কানাডায় ইমিগ্রেশনের নামে প্রতারণা, সতর্কতার পরামর্শ

যুগান্তর প্রতিবেদন

কানাডায় ইমিগ্রেশনের নামে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে একটি চক্র। মনগড়া ভুয়া তথ্য দিয়ে ওয়ার্ক পারমিট, স্টুডেন্ট ভিসা, চাকরি পাইয়ে দেয়া বা ইমিগ্রেশন করিয়ে দেয়ার কথা বলে এরা সাধারণ মানুষকে প্রলুব্দ করেছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন কানাডার ইমিগ্রেশন বিষয়ক তিন বিশেষজ্ঞ।

তারা জনসাধারণকে প্রতারণার হাত থেকে বাঁচাতে ইমিগ্রেশন বিষয়ে সঠিত তথ্য তুলে ধরার তাগিদ দিয়ে বলেন, ইমিগ্রেশনের সুযোগ-সুবিধা সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের আরও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার।

কানাডার বাংলা পত্রিকা নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক ‘শওগাত আলী সাগরের সঞ্চালানায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রচারিত ‘শওগাত আলী সাগর লাইভে’ তারা এই মত দেন। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ‘কানাডা ইমিগ্রেশনের মিথগুলো’ শিরোনামে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনাকালে বক্তারা কানাডায় ইমিগ্রেশনের যে কোনো তথ্যের জন্য কানাডা সরকারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের (https://www.canada.ca/en/services/immigration-citizenship.html) ওপর নির্ভর করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে তারা কানাডা সরকারের অনুমোদিত বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয় এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইমিগ্রেশন বিষয়ক কোনো সেবা না নেয়ার পরামর্শ দেন।

Travelion – Mobile

আলোচনায় অংশ নিয়ে এডুকেশন কনসাল্টিং এজেন্ট কায়েসুর রহমান বলেন, সন্তানদের কানাডায় ভর্তি করা হলেই বাবা মা কানাডায় চলে এসে কাজ শুরু করতে পারেন এমনকি ইমিগ্রেশন পেয়ে যাবেন- এমন একটি কথা বাংলাদেশের প্রচার পেয়েছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য। বিদেশি শিক্ষার্থীরা কানাডায় পড়াশোনা শেষ করে নির্দিষ্ট শর্তাবলী পূরণ করা সাপেক্ষে ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থীর বাবা মা এসে কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট পান না।

কানাডায় শিক্ষার্থী হিসেবে আসতে আগ্রহীদের আগেভাগে প্রয়োজনীয় হোমওয়ার্ক করার পরামর্শ দিয়ে কায়েসুর রহমান বলেন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র ভর্তির বিভিন্ন নিয়মাবলী আছে, ভিসার জন্য আলাদা শর্তাবলী আছে। এগুলো সম্পর্কে যথাযথ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ না করলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে।

ইউটিউব ভিডিও কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ সিদ্দিকুর রহমান ওয়ার্ক পারমিট এবং কানাডায় কাজ পাইয়ে দেয়ার নামে প্রতারণার নানা চিত্র তুলে ধরে বলেন, কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান চাইলেই বিদেশ থেকে কর্মী নিয়ে আসতে পারে না। ‘কানাডায় পাওয়া যাচ্ছে না’ এটি প্রমাণ করতে পারার পরই সরকার বিদেশ থেকে লোক আনার অনুমতি দেয়। কাজেই যারা ওয়ার্ক পারমিট দেয়ার কথা বলে বা ওয়ার্ক পারমিট পাইয়ে দেয়- তারা আসলে ভুয়া কাগজ দিয়ে প্রতারণা করে।

ইমিগ্রেশন নিউজ ২৪ ডটকমের সম্পাদক ও প্রকাশক উজ্জল দাশ বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কাজ করতে যাওয়ার সাথে অনেকে কানাডায় ইমিগ্রেশনকে মিলিয়ে ফেলেন। কোনো দালাল বা আইনজীবী, ইমিগ্রেশন কনসালট্যান্ট কাউকে কানাডায় ভিসা বা ইমিগ্রেশন করিয়ে দিতে পারে না- এটি অনেকেই বিবেচনায় রাখেন না। ফলে প্রতারণার সুযোগ তৈরি হয়।

নতুনদেশের প্রধান সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, কানাডয় ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, কানাডার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। আমরা চাই বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি ইমিগ্র্যান্ট এবং শিক্ষার্থী কানাডায় আসুক। সে কারণেই প্রতারণঅ এবং ভুল প্রচারণার বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে।

সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর বলেন, বিশ্বায়নের এই যুগে তথ্য যাচাই বাচাই করা মোটেও কঠিন কোনো কাজ না। গণমাধ্যমের জন্য সেটি আরও সহজ। পত্রিকাগুলো এখন প্রবাস থেকে অনেক ফ্রিল্যান্সারদের লেখা প্রকাশ করে। সেই সব লেখার তথ্যের বিশেষ করে ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত লেখার তথ্যের যথার্থতা সম্পর্কে বাড়তি মনোযোগ না দিলে ইমিগ্রেশনকে ঘিরে গড়ে ওঠা প্রতারক চক্র সুবিধা নিতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন।
প্রতিবেদক : রাজীব আহসান, কানাডা

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!