জর্ডানে করোনা-অভিযোগ প্রচারে দুই টিভি কর্মকর্তা গ্রেফতার

করোনাভাইরাসের লকডাউনের কারণে বন্দি থাকা শ্রমিকদের অভিযোগ ভিত্তিক প্রতিবেদন প্রচার করায় দুই টিভি কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে জর্ডান সেনাবাহিনী। গ্রেফতার দুজন হলেন দেশটির রয়া চ্যানেলের মালিক ও জেনারেল ম্যানেজার ফারেস সায়েগ এবং সংবাদ পরিচালক মোহমাদ আল খালিদি।

আল জাজিরার প্রতিবেদনের বলা হয়, রয়া চ্যানেলের প্রচারিত সংবাদটিতে দেখা গেছে, সরকার আরোপিত লকডাউনের কারণে কাজ না থাকা একদল শ্রমিক তাদের অভাবের কথা তুলে ধরছেন। তাদের অভিযোগ সরকারের কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে কাজ হারিয়ে পরিবার নিয়ে অভাব-অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে।

পরে দেশটির নিরাপত্তা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউসন টিভি স্টেশনটির এই দুই কর্মকর্তাকে ১৪ দিন আটকে রাখার নির্দেশ দেয়।

Travelion – Mobile

রয়া টিভি তাদের সংবাদ পরিচালক এবং টেলিভিশন স্টেশনের জেনারেল ম্যানেজার ও স্বত্বাধিকারির গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিবৃতি প্রদান করেছে। বিবৃতিতে চ্যানেলটি জানিয়েছে, তারা এই সঙ্কটে সম্পূর্ণভাবে জর্ডানীয় সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে, যা পেশাগতভাবে তারা আইনের শাসনকে সম্মান করে ।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক পত্রিকা গাল্ফ ইনসাইডার জানিয়েছে, আল খালিদি জনপ্রিয় রাজনৈতিক টক শো নাব্দ আল বালাদ অথবা পালস অব দ্য টাউন এর হোস্ট। তারা আরো জানায়, যে সেগমেন্টটি নিয়ে কথা উঠেছে সেটিতে দেখা গেছে রাজধানী আম্মানের একটি গরিব এলাকায় মানুষের ভিড়।

সেখানে এক ব্যক্তি ক্যামেরায় কথা বলতে গিয়ে বলেন, তিনি এবং অন্যরা সরকার আরোপিত লকডাউনেরর কারণে কাজে যেতে পারছে না ফলে এসময় তারা পরিবারকে যেমন খাওয়াতে পারছে না তেমনি চলবার মত খরচও দিতে পারছে না।

লোকটি প্রশ্ন করে বলে, আমার পরিবারকে তো খাওয়াতে হবে, এখন আমার কী করা উচিত? আমি কি মাদক ব্যবসা বা চুরি এসবের আশ্রয় নিতে পারি? নাকি রাস্তায় নেমে ভিক্ষা শুরু করব?

রিপোর্টে আরেক মহিলা জানিয়েছেন, তাঁর পরিবারে ছেলেই একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করে এবং একমাত্র রুটি-রুজির যোগান দেয়। তবে এখন সে বাড়িতে থাকতে বাধ্য হওয়ায় তাদের কোনও রুটি, ভাত বা চিনি খাওয়ার মত অবস্থাও নেই।

এদিকে চ্যানেলটির বোর্ড চেয়ারম্যান ও ফারেস সায়েগর পিতা শিল্পপতি মিশেল সায়েগ তার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তিনি কিং আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ভরসা রাখেন এবং করোভাইরাস দমনে সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেন। ধনী জর্ডানিয়ান হিসেবে তিনি এই মহামারিতে সরকারকে সহায়তা করতে ১.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছেন।

দেশটির অর্থনীতিবিদ সালামেহ দেরাওয়ি বলেন, জর্ডানের অর্থনীতির প্রায় ৮৫ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের উপর নির্ভরশীল। এই ব্যবসায় নিয়োজিত আছে লাখ লাখ শ্রমিক। তবে সেসব এখন সব বন্ধ থাকায় রুটি রুজি নিয়ে অনিশ্চতায় পড়েছে তারা। তিনি জানান, জর্ডানের বেসরকারি খাতে প্রায় ১২ রাখ শ্রমিক কাজ করে যাদের উপর দেশটির মোট দেশজ উৎপাদনের (প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার) অর্ধেক নিভর করে।

গত মার্চে জর্ডান জরুরী অবস্থা জারি করে দেশটিতে করোনা মহামারির বিস্তার রোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। গেল বৃহস্পতিবার সরকার এক দফায় ৪৮ ঘণ্টা লকডাউনের ঘোষণা দেয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!