাটা হবে। এ সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন পাইলটরা।

বিমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, পাইলটদের মধ্যে যাদের চাকরির বয়স ৫ বছরের মধ্যে, স্বাভাবিক সময়ে তাদের বেতন ২ লাখ ৬ হাজার ৮৪ টাকা। যাদের চাকরির বয়স ৫ থেকে ১০ বছর, তারা ওভারসিজ ভাতা হিসেবে অতিরিক্ত পান ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা। এতে তাদের বেতন হয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা।

যাদের চাকরির বয়স ১০ থেকে ২০ বছর, তাদের বেতন ওভারসিজ ভাতাসহ ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা। আর যাদের চাকরির বয়স এর চেয়ে বেশি, তারা পান ১২ লাখ এক হাজার টাকা। এ ছাড়া, চুক্তির অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালন করলে তারা আলাদা করে ভাতা পান।

আগে পাইলটদের নির্দিষ্ট হারে যে ওভারসিজ ভাতা দেওয়া হতো, করোনায় আয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তা পরিবর্তন করে বর্তমানে ফ্লাইং ঘণ্টা হিসেবে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান বোর্ড।

বর্তমানে বিমানে মোট ১৫৭ জন পাইলট কর্মরত। বাপার সঙ্গে বিমানের চুক্তি অনুযায়ী একজন পাইলটের দৈনিক সর্বোচ্চ ১৩ ঘণ্টা কাজ করার কথা। সপ্তাহে একজন পাইলট কাজ করবেন সর্বোচ্চ ৭৫ ঘণ্টা। এর বাইরে তিনি সপ্তাহে ২ দিন ছুটি পাবেন।

পাইলটদের অভিযোগ, পাইলট সংকটের কারণে তাদের অনেককেই সপ্তাহে ৭৫ ঘণ্টার বেশি ফ্লাইট চালাতে হচ্ছে।

সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!