করোনাভাইরাস আতংকে বন্ধ সপ্তাচার্য চীনের মহাপ্রাচীর

চীনে শুক্রবার পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত অন্তত ১২৮৭ জন। এর মধ্যে ২৩৭ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জ্বর-কাশি ও শ্বাসকষ্টের সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি হওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য যুদ্ধকালীন তত্‍পরতায় একটি হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে।

করোনাভাইরাসের মহামারী রূপের হুমকি, ঝুঁকি আর আতংকের মধ্যে শনিবার থেকে শুরু হয়েছে চীনা নববর্ষ। নববর্ষের উদ্‌যাপন তো দূরের কথা, সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের পাশাপাশি ১৩টি শহরকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার।

গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে এই ১৩টি শহরের ৩ কোটি বাসিন্দার। অবস্থার ভয়াবহতা এতটাই যে নববর্ষেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বিখ্যাত চীনের প্রাচীরের একাংশ। বেজিংয়ের বার্ডস নেস্ট স্টেডিয়াম বন্ধ করা হয়েছে এদিন। বন্ধ রাখা হচ্ছে বেজিংয়ে মিং রাজবংশের সমাধি, ইনশান প্যাগোডা এবং সাংহাইয়ের ডিজনিল্যান্ডও।

Travelion – Mobile

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান তেদরোস আধানোম ঘেবরেইয়েসুস অবশ্য বলেছেন,‘চীনের অবস্থা নিশ্চিতভাবেই খারাপ। তবে পরিস্থিতি এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্যের পক্ষে ‘জরুরি অবস্থা’ হয়ে ওঠেনি।’

উহানের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা স্বীকার করে নিয়েছেন, সেখানে হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বেজিংয়ের সরকারি সূত্রে মাত্র ৮০০ জনের আক্রান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করা হলেও বাস্তব ছবিটা হল, এত লোক হাসপাতালে ভিড় করছেন যে, তাঁদের চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের সন্দেহ, উহান শহরের সি-ফুড ও মাছ-মাংসের বাজার থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে। এই বাজারে বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর মাংস বেআইনিভাবে বিক্রি হত। একটি সূত্রের আবার দাবি, হুবেই প্রদেশের বাসিন্দাদের অনেকেই যেহেতু চীনা কালাচ এবংগোখরোর মাংস খান, সেখান থেকেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটে থাকতে পারে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠে আসছে উহানের হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া অসহায় রোগীদের ছবি-ভিডিয়ো। ফলে শুক্রবার সরকার নির্দেশ জারি করেছে, জ্বরে ভোগা কোনও রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরানো চলবে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৫,০০০ বর্গমিটার এলাকার উপর ১০০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল বানাচ্ছে সরকার। দশ দিনের মধ্যেই তা তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা।

৩১ ডিসেম্বর এই ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে হুবেই প্রদেশের বন্দর-শহর উহানে। ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষের বাসভূমি উহান ভাইরাসের আতঙ্ক এবং প্রশাসনিক কড়াকড়ির ফলে কার্যত ভূতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। উহান-সহ ১৩টি শহরকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে বেজিং। এই শহরগুলোতে বিমান ওঠানামা ও ট্রেন চলাচল তো বন্ধ হয়েছেই, এমনকী বাসিন্দাদের খুব প্রয়োজন ছাড়া শহর ছেড়ে বের হতেও নিষেধ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার উহানে এ নিয়ে সরকারি ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরে একই নির্দেশ আসে কাছের শহর হুয়াংগ্যাংয়ের বাসিন্দাদের কাছেও। মধ্যরাতে ট্রেন-সহ সরকারি পরিবহণ তো বন্ধ করে দেওয়া হয়ই, বন্ধ সিনেমা হল, সাইবার কাফে, বাজার-দোকানও। ইঝৌ শহরেও ট্রেন-বিমানের পাশাপাশি ফেরি, বাস চলাচলও বন্ধ। এই শহরগুলোর স্টেশনে নামানো হয়েছে সেনা-পুলিশ।

২০০৩-এ চিনে সার্স ভাইরাসের মারণ হানার সময়ে চীনের মূল ভূখণ্ডে ৩৪৯ জন আর হংকংয়ে ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। সেই সার্স ভাইরাসের সঙ্গে যথেষ্ট মিল রয়েছে এই নভেল করোনাভাইরাসের (২০১৯-এনসিওভি)।

বেশ কিছু বহুজাতিক কোম্পানি এই ভাইরাসের টিকা বের করার চেষ্টা করছে, কিন্তু তার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের এখনও বহু দেরি। ফলে আতঙ্ক কাটছে না চীনসহ সারা দুনিয়ায়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!