ওমানে করোনায় প্রথম মৃত্যুবরণকারীর ছেলের আকুতি

১ এপ্রিল ওমানে প্রথম করোনাভাইরাস(কোভিড-১৯) মারা যান ৭২ বছর বয়সী এক নাগরিক। এরপর থেকে তার পরিবারের সদস্যদের করোনা আক্রান্ত হওয়া নিয়ে উঠেছে নানান গুঞ্জন ও গুজব, যাতে সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছে পরিবারটি।

এমন ঘটনার শিকার হওয়ার পরিবার নিয়ে গুজব না রটাতে সকলকে আহ্বান জানিয়েছেন নিহতের ছোট ছেলে হামাদ আল বালুশি। তিনি তার পরিবারের বাকিদের মধ্যে রোগ সংক্রমিত হয়েছে এমন গুজব না ছড়ানোর জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।

টাইমস অব ওমানের প্রতিবেদনে বলা হয়, হামাদ আল বালুশি ও তার মা দুজনই নিজ ঘরে কোয়ারেন্টাইনে আছে। তার পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই ও পাঁচ বোন এবং তাদের সব সন্তান সন্ততিও ২১ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন হামাদ।

Travelion – Mobile

টাইমস অব ওমানকে হামাদ বলেন, “আমরা সবাই ঠিক আছি, আর আমাদের পরিবারে কারও করোভাইরাস পজিটিভ মিলেনি। দয়া করে আমার পরিবার নিয়ে এসব গুজব বন্ধ করুন। আমরা যেই এই আছি-মাতরাহ এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে গুজব রটেছে যা আমার প্রবাসী প্রতিবেশীদের কাছ থেকে আমরা শুনেছি। তারা আমাদের বলেছে আমরা আমাদের পিতার সাথে সংস্পর্শে আসার কারণে করোভাইরাস আক্রান্ত হয়েছি। ”

তিনি আরো বলেন, “আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, আমাদের পিতার মৃত্যুর কারণে। আমাদের পরিবারের সবাই শোকে পাথর যে আমরা আমাদের পিতার জানাযা এমনকি কবর দেওয়ার সময়ও উপস্থিত থাকতে পারিনি। অথচ আমাদের এমন কঠিন সময়ে মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে যা আমাদের শোকের সাথে দুঃখকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। তাই দয়া করে এইসব গুজব প্রচার বন্ধ করুন এবং আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন।”

রাজধানী মাস্কাটের করােনাভাইরাসের ক্লাস্টার জোন মাতরায় পরিবার নিয়ে বাস করতেন ওমানে করোনায় প্রথম শিকার হামাদের বাবা। তিনি মাতরাহ সউকে রৌপ্য পুরাকীর্তি ও গহনা বিক্রি করে এমন একটি দোকান চালাতেন। তিনি প্রতিদিন সকাল আটটায় তাঁর দোকানটি খুলতেন এবং ১-৪ টা বিরতি নিয়ে রাত ৮ টায় এটি বন্ধ করতেন। তার ৪ ছেলে দোকান চালাতে সাহায্য করতেন।

“যখন আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম, তখন চিকিত্সকরা ভেবেছিলেন যে আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে তিনি ভুগছেন এবং তাকে কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি যখন দেশে ফিরে এসেছিলেন, তখন তার অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে। তিন মাস আগে আমার বাবাও পিত্তথলির অপারেশন করেছিলেন, কারণ তিনি উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন, তাই সকলেই ভেবেছিলেন যে তিনি সেই অস্ত্রোপচারের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ভুগছেন।”

তারপরে ছেলে-মেয়েরা তাদের বাবাকে একটি বেসরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়, যেখানে ডাক্তাররা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে এবং করোনাভাইরাস সন্দেহজনক দেখা দেওয়া তাকে আল নাহদা হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলেন, পরে তাকে রয়েল হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়। রয়্যাল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দু’দিন পরে, কর্মকর্তারা পরিবারটিকে জানিয়েছিলেন যে তাঁর করোনাভাইরাস হয়েছে।

হামাদ বলেন, “যখন আমার পিতা হাসপাতালে ভর্তি হলেন তার দুই দিন পর ডাক্তাররা আমাদের মধ্যে যারা তার সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের সাথে সাথে কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার নির্দেশ দেন।

তিনি আরও বলেন, “হাসপাতাল থেকে আমাকে আমার বাবার মৃত্যুর খবর আমাকে ফোনে জানানো হয়েছিল। যদিও আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমার বাবা মারা গেছেন,কারণ আমি তাকে অনেক ভালবাসি। ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত সুস্থ করে তুলতে পারেননি।”

“আমাকে আফসোস কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল যে এমন সময়ে আমি তার পাশে থাকতে অক্ষম এবং আমার কিছু করার থাকলেও তার জন্য কিছুই করতে পারিনি। আমি আমার পিতার মরদেহ পর্যন্ত গ্রহণ করতে পারিনি এবং তার দাফনের সময় আমি তার কাছে যেতে পারিনি কারণ তখন আমি হোম কোয়ারেন্টাইনে ছিলাম যা মেনে নেয়া ভয়ংকর দুঃখের। আমি তার মুখ শেষবারের মতও দেখতে পারিনি। আমার বাবার কণ্ঠস্বর, মুখ ও হাসির স্মৃতি কখনও আমি ভুলতে পারব না,” হামাদ যোগ করেন।

অন্য কারও জীবনে যাতে এই করোভাইরাসের আভিশাপ নেমে না আসে সেজন্য হামাদ আল বালুশি দেশের সবাইকে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে অনুরোধ করেন।

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, “আমরা সুপ্রিম কমিটি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সব ধরনের নির্দেশনা মেনে চলেছি। এমনকি আমরা নামাজের জন্যও ঘর থেকে বের হইনি। আমরা মহামান্যসুলতানের সকল নির্দেশনাকে সম্মান করেছি তাই সকল নাগরিকের উচিত এই পরিস্থিতিতে আমাদের মত নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!