কুয়েতে ভিসা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযানের মধ্যেও ৪ টি কাজ পান পাপুল

কুয়েতে মানব পাচার, ঘুষ এবং মানি লন্ডারিংয়ের মামলায় আটক বাংলাদেশের সাংসদ শহিদ ইসলাম পাপুলের সঙ্গে ভিসা বাণিজ্যের জড়িত থাকার ক্ষেত্রে যেভাবে অভিযোগ ও নাম বাড়ছে তাতে করে দেশটির রাজনীতিবিদ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আসামির তালিকায় শীর্ষস্থানীয় হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। করোনাকালে অবৈধ ভিসা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে গত ৩ মাস ধরে চলা অভিযানের মধ্যেও কয়েকটি সরকারী মন্ত্রণালয় বাংলাদেশি এমপির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৪ টি সরকারী চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, এতে করে বাংলাদেশের সাংসদের অনৈতিক কাজের পেছনে কুয়েতের রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মদদ দেওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।

রবিবার (২৮ জুন) এমন পর্যবেক্ষণ ওঠে এসেছে আরব টাইমসের এক প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা গত ২ মাসে তাঁকে ২৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা বা কুয়েতের ১০ লাখ দিনার ৪টি কাজের চুক্তি নবায়নে সহায়তা করেছিলেন। ওই চুক্তিগুলোর আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতার জন্য কর্মী নিয়োগ করা হয়েছিল।

কুয়েতের তদন্ত সূত্রগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পাপুলের প্রতিষ্ঠানগুলোর চুক্তির মধ্যে দুটির মেয়াদ কয়েক বছর আগেই শেষ হয়েছিল। অন্য দুটির মেয়াদ শেষ হয়েছিল দুই মাস আগে। কিন্তু কুয়েতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচ্ছন্নতা সেবা অব্যাহত রাখা জরুরি বলে সরকারি কাজের চুক্তিতে স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার ব্যতয় ঘটিয়ে সেগুলোর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।

আগের খবর : কুয়েতে আবারও সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পাচ্ছে অবৈধ প্রবাসীরা!

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কুয়েতের গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের কাজে যুক্ত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান পাপুলের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়নি। এ মাসের শুরুতে সরকারি ওই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি দরপত্রবিষয়ক কর্তৃপক্ষের কাছে পাপুলের প্রতিষ্ঠানের কাজের মেয়াদ এ বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করে। কিন্তু সরকারি দরপত্র কর্তৃপক্ষ ওই সুপারিশের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন স্থগিত করে দেয়।

অন্যদিকে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড বিষয়ক কাজে যুক্ত সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান শহিদ ইসলামের প্রতিষ্ঠানের জন্য বাড়তি কাজের বরাদ্দ দিয়েছে। কাজের মূল চুক্তিপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশের সাংসদের প্রতিষ্ঠানের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। পরে চুক্তিতে পরিবর্তন আরও একটি প্রতিষ্ঠানের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় শহিদ ইসলামের প্রতিষ্ঠানকে। সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী বাড়তি কাজের জন্য দেওয়া হবে ১৯ কোটি ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বা ৭ লাখ ২০ হাজার দিনার। ওই কাজের চুক্তি এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আগের খবর : এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালকের পদ থেকে বাদ এমপি পাপুল

সাংসদ পাপুলকে মদদ দেওয়ায় অভিযুক্ত তিন সাংসদের প্রাধিকার প্রত্যাহার করে নিতে এরই মধ্যে কুয়েতের পাবলিক প্রসিকিউশনের দপ্তর থেকে পার্লামেন্টের স্পিকার মারজুক আল ঘানেমকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কুয়েতের পার্লামেন্টের স্পিকার বিষয়টি আইন বিষয়ক সংসদীয় কমিটির আলোচনায় তুলেছেন। তিন সাংসদের প্রাধিকার প্রত্যাহারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে পার্লামেন্টের আইন বিষয়ক কমিটি।

কুয়েতের সংবিধান বিশেষজ্ঞ মোহামেদ আল ফিলি আরব টাইমসকে বলেছেন, আইনবিষয়ক কমিটি পাবলিক প্রসিকিউশনের দপ্তরের অনুরোধের বিষয়ে এক মাসের মধ্যে একটি প্রতিবেদন দেবে। যদি কমিটি এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়, তখন ধরে নেওয়া হবে উল্লিখিত দুই সাংসদের প্রাধিকার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। এরপর তাঁদের আইনের আওতায় আনতে আর কোনো বাধা থাকবে না।