‘অস্বাভাবিক’ বিমান ভাড়া, হিমশিম খাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের নানা দেশের গন্তব্যের আকাশপথের ভাড়া বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইট ভাড়া ‘অস্বাভাবিক’ হারে বেড়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন শত শত সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশি।

আরব আমিরাত থেকে সপ্তাহ খানেক আগে দেশে ছুটিতে আসা প্রবাসী বাংলাদেশি মোবিনুল হক মানিক জানান, দুবাই থেকে টিকিট কাটলে যত খরচ হয়, ঢাকা থেকে টিকিট কাটলে তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ হয়।

‘ফ্লাইট ভাড়া এতোটাই বেড়েছে যে দেশে আসা-যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে’, বলেন তিনি।

Travelion – Mobile

বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করেন। যাদের বেশিভাগই দেশ থেকে সহায়-সম্বল বিক্রি কিংবা ঋণ নিয়ে যেখানে যান কাজের জন্য। বিমান ভাড়ার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ছে যারা প্রথমবার যারা কাজের জন্য মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন তারা। বাড়তি বিমান ভাড়া বহন করা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করেন সুমাইয়া ইসলাম বলছিলেন, “নিম্ন আয়ের মানুষ যারা বিদেশে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যান তাদের তো ইনকাম বাড়েনি। কিন্তু তাদেরকে এই বাড়তি বিমান ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এটা তাদের উপর আর্থিক ও মানসিক চাপ তৈরি করছে,” ।

আরও পড়তে পারেন : বিমানবন্দরে ৩ শতাধিক প্রবাসীর সর্বস্ব লুট : মূলহোতা আমিরসহ গ্রেপ্তার ৪

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক বিভিন্ন এয়ারলাইন্স যেমন ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে তেমনি বাংলাদেশের কয়েকটি এয়ারলাইন্সও ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে ভাড়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি তফাৎ নেই। গত ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ভাড়া আরো বেশি ছিল।

যেটি কোভিড -এর আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশি ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্স। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র কামরুল হাসান বলছিলেন, ভাড়া বেড়ে যাবার একটি কারণ হচ্ছে জেট ফুয়েলের দাম একশ পঞ্চাশ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

কাতার এয়ারওয়েজ
কাতার এয়ারওয়েজ

তিনি বলেন, বিমান পরিচালনার ক্ষেত্রে জেট ফুয়েলের দাম সরাসরি জড়িত থাকে। এর ফলে ভাড়া বাড়াতে হয়েছে। তাছাড়া কোভিড পরবর্তী সময়ে ওয়ানওয়ে ট্রাফিক বেড়েছে। যাওয়ার সময় যাত্রী বেশি থাকলেও ফিরে আসার সময় যাত্রী অনেক কম থাকে।

ফ্লাইট পরিচালনা ব্যয় ভারসাম্য আনার জন্য ভাড়া বাড়াতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মি. হাসান।

অতি মুনাফার প্রবণতা

মধ্যপ্রাচ্যগামী বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী তাদের টিকিট কাটেন ট্রাভেল এজেন্টদের মাধ্যমে। তারা বলছেন, বিমান ভাড়া বিশ্বজুড়েই বেড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যতটা বেড়েছে তাতে তারা অবাক হচ্ছেন।

ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন এটাব-এর নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মুজিবুল হক সরকার বলছেন, বাংলাদেশ থেকে চাহিদা বেড়েছে এটা সত্যি, কিন্তু সেটিকে কেন্দ্র করে অতি মুনাফার প্রবণতায় মেতে উঠেছে অনেক এয়ারলাইন্স।

এমিরেটস
এমিরেটস

“খেয়াল খুশি মতো চলার অবস্থা চলে আসছে। অধিক মুনাফা লাভ এবং খুব বেশি ব্যবসার করার কারণে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে, ” বলেন মি. সরকার।

তিনি বলেন, “ভাড়া কিছুটা বাড়তে পারে। সীমার অতিরিক্ত ভাড়া বাড়ানো তো কোন নিয়ম হতে পারে না।”

ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিভিন্ন সূত্র বলছে, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি একটি সংঘবদ্ধ চক্র এয়ারলাইন্সগুলো থেকে ব্যাপকহারে টিকিট বুকিং দিয়ে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রাখে।

ফলে এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে যোগসাজশে তাদের সুবিধা মতো দামও বাড়িয়ে নিতে পারে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করছে এয়ারলাইন্স এবং ট্রাভেল এজেন্সি সংগঠনের নেতারা।
প্রতিবেদন : আকবর হোসেন, বিবিসি বাংলা

আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজ যুক্ত হতে চাইলে এখানে ক্লিক করার অনুরোধ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!