যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি গর্ভবতী নারীর প্রবেশ নিষেধ!

গর্ভবতী নারীদের সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ থেকে নিরস্ত করতে নতুন বিধিগুলি জারি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর ।

আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর করা হয় “বার্থ ট্যুরিজম” নামে অভিহিত এই বিধি বা নীতিটি।

নয়া নিয়মে মার্কিন ভিজিট ভিসার জন্য আবেদন করা গর্ভবতী নারীরা মার্কিন মাটিতে জন্ম দেওয়া ছাড়া ভ্রমণের অন্য নির্দিষ্ট। কারণের প্রমাণ দেখাতে হবে। সে হিসেবে দেশটিতে গর্ভবতী নারীর প্রবেশাধিকার রহিত হয়ে গেল।

Travelion – Mobile

যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষার স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। তবে ‘বার্থ ট্যুরিজম’ ঠেকাতে ভিসার জন্য আবেদন করা নারীদের প্রেগন্যান্সি টেস্ট করানোর কথা এখনও পর্যন্ত বলা হয়নি।

সিএনএন বলছে, এই নীতির ফলে বিদেশী নাগরিকদের তাদের সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে মার্কিন মাটিতে জন্ম দেওয়া আরও বেশি কষ্টসাধ্য করে তুলবে, যা সাধারণত “বার্থ টুরিজম” নামে পরিচিত।

বুধবার স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে সারা বিশ্বের মার্কিন দূতাবাসগুলিতে নতুন নিয়ম কার্যকরের আদেশ দেওয়া হয়েছে। হোয়াইট হাউস বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে যে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট “জন্মগত পর্যটনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বিদেশীদের স্থায়ী দর্শনার্থী (বি -১ / বি -২) ভিসা দেবে না।”

শুক্রবার প্রকাশিত স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিধিবিধান অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণকারীদের “প্রাথমিক উদ্দেশ্য” যদি এ দেশের মাটিতে সন্তান প্রসবের মাধ্যমে মার্কিন নাগরিকত্ব প্রাপ্তির বিষয় হয় তবে তাদের অস্থায়ী ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হবে। তবে এই বিধি ৩৯ টি দেশের জন্য প্রযোজ্য নয় – যার বেশিরভাগ ইউরোপে রয়েছে – যারা ভিসামুক্ত কর্মসূচির অংশ, বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সাথে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন একজন কর্মকর্তা।

বার্থ টুরিজম হ’ল জন্ম দেওয়ার উদ্দেশ্যে অন্য দেশে ভ্রমণের রীতি। এর মূলে রয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশটি নবজাত সন্তানের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া । যদি সন্তানের নাগরিকত্ব তাদের পিতামাতাকে দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস (নাগরিকত্ব) করতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে করা হয় তবে এ জাতীয় শিশুটিকে কখনও কখনও “অ্যাঙ্কর বেবি” বলা হয়। এ ছাড়াও অন্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে পাবলিক স্কুল পড়াশোনা, স্বাস্থ্যসেবা, ভবিষ্যতে পিতামাতার জন্য স্পনসরশিপ। এমনকি চীনের দুই সন্তানের নীতিমালাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বার্থ টুরিজমের জনপ্রিয় গন্তব্যগুলির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরেকটি হংকং, যেখানে মূল ভূখণ্ডের কিছু চীনা নাগরিক তাদের সন্তানের আবাসের অধিকার অর্জনের জন্ম দেওয়ার জন্য ভ্রমণ করেন। তবে যে সব দেশের সংবিধানের জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ারও সুযোগ রাখা হয়নি সেখানে এই রমণের রীতি চল নেই। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

আমেরিকা তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, সে দেশের মাটিতে জন্মানো প্রত্যেকেই মার্কিন নাগরিক। সেই কারণে তাবৎ বিশ্বের অনেকেই পরিকল্পনা করে আমেরিকায় এসে সেখানে সন্তানের জন্ম দেয় বলে দাবি মার্কিন প্রশাসনের।

মার্কিন অভিবাসন দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০১৭-র মধ্যে ‘বার্থ ট্যুরিজম’-এর কারণে সে দেশে ৩৩,০০০ শিশুর জন্ম হয়েছে।

এমনকি এর পেছনে বড় বড় চক্রও কাজ করে। যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানের জন্ম দিতে এই চক্রকে ১০০,০০০ ডলার দিতে হয় বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। বিগত কয়েকবছর ধরে অভিভাবসন ঠেকাতে এসব চক্রকে রুখতে এফবিআইসহ মার্কিন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তৎপর রয়েছে। ধরাও পড়েছে অনেকে।

তাই এবার নিজ দেশে অভিবাসন ঠেকাতে আরও তত্‍পর হয়ে উঠেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘বার্থ ট্যুরিজম’-এর ওপর খড়গহস্ত হয়ে উঠেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ভিন দেশের গর্ভবতী নারীদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে কড়াকড়ি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অন্যান্য মার্কিন স্বজন থাকার ভিত্তিতে ভিসা পাওয়ার প্রথাটি “চেইন মাইগ্রেশন” নামে পরিচিত, যার কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!