ই-পাসপোর্ট যুগে বাংলাদেশ, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম
ই-পাসপোর্ট (ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট) যুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই প্রথম ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে।
আজ বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বহুল প্রতীক্ষিত ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট পরিষেবা ও স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে গত ১৯ জানুয়ারি ই-পাসপোর্ট উদ্বোধন উপলক্ষে ইমিগ্রেশন এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের (ডিআইপি) কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর ছবি তুলে নিয়ে যান। আজকের অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধানমন্ত্রীকে ই-পাসপোর্ট হস্তান্তর করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন,’ই-পাসপোর্ট জাতির জন্য মুজিববর্ষের একটি উপহার। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১১৮টি দেশে ই -পাসপোর্ট চালু হয়েছে। ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করল।’
তিনি বলেন, ‘আধুনিক প্রযুক্তির জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষিত জাতি হিসেবে বাংলাদেশ যেন গড়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে উচ্চমর্যাদায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই সর্বপ্রথম ই-পাসপোর্ট চালু করতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ৯৬ সাল থেকে আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন শেষ করতে পারিনি। পরে ক্ষমতায় এসে সেগুলো করি। আজকে প্রায় সমগ্র বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা দিতে সক্ষম হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ পাসপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা এবং দেশের মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া বিদেশে বাংলাদেশিরা এবং বাংলাদেশে বিদেশিরা হয়রানির শিকার হবে না। তাছাড়া পাসপোর্ট পেতে আগের মতো কেউ ধোকায় পড়বে না।
অনুষ্ঠানে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদ স্বাগত বক্তব্য দেন এবং ই-পাসপোর্টের প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান খান অনুষ্ঠানে একটি তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন।।
ডিআইপি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারবেন সবাই। প্রাথমিকভাবে উত্তরা, যাত্রাবাড়ী ও আগারগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে ই-পাসপোর্ট সেবা শুরু হবে।
পর্যায়ক্রমে ৭২টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিস এবং ৮০টি বিদেশি মিশনে চালু করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, জার্মান সংস্থা ভেরিডোস জিএমবিএইচ দেশে ই-পাসপোর্ট ও ই-গেটে কাজ করছে।
এ জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ছয়টি ই-গেট স্থাপন করা হয়েছে। তিনটি বিদেশ থেকে আগতরা ব্যবহার করবেন। বাকি তিনটি যাঁরা বিদেশে যাবেন তাঁদের জন্য। পর্যায়ক্রমে দেশের বিমান ও স্থলবন্দরে ৫০টি ই-গেট স্থাপন করা হবে। ইতিমধ্যে ই-পাসপোর্টের ২০ লাখ বই আনা হয়েছে। তা দিয়ে আগামী ১০ মাস নিশ্চিন্তে ই-পাসপোর্ট দেওয়া যাবে।
আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইসিএও) মতে, বর্তমানে ই-পাসপোর্ট ইস্যুকারী ১০০টিরও বেশি দেশ, বেসরকারি সংস্থা রয়েছে। বিশ্বে ৪৯০ মিলিয়ন ই-পাসপোর্টধারী আছেন।
প্রকল্পের তথ্যানুযায়ী, ‘বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট এবং স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার’ প্রকল্পটি ৪ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ডিআইপি পুরো প্রকল্পটি সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। ১০ বছরে মোট ৩০ মিলিয়ন পাসপোর্ট বিতরণ করা হবে। ই-পাসপোর্ট সেবার সঙ্গে সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে অভিবাসনের আনুষ্ঠানিকতারও পুরো প্রক্রিয়া শেষ হবে। জার্মানিতে দুই মিলিয়ন ই-পাসপোর্ট তৈরি করা হবে। যারা প্রথমে আবেদন করবেন, তাদের পাসপোর্ট জার্মানি থেকে তৈরি করা হবে। ই-পাসপোর্টের মেয়াদ পাঁচ এবং ১০ বছরের জন্য হবে।
২০১৮ সালের ১৯ জুলাই ডিআইপি এবং জার্মানি ভেরিডোস জিএমবিএইচ সংস্থা ইলেকট্রনিক পাসপোর্টের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে।
আগের খবর :
বুধবার চালু হচ্ছে দশ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট
দশ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট চালু হচ্ছে ২২ জানুয়ারি