সশস্ত্র বাহিনী দিবসে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দেশের সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে যান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রথমবার ভারতের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দিল্লিতে কোনো দেশের মিশনে যান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ সন্ধ্যার এ সফর হয়। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী উভয়ই পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিল।

ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহাম্মদ ইমরান সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাপ্রধান- জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নারাভানে, ভারতীয় বিমান বাহিনী প্রধান-চিফ মার্শাল বিবেক রাম চৌধুরী এবং ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধান- অ্যাডমিরাল করমবীর সিংবিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবুল কালাম আজাদ।

Travelion – Mobile

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তাঁর আধাঘণ্টার বক্তব্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে দুই বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টা সম্পর্কে কথা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আশার আলো। তার ঐতিহাসিক নেতৃত্বে সমগ্র বাংলাদেশ জাতি একত্রিত হয়ে দখলদার বাহিনীর নৃশংসতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।”

তিনি বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আমি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামকে শ্রদ্ধা জানাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজকের বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর মূল অনুপ্রেরণা। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সাহসী সৈনিকরা যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের বাংলাদেশি ভাই ও বোনদের পাশে ছিল- তাদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, এ দিনে আমি আরো স্মরণ করি ভারতের অসাধারণ নেতৃত্বকেও। যারা ১৯৭১ সালে সমস্ত প্রতিকূলতা এবং সীমাবদ্ধতার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা সংঘটিত অন্যায় এবং অবর্ণনীয় নৃশংসতার বিরুদ্ধে লড়াইরত একটি সংগ্রামী জাতিতে সমর্থন জুগিয়েছিল।

মন্ত্রী বলেন, যখন আমাদের খুব বেশি ছিল না তখনও আমরা বাংলাদেশি লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি। একটি সংগ্রামরত দেশ আরেকটি দেশের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সে সময়।

রাজনাথ সিং বলেন, আজকের গর্বিত ও পেশাদার বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের জন্য তাদের মৌলিক মূল্যবোধের কাছে ঋণী। মুক্তিযুদ্ধের পরীক্ষা ও ক্লেশই বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেছিল। আজ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সর্বোচ্চ অবদানকারী। তাদের পেশাদারিত্ব এবং ন্যায়সঙ্গত প্রতিশ্রুতির জন্য বিশ্বব্যাপী সম্মানিত।

মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের শেষে বলেন, আমি আনন্দিত যে উভয় দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা ক্রমাগত বাড়ছে। প্রতিরক্ষা সংলাপ, কর্মীদের আলোচনা, যৌথ প্রশিক্ষণ, অনুশীলন এবং উচ্চ পর্যায়ের মতবিনিময়- ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি বেড়েই চলেছে। ভারত থেকে সেনা ও বিমান বাহিনী প্রধানরা এ বছর বাংলাদেশ সফর করেছেন।

প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ভারত বাংলাদেশকে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার সমপরিমাণ ঋণ প্রদান করবে বলেও জানান তিনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রী এমন অনুষ্ঠানের অংশ নিতে কোনো দূতাবাস বা হাইকমিশনে যাননি।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ৫০তম বার্ষিকীতে অভিনন্দন জানাই এবং শান্তি ও নিরাপত্তায় তাদের প্রচেষ্টাযর মঙ্গল কামনা করি। এ বছরটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী, ভারত-বাংলাদেশের ৫০ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!