রোমানিয়ায় কাজের ভিসায় দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় শীর্ষে বাংলাদেশিরা

২০২২ সালের তুলনায় গত বছর কাজের ভিসায় বাংলাদেশিদের রোমানিয়ায় আসার হার বেড়েছে ২৭.৫ শতাংশ।

গত বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে প্রায় ৪২ হাজার অভিবাসী ওয়ার্ক পারমিট বা দীর্ঘ মেয়াদি কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছেন। সবচেয়ে বেশি ভিসা পেয়েছেন শ্রীলঙ্কানরা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন বাংলাদেশিরা।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ইনফোমাইগ্রেন্টসকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর অভিবাসন পরিসংখ্যান জানিয়েছে রোমানিয়া বর্ডার পুলিশের তথ্য ও জনসংযোগ দপ্তর (আইজিপিএফ)।

Travelion – Mobile

কর্তৃপক্ষের পরিসংখ্যানে গত তিন বছরে ইস্যু হওয়া কাজের ভিসার তথ্য ছাড়াও হাই স্কিল্ড বা উচ্চ দক্ষ কাজের ভিসা, শিক্ষার্থী হিসেবে কতজন পড়তে এসেছেন এবং ভ্রমণ ও অন্যান্য ক্যাটাগরিতে আসা লোকেদের সংখ্যাও উঠে এসেছে।

বিগত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় রোমানিয়ায় বাংলাদেশিদের আসার হার অব্যাহত রয়েছে। ২০২৩ সালে মোট ১১ হাজার ১৩৮ জন বাংলাদেশি অভিবাসী কাজের ভিসায় রোমানিয়ায় এসেছেন।

২০২২ সালে এ সংখ্যাটি ছিল আট হাজার ৭৩০ জন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশিদের ভিসা পাওয়ার হার বেড়েছে ২৭.৫ শতাংশ। অন্যান্য সব ক্যাটাগরি মিলিয়ে মোট ১৪ হাজার ১২০ জন বাংলাদেশি গত বছর পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে এসেছেন।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত এবং বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ আছে। এছাড়া দেশটিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত হওয়া ও কোভিড পরবর্তী নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মতো উল্লেখযোগ্য সমস্যা আছে।

করোনা মহামারির পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশ কিছু খাতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। সেই সঙ্গে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির মতো বিষয়। কয়েক বছর আগেও ইউরোর বিপরীতে বাংলাদেশি টাকার মান ছিল ৮০ থেকে ৯৫ টাকা। এখন সেটি ১৩০ টাকা ছুঁয়েছে।

আন্তর্জাতিক এনজিও অক্সফামের মতে, ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য চরম আকার ধারণ করেছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই প্রতিদিন এক ডলারেরও কম আয় করে।’

সবগুলো ক্যাটাগরি মিলিয়ে ২০২৩ সালে মোট ২২ হাজারা ৭৬৩ জন ভারতীয় নাগরিক রোমানিয়ায় এসেছেন, যা মোট সংখ্যার দিক থেকে সর্বোচ্চ।

কাজের ভিসার তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো থেকে রোমানিয়ায় পড়তে আসার হার কম। ২০২২ সালে ৭২৫ জন শিক্ষার্থী দেশটিতে পড়তে এসেছিলেন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যাটি ১৪.৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২৯ জন-এ।

এদের মধ্যে ৪৬১ জন বাংলাদেশি, ১৮৫ জন ভারতীয়, ১৩০ জন পাকিস্তানি, ৪০ জন শ্রীলঙ্কান এবং ১৩ জন নেপালি নাগরিক।

বিপুল সংখ্যাক বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রোমানিয়ায় আসলেও তাদের মধ্যে বর্তমানে বৈধভাবে বসবাসরতদের হারের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।

১৬ জানুয়ারি এক ইমেইলে রোমানিয়া জেনারেল ইনস্পেক্টরেট ফর ইমিগ্রেশন (আইজিআই) ইনফোমাইগ্রেন্টসকে জানায়, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত রোমানিয়ায় বৈধভাবে বসবাস করছেন ১৮ হাজার ৮৭১ জন নেপালি নাগরিক।

বৈধ অভিবাসী সংখ্যার দিকে থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কানরা। দেশটি ১৪ হাজার ৯২৬ জন অভিবাসী বৈধ রেসিডেন্স পারমিট নিয়ে বর্তমানে বুখারেস্টসহ বিভিন্ন শহরে বসবাস করছেন।

এছাড়া আট হাজার ৯৯৪ জন ভারতীয় অভিবাসী, পাঁচ হাজার ২১ জন বাংলাদেশি এবং তিন হাজার ১৫০ জন পাকিস্তানি নাগরিক নিয়মিত অবস্থায় আছেন।

বাংলাদেশিদের গত দুই বছরে ভিসা প্রাপ্তির হার ও বৈধ অভিবাসীর সংখ্যার মধ্যে বড় ধরণের পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে।

গত বছরের বিভিন্ন সময়জুড়ে হাঙ্গেরি ও সার্বিয়া সীমান্তে অনিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় বাংলাদেশি, নেপালি ও অন্যান্য দেশের নাগরিকদের আটক করেছে বুখারেস্ট কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া ২০২৩ সালে জোরপূর্বক নিজ দেশ ‘ডিপোর্ট’ করা হয়েছে ৩৯৭ বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের এক হাজার ২২২ জন অভিবাসীকে।

বাংলাদেশের নাগরিকরা রোমানিয়ার ইস্যু করা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অপব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেছিলেন ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত রোমানিয়ার রাষ্ট্রদূত ড্যানিয়েলা সেজোনভ টেনে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকায় এফবিসিসিআই প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাৎকালে এ মন্তব্য করেছিলেন তিনি।

এক দশক অপেক্ষার পর চলতি বছরের ৩১ মার্চ থেকে আংশিকভাবে ইউরোপের অবাধ চলাচলের অঞ্চল শেঙেন জোনে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে রোমানিয়া।

ইইউ-এর সুনজরে থাকতে এবং শেঙেন প্রবিধান মেনে চলতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেআইনি উপায়ে হাঙ্গেরিতে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসীদের আটক অব্যাহত রেখেছে বুখারেস্ট।

সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!