সুপারসনিক উড়োজাহাজ কনকর্ড আবার উড়বে আকাশে!

এমিরেট্স এয়ারলাইন্সের ঘোষণা

মাত্র তিন বছর পর বিশ্ব এভিয়শন ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী উড়োজাহাজ কনকর্ড আবার দেখা যাবে আকাশে। এ ঘোষণা দিয়ে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে এমিরেট্স এয়ারলাইন্স। সোমবার (১লা এপ্র্রিল) দুবাই-ভিত্তিক বিমানসংস্থাটি ঘোষণা করেছে যে তারা ২০২২ সালে বিখ্যাত সুপারসনিক উড়োজাহাজ কনকার্ড পুনরায় চালু করবে। বিশ্বের সেরা বিমানসংস্থার অবস্থান ফিরে পাবার প্রচেষ্টায় এমন সিদ্ধান্ত এমিরেট্স’র, অভিমত এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের।

এগিয়ে যাওয়ার সড়কে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এরই মধ্যে ৪টি কনকর্ড উড়োজাহাজ কিনেছে এমিরেট্স। দুটি এয়ার ফ্রান্সের আর দুটি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের অব্যবহৃত। এছাড়া সুপারসনিক এই উড়োজাহাজের পুনঃপ্রবর্তনের জন্য নতুন পাইলট, ফ্লাইট এটেনডেন্টড (কেবিন ক্রু) এবং রক্ষাবেক্ষণের জন্য প্রকৌশলীদের সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়ে ফেলেছে এমিরেট্স।

মুনাফার কথা মাথায় রেখে শুধুমাত্র ৪ টি রুটে কনকর্ড চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে এমিরেটস। এরই মধ্যে ঘোষনা দেয়া রুটগুলো হচ্ছে দুবাই-লন্ডন-দুবাই, দুবাই-নিউইর্য়ক-দুবাই, দুবাই- সিঙ্গাপুর-দুবাই, দুবাই-দিল্লি-দুবাই। যারা এই শহরগুলির মধ্যে প্রায়শই ভ্রমণ করেন তারা ২০২২ সালে পুনঃপ্রবর্তনের কনকর্ডে চলাচল করার সুযোগ পাবেন বলে আশা করা যায়। উদ্বোধনী ফ্লাইট দুবাই ও লন্ডনের মধ্যে থাকবে। এখনো নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষনা করা হয়নি, তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাত্রীদের অবহিত করা হবে বলে কৃর্তপক্ষ জানিয়েছে।

সুপারসনিক উড়োজাহাজ কনকর্ড আবার উড়বে আকাশে! 1
এয়ার ফ্রান্সের কনকর্ড সুপারসনিক

Travelion – Mobile

১৯৭৬ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত আকাশে উড়েছে কনকর্ড। শব্দের গতির চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে চলতে পারতো সুপারসনিক কনকর্ড ৷ সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টা প্রতি ১,৩৫৪ মাইল। অর্থাৎ শব্দের গতির (ঘণ্টায় ৭৬৮ মাইল) প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু এই বিমান উড়তে এবং আকাশে থাকত তখন এত বেশি শব্দ করত যে সব জায়গায় যাওয়ার অনুমতি তার ছিল না৷ শুধু যেখানে যেতে সাগরের উপর দিয়ে উড়তে হত সেখানেই চলার অনুমতি ছিল কনকর্ডের ।

ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কনকর্ড উড়োজাহাজ

২০০০ সাল পর্যন্ত কনকর্ডকে নিরাপদ আকাশযান হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। কিন্তু একই বছর এয়ার ফ্রান্সের একটি কনকর্ড বিমান দুর্ঘটনায় ক্রুসহ ১০৯ জন আরোহী নিহত হবার পর সে ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হয়। তদুপরি তীব্র শব্দের কারণে শব্দদূষণ ও বিমানটির গঠনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে সব বিমানবন্দরে অবতরন করতে না পারা, নিরাপত্তাজনিত কারণে যাত্রীদের অনাগ্রহ সৃষ্টি- এরকম আরও নানা কারণে বিমানটি পরিচালনা করা এয়ারলাইন্স কোম্পানির পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনায় তখন সার্বিকভাবে বিমানযাত্রীর সংখ্যাও ক্রমেই কমতে থাকে। অন্যদিকে কনকর্ড রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়তে থাকায় ২০০৩ সালে এর পরিচালনা একেবারেই বন্ধ করে দেয়া হয়। এরফলে আকাশপথে ইতি ঘটে এই আকাশদানবের উড্ডয়ন।

এমিরেট্স’র ঘোষণার পর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কনকর্ড উড়ানোর পথটি খুব সহজ নয়। মাত্র তিন বছরের মধ্যে জেটটি পুনরায় চালু করা অবশ্য একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা, তবে বিমানসংস্থারটি এটি করার জন্য সক্ষমতা রয়েছে।
সুপারসনিক উড়োজাহাজ কনকর্ড আবার উড়বে আকাশে! 2
প্রথমত, অনেক আইনপ্রণেতা আছে যারা এতে রাজি নন। অন্যতম কারণ হলো আন্তর্জাতিক আইনে রুটগুলি সীমিত করাতেই এয়ার ফ্রান্স এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের তাদের বহর থেকে কনকর্ড বাদ দিয়েছিল। কিন্তু এমিরেটস ইংগিত দিচ্ছে যে তারা “সুপারসনিক-ওভারল্যান্ড-ফ্লাইট” নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের সাথে আলোচনা করছে। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার নাসার গবেষণার জন্য অপেক্ষা করছে, যা ২০২৫ সালে বেরুবে। এমিরেটস নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ করবে।

দ্বিতীয়ত, এমিরেটস তাদের নতুন বহরে সংযোজন করতে বকবর্ডগুলোকে চলাচল উপযোগী করে তুলতে হবে। কনকর্ডে কাজ করছে এমন এয়ারবাস ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশনায় ২০২১ সালে প্রথম কনকর্ড উড়োজহাজের পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করেছে এমিরেট্স। তবে, পুনঃপ্রবর্তনের জন্য তাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় হবে। বিভিন্ন বিমান বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে একটি কনকর্ড আবার উড়াতে ১৫ থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ব্যয় হবে। তা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত এমিরেট্স কর্তৃপক্ষ।

এফ-ওটিএসবি এবং এফ-বিভিএফবি হিসাবে নিবন্ধিত এয়ার ফ্রান্সের কনকর্ড দুটি খুব দ্রুত দুবাইতে নিয়ে আসা হবে, যাতে প্রকৌশলী দিনে ও রাত্রে কাজ করে চলাচল উপযোগী করে তুলতে পারে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের জি- বিওএবি এবং জি- বিওএসি কনকর্ড দুটি দুবাই আসবে ২০২০ সালের প্রথম দিকে।

তথ্যসূত্র : এভিয়েশন.কম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!