আমিরাতে ফেসবুক লাইভে এসে বাংলাদেশির আত্মহত্যা, বন্ধুকে দায়ী

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করেছেন এক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী। তার নাম খায়রুল বশর রানা (৫০)। মৃত্যুর জন্য তিনি তার ঘনিষ্ট বন্ধু আরেক প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রফিক উদ্দিনকে দায়ী করে গেছেন।

গতকাল সোমবার (২২ আগস্ট) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে আজমান শহরের লাকী রাউন্ড এলাকার ভাড়া বাসা থেকে ফেসবুক লাইভে থাকা অবাস্থায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন খায়রুল বশর রানা ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রানার সহকর্মী ও রুমমেট গিয়াস উদ্দিন জানান,”ফেসবুক লাইভ রানার আত্মহত্যার প্রস্তুতির কথা জেনে আমরা শংকিত হয়ে পড়ি। তখনই ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। কিন্তু সে কারোও কল ধরেনি। দ্রুত বাসায় এসে দরজা ভেঙে ঢুকে দেখি গলায় ফাঁস লাগানো তার লাশ ঝুলছে। মুখ দিয়ে লালা পড়ছে ৷ পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে রানার লাশ নিয়ে যায়৷”

Travelion – Mobile

আমিরাত সময় ৪.৫৯ মিনিটে খায়রুল বশর রানা তার ফেসবুক আইডি ‘কেভি রানা’ থেকে লাইভে আসেন। গলায় দড়ি লাগানো অবস্থায় কান্না জড়িত কন্ঠে তাকে বলতে শোনা যায়,”সুয়াবিলের রফিক আমার জীবন নষ্ট করে ফেলেছে..আমাকে বরবাদ করে দিয়েছে। আমার দোকান খেয়ে ফেলেছে। আমার গাড়ি খেয়ে ফেলেছে। রফিকের জন্য আজ আমি সুইসাইড করছি । আপনারা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন……।” এরপর তিনি কলেমা পড়ে দড়িতে ঝুলে পড়েন। এই দৃশ্য ক্যামেরার ফ্রেমে আসে নি। শুধু কলেমার উচ্চারণ শোনা যায়।

খায়রুল বশর রানা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ধর্মপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম বদিউল আলমের ছেলে। দেশে তার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, ১৮ বছর বয়সী মেয়ে ও ১০ বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে। বন্ধু রফিক উদ্দিনেরও গ্রামের বাড়ি একই উপজেলার সুয়াবিল ইউনিয়নে।

রানার ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে দেখা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে নানা পোস্টের মাধ্যমে ঘনিষ্ট বন্ধু রফিককে দায়ী করে আত্মহত্যার ঘোষণা দিয়ে আসছিলেন বশর।

পোস্টগুলো থেকে জানা যায়, করোনা মহামরিতে প্রবাসে অর্থ সংকটে পড়েন মোবাইল ফোন ও ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান মালিক খায়রুল বশর রানা। ঋণ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও দেশে গ্রামের বাড়িতে থাকা মা অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা খরচে যোগাড়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে নিজের দোকানটি বিক্রি করে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বন্ধু রফিক দোকানটি কিনে নেন।

পোস্টে রানার দাবি, রফিক প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তাকে সুকৌশলে দোকানের অংশীদার রেখে প্রাপ্য অর্থ পরিশোধে তালবাহানা করে। উপরন্ত তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। ঋণ পরিশোধ, মায়ের চিকিৎসা আর পরিবারের চালানোর কোন পথ খুঁজে না পেয়ে তিনি আত্মহননের পথ বেঁচে নেন।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে নিহত রানার বন্ধু প্রবাসী মোহাম্মদ রফিক উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে রফিক উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পোস্টে তিনি লিখেন,”দোকান বিক্রি করলে এই টাকাগুলো সমবন্টন হওয়ার কথা থাকলেও বশরকে কিছু টাকা বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আমাদের আরবাব। এতে আমি সম্মতিও জানিয়েছিলাম তারপরও কেন এমন হলো আল্লাহূ আলম। আর এই অল্প টাকার জন্য আত্মহত্যার কি প্রয়োজন ছিল? যা হতো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে হতে পারতো।”

“দোকান দোকানের জায়গায় আছে, এই দোকানের সাথে আরো যারা ইনভল্ব আছে তারাও জীবিত আছে। কিন্তূ সে আমাকে কেন দোষী করলো একমাত্র আল্লাহই মালুম। এর আগের আরও যা কিছু হিসেবে হয়েছে তা দোকানের ডাইরিতে লিপিবদ্ধ আছে আল্লাহ চাইলে সেগুলো আপনাদের সামনে পেশ করবো,” রফিক উদ্দিন আরও লিখেন।

আত্মহননের এই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন আমিরাতপ্রবাসী বাংলাদেশিরা। তারা শোক ও নিন্দা জানিয়ে এই অপমৃত্যুর দায়ীদের শাস্তির দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) ফকির মনোয়ার হোসেন বলেন, বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। রিপোর্ট আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না। তবে আমরা প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠিনকতা শেষে মরদেহ দ্রুত দেশের পাঠানোর ব্যবস্থা নেব।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!