পৃথিবীতে ফিরলেন কোরআন সঙ্গে নিয়ে যাওয়া আমিরাতের সেই মহাকাশচারী
প্রথম আরবীয় হয়ে মহাকাশ ভ্রমণে গিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের নভোচারী হাজ্জাজ আল মানসুরি। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন পবিত্র কোরআন। ইতিহাসে নাম লেখা হাজ্জাজ আল মানসুরি মহাকাশ সফর শেষে ফিরে এসেছেন পৃথিবীতে। মাতৃভূতিতে দেশের মহাকাশ নায়ককে উঞ্চ অভ্যর্থনায় বরণ করে নেয় আমিরাতি জনগন।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) এর প্রথম আরবীয় এবং আমিরাতি হিসাবে আট দিনের মহাকাশ মিশন শেষ করে তিন অক্টোবর হাজ্জাজ আল মানসুরি পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। গত শনিবার নিজ দেশে ফিরেন তিনি।
আমিরাতের শীর্ষ দৈনিক গালফ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবু ধাবির আল বাতিন এক্সিকিউটিভ বিমানবন্দরে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয় হাজ্জাজ আল মানসুরিকে। আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান শীর্ষস্থানীয় শেখ, উর্ধ্বতন আমিরাতি কর্মকর্তা ও শিশুদের নিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় দেশের প্রথম নভোচারীকে এক পলক দেখতে বিমানবন্দরে শত শত মানুষ ভিড় করে।
লালগালিচার দু’পাশে লাইন ধরে দাড়িয়ে শিশুরা ফুলের পাপড়ি ছিটয়ে হাজ্জাজকে বরণ করে নেয়। হাজজার সন্তানও ফুলের তোড়া নিয়েও পিতাকে স্বাগত জানিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে। এসময় হাজ্জাজের সম্মানে কিছু মানুষকে দেশটির ঐতিহ্যবাহী ইয়োলা নাচ প্রদর্শন করেন।
হাজ্জাজ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি পতাকা হস্তান্তর করেন। সম্ভবত এটি নিয়েই তিনি মহাকাশ সফরে গিয়েছিলেন। দেশটির জাতীয় পতাকার সঙ্গে মহাকাশে পবিত্র কোরআনের একখণ্ড পাণ্ডুলিপি নিয়ে গেছিলেন আল মানসুরি। যা মুসলিম বিশ্বব্যাকে আলোড়িত করেছিল।
সে সময় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, মহাকাশ সফরে ১০ কেজি পণ্য বহন করতে পারবেন হাজ্জাজ আল মানসুরি। সে হিসাবে কোরআনের একখণ্ড পাণ্ডুলিপি, পারিবারিক ছবি, খাঁটি সিল্কে বোনা আরব আমিরাতের পতাকা, ‘কিসাতি’ (আমার গল্প) নামক একটি গ্রন্থ, শায়খ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহায়ানের ছবি এবং ‘আল গাফ’ গাছের ৩০টি বীজ মহাকাশে নিয়ে যান এই নভোচারী।
মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে অবস্থানের সময় ১লা অক্টোবর ইসলামের পবিত্রতম স্থান মসজিদ আল হারাম বা পবিত্র কাবা শরীফের একটি ছবি ইন্সটাগ্রামে শেয়ার করেছিলেন হাজজা আল মানসুরী। ভূ-পৃষ্ট হতে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় অবস্থান করে মহাকাশ স্টেশন হতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তার তোলা মসজিদ আল হারামের এ ছবি মুহূর্তেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। পবিত্র নগরী মক্কা ও কাবার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে হাজজা এই ছবিটির ক্যাপশনে লিখেছিলেন ‘এটি এমন একটি জায়গা যা সারা বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে বাস করে এবং তারা এটির দিকে মুখ করেই সালাত আদায় করে।’
প্রসঙ্গত, আমিরাতের প্রথম আর বিশ্বের ২৪০তম দর্শনার্থী নভোচারী হিসেবে হাজজা আল মানসুরি মহাকাশে গেছেন। আর মহাকাশে নভোচারী পাঠানোর তালিকায় ১৯তম দেশ হিসেবে নাম লিখিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, আরব দেশগুলোর মধ্যে যা প্রথম।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ‘মোহাম্মদ বিন রশিদ স্পেস সেন্টারের’ সহকারী মহাপরিচালক সালেম আল মেরি বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম মহাকাশ নভোচারী হলেন হাজা আল মানসুরি। এটিই প্রথম আমাদের মহাকাশ কর্মসূচি। আমরা সফল হয়েছি। মহাকাশ ভ্রমণে সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৯তম দেশ হিসেবে এখন গর্ব বোধ করতেই পারে।’
আরও খবর :
মহাকাশ থেকে পবিত্র কাবা শরীফের ছবি তুললেন নভোচারী