ওমানে ব্যবহৃত করোনার টিকা নিরাপদ, গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি

ওমানের করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণকারী ব্যক্তিদের কাছ থেকে কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। কিছু দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সুরক্ষা এবং সাময়িক স্থগিতাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমে উদ্বেগ উত্থাপিত হওয়ার পরে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার এক বিবৃতি তথ্য জানিয়েছে।

বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, “ভ্যাকসিনগুলি থেকে কোনও গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়নি। সুলতানাতে বর্তমানে ব্যবহৃত ভ্যাকসিনগুলির কার্যকারিতা এবং সুরক্ষার দিক থেকে নির্বাচনে কোনও পক্ষপাতিত্ব নেই। একটি বিশেষ প্রযুক্তিগত দল সবদিক থেকে অধ্যয়ন ও পর্যবেক্ষণ করে ভ্যাকসিনগুলি নির্বাচন করেছে । দলটি বিশ্বের খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক ও মেডিকেল জার্নালগুলিতে প্রকাশিত গবেষণার উপর ভিত্তি করে ভ্যাকসিনগুলো অধ্যয়ন করে, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলির জারি করা সুপারিশগুলিও অনুসরণ করে।

মন্ত্রণালয় বলেছে,”ভ্যাকসিন নেয়ার পর মানুষের শরীরে রক্ত ​​জমাট বাঁধার কয়েকটি ঘটনা তদন্ত করার লক্ষ্যেই সংশ্লিষ্ট দেশগুলির স্থগিতাদেশ ছিল একটি সতর্কতা ব্যবস্থা । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি জানিয়েছে যে, শরীরে রক্ত ​​জমাট বাঁধা এবং দেশগুলিতে ভ্যাকসিন গ্রহণের মধ্যে সরাসরি কোনও যোগসূত্র নেই। প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য তদন্ত অব্যাহত রয়েছে”।

Travelion – Mobile

শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনভাইরাসের (কোভিড-১৯) টিকা নেওয়ার সঙ্গে মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো যোগসূত্র নেই নিশ্চয়তা দিয়ে টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য সব দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এই টিকায় মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। টিকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কয়েকটি দেশের বিরতি দেওয়ার বিষয়টি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ। প্রস্তুতকারক অ্যাস্ট্রাজেনেকাও শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এক কোটির বেশি মানুষের নিরাপত্তা তথ্যের বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে কোনো নির্দিষ্ট গ্রুপ, লিঙ্গ, ব্যাচ বা দেশে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ার কোনো প্রমাণ নেই। প্রকৃতপক্ষে সাধারণ ঘটনার তুলনায় টিকা নেওয়ার পর পর্যবেক্ষণে এ ধরনের ঘটনায় সংখ্যা খুব কম।’

আরও পড়তে পারেন : অক্সফোর্ডের টিকায় রক্ত জমাট বাঁধার প্রমাণ মেলেনি

ওমানের নাগরিক ও প্রবাসী সকল গোষ্ঠীকে টিকা নিতে এবং গুজবে মনোযোগ না দেওয়া এবং নির্ভরযোগ্য অফিসিয়াল উত্সগুলির কাছ থেকে তথ্য নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে যে, ওমানে কোনও ভ্যাকসিন ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় না, যতক্ষণ না এটি মূল দেশ বা স্বীকৃত সংশ্রিষ্ট আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত না হয়।

এদিকে জিসিসির অপর দেশ কুয়েতও গতকাল জানিয়েছে তারা টিকা দেওয়ার কর্মসূচিতে ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’ ভ্যাকসিন ব্যবহার চালিয়ে যাবে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে, এ পর্যন্ত কুয়েতে যারা নিয়েছেন তাদের সকলের মধ্যে কোনও অপ্রত্যাশিত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বা ঝুঁকি সনাক্ত করা যায়নি।

টিকা নেওয়ার পর কিছু মানুষের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা দেখা গেলে গত সপ্তাহে ডেনমার্ক, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের টিকার ব্যবহার স্থগিত করে। ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সির তথ্য অনুযায়ী, টিকা নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইউরোপে ৩০ টি রক্ত জমাট বাধার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে বলেছেন, রক্ত ​​জমাট বাঁধার জন্য টিকা দায়ী এমন কোনো প্রমাণ নেই। বর্তমানে সংস্থার বিশেষজ্ঞ পরামর্শক কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করছে। তাইএখনই এ টিকা বন্ধ করার কোনো কারণ তারা দেখছেন না। সংস্থাটি বলছে, টিকার যে সুবিধা, তা ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি।

আগের খবর: ওমানে ভ্যাট আরোপের প্রস্তুতি সম্পন্ন, বছরে আয় ৪০ কোটি রিয়াল

যুক্তরাজ্যের মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির (এমএইচআরএ) পক্ষ থেকেও মানুষকে টিকা গ্রহণ চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সংস্থাটি বলেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে রক্তে জমাট বাধার কোনো প্রমাণ নেই। রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা প্রাকৃতিকভাবেই ঘটতে পারে। এটা অপরিচিত কোনো ঘটনা নয়। এর আগে জার্মানির একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তাও টিকাটিকে নিরাপদ বলে মন্তব্য করে বলেন, জার্মানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। ফ্রান্স, পোল্যান্ড এবং নাইজেরিয়া জানিয়েছে যে, তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকা ডোজ ব্যবহার চালিয়ে যাবেন।

প্রকৃতপক্ষে, স্থগিতাদেশ জারি করা প্রায় প্রতিটি দেশই স্বীকার করেছে যে ‘অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা’ ভ্যাকসিনে রক্ত ​​জমাট বাঁধার কোনও প্রমাণ নেই। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, বর্তমানে যারা COVID-19 ভ্যাকসিন গ্রহণ করছেন তাদের অনেকের অন্য স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে, যা তাদের রক্ত ​​জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!