কুয়েতে ভিসা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জোরালো হচ্ছে গণরোষ

কুয়েতে অবৈধ ভিসা ব্যবসায়ী এবং তাদের সহযোগিদের শাস্তির আওতায় আনতে জোরালো হচ্ছে গণরোষ। যারা এই ঘৃণ্য অপরাধ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে এবং বহু শ্রমিককে বেকার রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে প্রচার-প্রচারণা যাথে বৃথা না যায় সেই প্রত্যাশায় করছেন দেশটির অধিকাংশ নারগিক।

আরব টাইমস পত্রিকায় সম্প্রতি দেশটিতে ভিসা বাণিজ্যের বিরুদ্ধ জনসমর্থন বাড়ার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়েতের জনকল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে এই ভিসা ব্যবসাকে নীরবতা দিয়ে জায়েজ করাটা একটি বড় অপরাধ ছিল যা মানবিক কুয়েতের ধারণাকে অপমান করার সামিল। তাই তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তারা পুরনো ক্ষত সারতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় যেহেতু বর্তমানে এ ব্যাপারে তাদের অভূতপূর্ব জনসমর্থন রয়েছে।

Travelion – Mobile

আরব টাইমসকে উইম্যান কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লুলওয়া আল-মোল্লা বলেন, “এই বিষয়টির গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরতে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করা হয়েছে। ভিসা ব্যবসায়ীরা এতদিন ধরে যা করেছে তার প্রভাব আমাদের সমাজে স্পষ্ট, যদিও বিষয়টি নিয়ে করোনা মহামারির আগে থেকে সুশীল সমাজ সরকারকে সতর্ক করে এসেছে এবং অপ্রত্যাশিতভাবে এর কুফল আমাদের এখন ভোগ করতে হচ্ছে। ”

আল-মোল্লা যোগ করেন, “আমাদের ভাবতে খুব কষ্ট হয় যখন দেখি বিভিন্ন দেশে থেকে আসা এইসব গরীব মানুষেরা তাদের মূল্যবান সহায় সম্বল বিক্রি করে এদেশে এসেছে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায়। অথচ এই মানবিক আদর্শের দেশে তাদের প্রতি অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে যা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই পরিস্থিতির জন্য যেসব ভিসা ব্যবসায়ী ও বিগত বছরগুলোতে এসব রুখতে ব্যর্থ হওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা দায়ী। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিচারের আওতায় আনাটা এখন অত্যন্ত জরুরি।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, করোনা সঙ্কটের কারণে আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে পরিস্থিতি কতটা আমাদের প্রতিকূলে।

লুলওয়া আল-মোল্লা দাবী করেন, এই রেসিডেন্সি বা ভিসা ব্যবসায়ীদের নাম এবং পরিচয় তুলে ধরার। বলেন, “এই দেশে যারা বৈধভাবে শ্রমিক এনে দেশের উন্নয়নকে শাণিত করছেন তাদের স্বার্থে এটিই করাটা অত্যন্ত জরুরি নচেৎ অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে সাধারণ মানুষ তাদের গুলিয়ে ফেললে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে। আমি আশা করি সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা করবে এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরা হবে যাতে এই বিষয়টিকে বাদ অন্য বিষয়কে এখন প্রাধান্য দেয়া না হয়। ”

কুয়েত হিউম্যান রাইটস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ড. ইউসেফ আল-সাকের বলেন, “আমাদের জন্য সুখবর যে বিষয়টি এখন সবার নজরে এসেছে। তবে এটা অত্যন্ত অনুতাপের বিয়ষ ভিসা ট্রেডারদের যথেষ্ট প্রভাব এখনো রয়েছে এবং এই বিষয়টি নিয়ে তারা দাবী করছেন যে তারা শুধুমাত্র শ্রমিকদের যাতায়াতের খরচের জন্য চার্জ করে থাকেন। তাই ভিসা ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে এই প্রচারাভিযানে আমাদের লক্ষ্য হল তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাতে তারা যা-তা বলে পার না পেয়ে যায়। জবাবদিহিতার পর তাদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন এবং এমনকি আইনি উপায়ে তাদের সব বেআইনী উপায়ে সঞ্চিত তহবিল বাজেয়াপ্ত করা প্রয়োজন। সবশেষে মানব নিয়ে ব্যবসায় করা এসব কোম্পানি বন্ধ করে দিতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, স্বেচ্ছায় দেশে ফেরত যাওয়ার আগে এসব শ্রমিককে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া জরুরি। কারণ এটি আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়মিত উত্থাপিত হচ্ছে এবং পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে মানবপাচার করেছে কুয়েত।

তিনি উল্লেখ করেন যে, করোভাইরাস মহামারীর কারণে আমরা এখন অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য সংকটের মুখোমুখি হয়েছি। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিষয়টির মোকাবেলা করা উচিত। কুয়েত হিউম্যান রাইটস সোসাইটি এরইমধ্যে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে এসব কর্মীদের ন্যায়বিচার দিতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইব্রাহিম আল-মুলাইফি আরব টাইমসকে বলেন, “গত তিন দশক ধরে এই বিষয়টির ভয়াবহতা নিয়ে আমরা একটি অনেকবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। এখন উত্তম সময় হয়েছে মানবিক দৃষ্টিকোণ কিংবা কুয়েতের সুনাম ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বিষয়টি সামনে এনে সুরাহা করা।”

আল-মুলাইফি আরো বলেন, “আমাদের সমাজে এর বিরুদ্ধে একটি কঠিন ভূমিকম্পের দরকার ছিল যা দুর্ভাগ্যবশত এই করোনা সংকটের মধ্য দিয়ে সামনে এসেছে এবং বিষয়টি মোকাবেলার জন্য কর্তৃপক্ষের টনক নাড়তে পেরেছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার এই বিষয়ে আজ জনপ্রিয় এবং অভূতপূর্ব সমর্থন পাচ্ছে সংসদে। তাই জাতীয় সংসদের সহযোগিতা ও সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে আইন প্রণয়ন করে এর নির্মূল করতে হবে। এমন নজির কুয়েতের সংসদীয় ইতিহাসে রয়েছে।”

তিনি বলেন, সরকারকে অবশ্যই তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করার আগে সুপ্রিম কাউন্সিলের দাখিল করা প্রতিবেদনগুলো পর্যালোচনা করতে হবে। এটি সফলভাবে করতে পারলে বোঝা যাবে সরকার এটি নিয়ে কতটা তৎপর আর আন্তরিক। এখানে একথা সত্য যে, এসব ভুক্তভোগীদের কোন অপরাধ নেই। তাদের এই অসভ্য উপায়ে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছে, যার ফলে সরকারের এই ভিসা ব্যবসায়ীদের মুখোশ জনসম্মুখে প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!