জর্ডানের করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে। কিছুক্ষণ আগে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই ঘোষণা দিয়েছে। আগের দিন সোমবার মন্ত্রণালয় ৩৩ জন আক্রান্তের তথ্য নিশ্চিত করেছিল। এ পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ছয় ফরাসি পর্যটক, জর্দানপ্রবাসী একজন ইরাকি মহিলা, আল-বশির হাসপাতালের একজন নার্স, ২৫ জন জর্দানিয়ান রয়েছেন। বাকিরা সুস্থ হয়ে উঠা জর্ডানি নাগরিক।
এদিকে জর্ডান সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশটির বিমানবন্দরগুলোতে সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল স্থগিত করা হয়েছে। বিমানবন্দর দিয়ে বাইরের দেশ থেকে আসা সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত যাত্রীর প্রবেশ রোধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত বিমানবন্দরগুলোতে কার্গো উড়োজাহাজ ছাড়া সব ধরণের বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।
আজ মঙ্গলবার থেকে রাজধানী আম্মানের কুইন আলিয়া আন্তর্জাতিক (কিউএআইএ) বিমানবন্দরে এই ব্যবস্থা জারি করা হয়েছে। গতকাল সোমবার এই বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে যারা এসেছিলেন তাদের জর্ডান সশস্ত্র বাহিনী (জেএফ) প্রহরায় বাসে করে ডেড সির কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচিত হোটেলগুলিতে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এর আগে গতকাল সোমবার দক্ষিণের আকাবা শহরের কিং হুসেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (কেএইচআইএ) সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করা হয়েছে। তবে আকাবা থেকে নিজ দেশের যাত্রী পরিবহনের জন্য ইউরোপীয় দেশগুলি থেকে যাত্রী ছাড়া আসা পাঁচটি উড়োজাহাজ অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আকাবার গভর্নর এই রাজ্যে ভাইরাসটি ছড়াতে না পারার জন্য উপকূলীয় শহরটিতে আরও সতর্কতা অবলম্বন করার ওপর জোর দিয়েছেন।
সোমবার করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ জানাতে জাতীয় সুরক্ষা ও সংকট ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাদ জাবের জানান, দেশের রেস্তোরাঁগুলিতে গ্রাহক অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গ্রাহকরা কেবল ‘ডেলিভারী সার্ভিস’ কিংবা “ড্রাইভ-থ্রু” পরিষেবাটির মাধ্যমে খাবার পেতে পারেন।
মন্ত্রী বলেন, স্কুলগুলিকে দূরশিক্ষণে মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বাণিজ্যিক ট্রাকচালকের মেডিকেল পরীক্ষা করা হবে।
মিডিয়া বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী আমজাদ আদায়েলে বলেন,”করোনার সংকট মোকাবিলার জন্য আমাদের জাতীয় প্রতিরক্ষা আইন কার্যকর করতে হতে পারে। যারা গুজব ও ভুল তথ্য প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে সরকার সবচেয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন আল-হুসাইন করোনভাইরাস রোগের (কোভিড -১৯) প্রত্যাশিত উন্নয়নের সাথে সামঞ্জস্য রেখে রেসপন্স প্ল্যানকে নিয়মিত আপডেট করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় যে কোনও অতিরিক্ত পদক্ষেপের মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার করোনাভাইরাস প্রতিরোধের জন্য স্বাস্থ্য খাতের নেওয়া পদক্ষেপগুলির পর্যালোচনা বৈঠকের সভাপতিত্বকালে বাদশাহ এই রোগের বিস্তার রোধে সমন্বয়ের প্রতি জোর দেন।
রয়্যাল কোর্টের এক বিবৃতিতে বলা হয়, বাদশাহ জর্ডানিয়দের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য সমস্ত সম্পদকে কাজে লাগানোর নির্দেশ দেন। এ লক্ষ্যে জাতীয় বাস্তবায়ন ব্যবস্থা ও ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে প্রতিদিন পর্যালোচনা বৈঠক করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বৈঠকে, বাদশার উপদেষ্টা এবং জাতীয় নীতি পরিষদের চেয়ারপারসন প্রিন্স ফয়সাল, প্রধানমন্ত্রী ওমর রাজ্জাজ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাদ জাবেরসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে, প্রধানমন্ত্রী রাজ্জাজ জানিয়েছেন, ডেড সি এবং রাজধানী আম্মান ও আকাবাতে বেশ কয়েকটি হোটেল কোয়ারেন্টাইনের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। জর্ডান সেনাবাহিনীর প্রহরায় হোটেলগুলিতে বিদেশ আগতদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোয়ারান্টিনে থাকা ব্যক্তিদের হোটেল থেকে বাইরে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।