চীনে সর্বোচ্চ সম্মানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন

চীনে সর্বোচ্চ মর্যাদায় ও উৎসাহ উদ্দীপনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতীয় দিবস উদযাপন করেছে বাংলাদেশ দূতাবাস। জাতীয় পিপলস কংগ্রেসের শীর্ষ পর্যায়ের নেতার উপস্থিতির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে চীন সরকার।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) বিকেলে দিনব্যাপী কর্মসূচির দ্বিতীয় পর্বে বেইজিং-এর খ্যাতনামা তারকা হোটেল মেরিয়ট নর্থইস্টে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন চীনের ১৩ তম জাতীয় পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান (উপ-প্রধানমন্ত্রী সমমর্যাদা) উ ওয়াইহোয়া। তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী লু ঝাও হুই এবং চীনের উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ও চীনের জাতীয় সঙ্গীত বাজানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরুর পর দুই দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব কামনা করে প্রধান অতিথি উ ওয়াইহোয়া এবং চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। পরে অতিথিরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে কেক কাটেন।

Travelion – Mobile

প্রধান অতিথি পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান উ ওয়াইহোয়া বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের উচ্চ পর্যায়ের সফরের মাধ্যমে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হয়েছে। চীনের নবতর পর্যায়ে উত্তরণের যে স্বপ্ন, তার সঙ্গে মেলবন্ধন হতে পারে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার।

মানুষের জীবনমানে পরিবর্তন এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও সাফল্যের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় সব ধরনের সাহায্য ও সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-এর প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে বলেন, চীন সব সময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

চীনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ণাঢ্য আয়োজনে বক্তব্য রাখছেন  চীনের ১৩ তম জাতীয় পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান (উপ-প্রধানমন্ত্রী সমমর্যাদা) উ ওয়াইহোয়া
চীনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বর্ণাঢ্য আয়োজনে বক্তব্য রাখছেন চীনের ১৩ তম জাতীয় পিপলস কংগ্রেসের স্থায়ী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান (উপ-প্রধানমন্ত্রী সমমর্যাদা) উ ওয়াইহোয়া

রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের এবং অবদানের কথা স্মরণ করেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ এবং আত্মউৎসর্গকারী মুক্তিযোদ্ধাদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন এবং তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান । তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনগন শোষণ, শাসন এবং আধিপত্যবাদের বিপরীতে জেগে ওঠেন এবং সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিনত হওয়ার সুনির্দিষ্ট পথরেখা এবং পদক্ষেপের বিষয়ে আলোকপাত করে তিনি চীনা সরকারকে বাংলাদেশের এই উন্নয়ন অভিযাত্রা, প্রগতি ও সমৃদ্ধির অংশীদার হওয়ায় ধন্যবাদ জানান। এছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতার উপস্থিতির মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে চীনের প্রেসিডেন্ট শী জিং পিং ভিডিও বার্তার বিষয়টি উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের পুরানো এবং প্রকৃত বন্ধু হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি শিল্পীদের সমন্বয়ে একটি নৃত্য পরিবেশনা করা হয়। “পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে-রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল” এই গানটির সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন দূতাবাস পরিবারের সদস্য নিহন আনান রহমান, রোকাইয়া তাহিরা এবং নামিরা করিম চৌধুরী।

চীনে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, চীনের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, বেইজিংয়ের গণ্যমাণ্য ব্যক্তি এবং বাংলাদেশি কমিউনিটি ব্যক্তিত্বরা বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে সবারমাঝে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা যায়।

এর আগে সকালে প্রথম পর্বে রাজধানী বেইজিংয়ে দূতাবাস চত্বরে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের উপস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচির সূচনা করেন রাষ্ট্রদূত মাহবুবুজ্জামান। এ সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ ও আত্মত্যাগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে এক মিনিটের নীরবতাসহ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রদূত সকলকে নিয়ে দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু কর্ণার ও লাইব্রেরীতে স্থাপিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ উপলক্ষে আলোচনার শুরুতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাণী পাঠ করা হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!