অস্ট্রেলিয়ায় পাকিস্তানি ‘স্বামীর’ হাতে বাংলাদেশি তরুণী খুন

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে খুন হয়েছে ১৯ বছরের বাংলাদেশি তরুণী অরনিমা হায়াত অ্যানি। তার নিজ বাসভবনে খুন নিশ্চিত করে প্রমাণ নষ্ট করতে অ্যাসিডভর্তি বাথটাবে মৃতদেহ ফেলে রাখা হয়। তার ২১ বছর বয়সী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত স্বামীর বিরুদ্ধে এই খুনের অভিযোগ উঠেছে।

গত রোববার নিজ বাসভবনের বাথটাব থেকে ওই তরুণীর অ্যাসিডে গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত মতে, অরনিমা হায়াতকে আগে হত্যা করা হয়। পরে প্রমাণ নষ্ট করতে একটি বাথটাবে অ্যাসিডের মতো উচ্চ দাহ্য রাসায়নিক তরল ভর্তি করে সেখানে আরনিমার লাশ ফেলে রেখে চলে যান খুনি। হত্যাকাণ্ডের আগে মধ্যরাতে অ্যানির বাসা থেকে চিৎকারের আওয়াজ পান প্রতিবেশীরা। পরে পুলিশকে খবর দিলে বাসার দরজা ভেঙে ভিতরে গিয়ে তারা অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ হত্যার দায়ে ২১ বছর বয়সী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ান মিরাজ জাফর নামের এক তরুণকে আটক করা হয়েছে। ২০ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এ যুবক।

Travelion – Mobile

পারিবারিক কলহে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে এখনো নিহত তরুণী ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কোনো তথ্যই নিশ্চিত করেনি গোয়েন্দা সংস্থা। প্রেমের সম্পর্ক থেকে পরিবারের অমতে মাত্র কয়েক মাস আগে জাফর ও অ্যানি বিয়ে করে আলাদা থাকতে শুরু করেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার আইন অনুসারে, সন্তানের বয়স ১৮ বছর হওয়ার পর সে তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই নিজের পছন্দমতো সঙ্গী বেছে নিতে পারে।

নিহত তরুণীর বাবা আবু হায়াত ও মা মাহফুজা হায়াত সিডনির বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ল্যাকেম্বার সুপরিচিত ব্যাবসায়ী। তারা শিশু এনিকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। অত্যন্ত মেধাবী অ্যানি ওয়েস্টার্ন সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। এনির চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল বলে জানায় তার শোকার্ত বাবা।

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণীর অকাল মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমেছে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। ভিন্ন পরিবেশে বড় হওয়ায় বেশির ভাগ পরিবার তাদের
সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ড মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

 বাংলাদেশি তরুণী অরনিমা হায়াত অ্যানি (১৯) এবং তার ম্বামী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মিরাজ জাফর (২১)। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশি তরুণী অরনিমা হায়াত অ্যানি (১৯) এবং তার ম্বামী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মিরাজ জাফর (২১)। ছবি : সংগৃহীত

নিহত অ্যানির বাবা আবু হায়াত ও মা মাহাফুজা আক্তার ডেইলি মেইল ​​অস্ট্রেলিয়া’কে বলেছেন, তাদের মেয়েকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ভর্তি একটি বাথটাবে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এর বিচারের জন্য তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন।

বাবা আবু হায়াত বলেন, ‘যা করা হয়েছে তার জন্য আমি আমার মেয়ের মুখটি দেখতে পাচ্ছি না’।

অ্যানিকে হত্যার অভিযোগে আটক মেরাজ জাফরের (২০) এক স্কুলবন্ধু জানান, তিনি একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার ও একজন পাকিস্তানি অভিবাসীর ছেলে। পাবলিক স্কুলে যাওয়ার আগে তিনি মালেক ফাহদ ইসলামিক স্কুলে পড়তেন। স্কুলে তিনি পরিচিত ছিলেন একজন উদাসীন শিক্ষার্থী হিসেবে।

জানা যায়, অ্যানির বাবার সঙ্গে মেরাজের ২ দফায় তর্ক হয়। এরপর থেকে অ্যানি ও মেরাজ আলাদা বাস করতে শুরু করেন। এ সময়টাতে অ্যানি পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।

অ্যানির বাবা আবু হায়াত বলেন, ‘ওর (অ্যানি) বডিটা নষ্ট হয়ে গেছে। পুলিশ ওর বডিটা আইডেন্টিফাই করতে পারছে না। এ জন্য গোয়েন্দা পুলিশ আমার ও আমার স্ত্রীর ডিএনএ নমুনা নিয়ে গেছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর লাশ হস্তান্তর করা হবে।

প্রায় দুই দশক ধরে বেশিরভাগ প্রবাসী বাংলাদেশি রা অস্ট্রেলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করেছে। তাই প্রবাসে জন্ম নেওয়া নতুন প্রজন্ম এখনও তরুণ। গত কয়েক বছরে পারিবারিক কলহের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকজন বাংলাদেশি তরুণীর মৃত্যু হয়েছে।

এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত বিজয় কণ্ঠ’র সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার আইনকে মান্য করেই আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আরও বেশি সচেতন হতে হবে। সঙ্গী নির্বাচনের ব্যাপারে ভালো-মন্দ ও এর ভবিষ্যৎ পরিণতির বিষয়ে তাদের বোঝাতে হবে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!