কুয়েতে ট্রাফিক বিভাগে ঘুষ আদায়ে বাংলাদেশি গ্রেপ্তার, প্রসিকিউশনে কুয়েতি কর্মী

যোগসাজশে প্রবাসীদের থেকে ৩০ হাজার কেডি ঘুষ গ্রহণ

কুয়েতের গাড়ির নিবন্ধন নবায়নে ঘুষ নিয়ে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ এক প্রবাসী বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার এবং ট্রাফিক বিভাগের এক কুয়েতি নারী কর্মীকে প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত দুজনে প্রবাসীদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে ৩০ হাজার কুয়েতি দিনার আয় করেছেন বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

করোনা পরিস্থিতিতে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাগরিক ও প্রবাসীদের গাড়ির নিবন্ধন নবায়নে নতুন এক নিয়ম চালু করেছে। এক্ষেত্রে তাদের গাড়ি এখন যাচাই-বাছাইয়ের ঝামেলা ছাড়াই নবায়নের সুবিধা রাখা হয়েছে। তবে নবায়নে ইচ্ছুকদের জন্য একটি বারকোড ইস্যু করা হবে যেটি তারা পেতে পারেন সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে আগেভাগে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার মাধ্যমে।

আরব টাইমস জানিয়েছে, কুয়েতের বিশাল সংখ্যক প্রবাসীর গাড়ি নিবন্ধন নবায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখে বাংলাদেশি সাদ্দাম হোসেনের লোভ আসে পরিস্থিতির সুবিধা নেওয়ার। তিনি আহমদী ট্রাফিক বিভাগের একজন কর্মীর সঙ্গে যোগসাজশ ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ২০ কুয়েতি দিনার ঘুষের বিনিময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই গাড়ি নিবন্ধন নবায়ন সুযোগের অবৈধ পথ খুলে।

Travelion – Mobile

নতুন এই নিয়মের অপব্যবহার করে প্রবাসীদের কাছ বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশি সাদ্দাম হোসেন ও তার কুয়েতি সহযোগী। কুয়েতি কর্মচারীর সহযোগিতায় ২০ দিনার ঘুষের বিনিময়ে কোন ধরনের আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই গাড়ি নবায়নের কাজ করে দিত।

নিরাপত্তা সূত্র জানায়, যখন জানাজানি হয় যে আহমাদি ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টে বাংলাদেশি নাগরিক সাদ্দাম আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই ২০ দিনার ঘুষের বিনিময়ে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নবায়ন করে দিচ্ছে তখন তারা তদন্তে নামে।

আহমাদি প্রদেশের তদন্ত বিভাগের কর্নেল ওমর আল-রশীদ এই তদন্তের নেতৃত্ব দেন। তিনি সেখানকার ফিন্টাস এরিয়া তদন্ত কর্মকর্তা মেজর তামের আল-ডাব্বসকে এ বিষয়ে
ব্যাপক তদন্ত চালাতে এবং প্রবাসী সাদ্দাম হােসেনের ঘুষ লেনদেন যাচাই করতে এবং সেই সঙ্গে ট্রাফিক বিভাগের কোন কর্মচারির যোগসাজসে সাদ্দাম এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে তা খুজে বের করতে নির্দেশ দেন ।

মেজর ডাবসউসের তদন্তে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশি সাদ্দাম হোসেন আহমাদি ট্রাফিক বিভাগের এক নারী কর্মীর সহযোগিতায় এই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম স্বীকার করেন যে, তিনি কেবল একজন মধ্যস্থতাকারী, প্রবাসীদের সঙ্গে যোগােযাগ, আর্থিক লেনদেন ও নবায়নের কপি হস্তান্তরের কাজটি করতেন তিনি। তবে মূল প্রক্রিয় সম্পন্ন হত ওই কুয়েতি কর্মচারীর মাধ্যমে। তিনি এবং নারী কর্মচারী প্রত্যেকে দশ দিনার করে ঘুষ ভাগ করে নিতেন।

তদন্তকারীরা জানায়, গত তিন মাসে সাদ্দাম ৩০ হাজার কুয়েতি দিনার আয় করেছে যার মধ্যে তিনি ১৫ হাজার দিনার দেশে পাঠিয়ে দেন।

সাদ্দামের স্বীকারোক্তির আহমেদি ট্রাফিক বিভাগের ওই নারী কর্মচারিকে জেরা করেন তদন্তকারী দল। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে সব স্বীকার করেন নেন। এই অপরাধে তাকে প্রসিকিউশনে পাঠানো হয়েছে।

সূত্রটি আরব টাইমসকে ইঙ্গিত দিয়েছে যে, আহমদী তদন্ত বিভাগ ট্রাফিক বিভাগকে এই মামলার একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে দেখা গেছে যে, আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই গাড়ি নবায়নের রেকর্ড সংখ্যক লেনদেন সম্পন্ন হয়েছিল। এতে প্রমাণ করে যে ওই কুয়েতি নারী কর্মচারি অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে হাজার হাজার দিনার উপার্জন করেছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!