করোনায় দেশের তুলনায় প্রবাসে বাংলাদেশিদের মৃত্যু-আক্রান্ত বেশি

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু আর আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। মৃত্যুর দিক থেকে সংখ্যাটা প্রায় দ্বিগুণের বেশি। আর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড়গুণের বেশি। গতকাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৭টি দেশে ৫৮৬ জন বাংলাদেশির প্রাণহানি হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজারের বেশি। দেশগুলোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট, বাংলাদেশ দূতাবাস আর বাংলাদেশি কমিউনিটির সূত্রে এই পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে।

সোমবার পর্যন্ত দেশে করোনায় মারা গেছেন ২৩৯ জন। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১৫ হাজার ৬৯১ জন।

গতকাল রোববার পর্যন্ত ১৭টি দেশে ৫৮৬ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মারা গেছেন। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ২৫০ জন, যুক্তরাজ্যে ২০০ জন, সৌদি আরবে ৭৬ জন, কুয়েতে ১৭ জন, ইতালিতে ৮ জন, কানাডায় ৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬ জন, ফ্রান্স ও স্পেনে ৫ জন করে, কাতারে ৪ জন, সুইডেনে ২ জন, মালদ্বীপ, পর্তুগাল, কেনিয়া, লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও গাম্বিয়ায় ১ জন করে বাংলাদেশি মারা গেছেন।

Travelion – Mobile

দেশের শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেলেও সেখানে কত জন বাংলাদেশির মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে সেটি নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তবে সিঙ্গাপুরের পর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে সৌদি আরবে।

রিয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, সৌদি আরবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশই অভিবাসী কর্মী। আর এদের মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক অন্তত ৩০ শতাংশ। সৌদি কর্তৃপক্ষ মে মাসের ২ তারিখ পর্যন্ত তিন হাজার সাতশ’ বাংলাদেশি আক্রান্ত বলে জানিয়েছিল। তবে বাংলাদেশি কমিউনিটির দাবি রোববার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

সিঙ্গাপুরের ১২ হাজার, সৌদি আরবের ৭ হাজারের পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ৩ হাজার। এ ছাড়া কুয়েতে ৮০০, ইতালিতে ২০০, স্পেনে দেড়শ’ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১০০ জন বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাদ দিয়ে এই ৭ দেশে গতকাল রোববার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বাংলাদেশির সংখ্যা ২৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলোতে করোনাভাইরাসে বাংলাদেশিদের আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা কেন পাওয়া যাচ্ছে না এর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন ব্রিকলেনের বাসিন্দা শওকত সিদ্দিকী। বলেন, ‘অনেকেই মৃদু লক্ষণ নিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পর হটলাইনে যোগাযোগ করে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা নিচ্ছেন বাড়িতে বসে। আবার অনেকেই সামাজিক অস্বস্তি এড়াতে তা প্রকাশ করছেন না। ফলে বিপুল সংখ্যায় লোকজন আক্রান্ত হলেও তা জানা যাচ্ছে না।’

মধ্যপ্রাচ্যের অপর দেশ ওমানে করােনায় সংক্রমিতদেরবেশিরভাগই প্রবাসী হলেও কোন দেশের নাগরিক কতজন, তা সরকারিভাবে জানানো হচ্ছে না। যেহেতু আক্রান্তের মধ্যে প্রবাসীই বেশি সে হিসেবে ধরে নেওয়া যায় এর উল্লেখেযােগ্য সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন । দেশটিতে প্রবাসীদের মধ্যে সংখ্যাক দিকে বাংলাদেশ শীর্ষে ।

সিঙ্গাপুরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সোমবারের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ৮২২ জন। এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বিদেশি। তবে সিঙ্গাপুর সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকেই বাংলাদেশের নাগরিক। অর্থাৎ দেশটিতে প্রায় ১২ হাজার বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে বিপুল সংখ্যায় আক্রান্ত হলেও সেখানে সুস্থতার হারও যথেষ্ট বেশি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!