কোরিয়ায় করােনার মধ্যে নির্বাচন, মুনের দলের ভূমিধস বিজয়

দক্ষ হাতে আর অপরিসীম মনোবলে করোনাভাইরাসের বিস্তার রুখে দিতে সক্ষম হওয়া দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন অবশেষে পেলেন দেশবাসীর পুরস্কার। মুনের ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অফ কোরিয়া (ডিপিকে) বুধবারের সাধারণ নির্বাচনে এক দুর্দান্ত জয় পেল।

জাতীয় নির্বাচন কমিশন (এনইসি) প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, জাতীয় সংসদের ৩০০ সদস্যের নির্বাচনের ক্ষেত্রে ২৫৩ টি আসনের মধ্যে ডিপিকে ১৬৩ অসনে জয়ী হয়েছে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বকারী আসনগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার সময় যা তার উপ দল সিভিল টুগেদার জিততে পারে, ক্ষমতাসীন ব্লকের মোট ১৮০ টি আসন থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পরে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রকাশিত হবে। প্রধান বিরোধী ইউনাইটেড ফিউচার পার্টি (ইউএফপি) ৮৪ টি আসনে জয়ী হয়েছে।

মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অনেক দেশ নির্বাচন স্থগিত করলেও সে পথে হাঁটেনি দক্ষিণ কোরিয়া। কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সতর্কতা বজায় রেখেই বুধবার দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের নির্বাচনে ৩৫টি দল অংশ নেয়।

Travelion – Mobile

সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও ভোটারদের বিরাট অংশ ভোট দিতে গেছেন। নির্বাচনের কারণে দেশটিতে আবার দ্বিতীয় দফা করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন অনেকে। কিন্তু সরকার দেখাতে চায় মহামারির মধ্যেও অনেক কিছু করা সম্ভব।

সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও ভোটারদের বিরাট অংশ ভোট দিতে গেছেন।
সংক্রমণের ঝুঁকি সত্ত্বেও ভোটারদের বিরাট অংশ ভোট দিতে গেছেন।

মহামারীর মধ্যে নির্বাচনের বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার অনেক নাগরিকেরই সমর্থন ছিল না। তবে সকাল থেকেই কেন্দ্রের সামনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিয়েছেন ভোটাররা।

সকাল থেকেই মাস্ক পরে ভোটাররা ভোট দিতে আসেন। অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে তারা লাইনে দাঁড়ান। কেন্দ্রে ঢোকার আগেই সকলের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। হাত জীবাণুমুক্ত করে ভোটারদের প্লাস্টিকের দস্তানা পরিয়ে দেওয়া হয়। এতসব কার্যক্রমের পরই একজন ভোটার হাতে সিল পান এবং তাকে ব্যালট দিয়ে বুথে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন করোনাভাইরাস আক্রান্তরাও ভোট দিয়েছেন হাসপাতাল থেকে।

কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে যে, কারও শরীরের তাপমাত্রা যদি ৩৭.৫ সেন্টিগ্রেডের বেশি হয় তাহলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি আইসোলেশন থেকে ভোট দেবেন। প্রয়োজন হলে হাসপাতালে পাঠানো হবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচন কখনো কোনো পরিস্থিতিতেই বাতিল হয় না। ১৯৫২ সালে যখন রক্তক্ষয়ী কোরিয়ান যুদ্ধ চলছিল তখনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় সংসদে ৩০০ আসন রয়েছে। ৩৫টি দলের প্রার্থীরা এসব আসনের জন্য লড়ছেন।

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে চলমান চিকিৎসা সফলতায় বিশ্ববাসীর আলোচনায় দক্ষিণ কোরিয়া। কোনও লকডাউন না করে, গণপরিবহন বন্ধ না করে সবকিছু সুচারুভাবে ব্যবস্থাপনার বিশ্বনায়ক মুনজে ইন।

মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে মোট শনাক্ত রোগী ১০ হাজার ৫৬৪৷ এদিন নতুন আক্রান্ত হন মাত্র ২৭ জন৷ গত ২৯ ফেব্রুয়ারি একদিনে সর্বোচ্চ নতুন আক্রান্ত ছিল ৯০৯ জন৷ মোট মৃত্যু ২২২৷

সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবীদ পার্ক সাইং-ইন বলেন, ‘‘সরকার সত্যিই পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে৷ এখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সরকার সিউলের প্রশংসা করছে৷ ফলে দেশেও সরকারের প্রতি জনগণের মনভাবের পরিবর্তন এসেছে৷’’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!