শাহ আমানত বিমানবন্দরে প্রবাসীদের সমস্যা নিরসনে কর্তৃপক্ষের আশ্বাস

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী যাত্রীদের সবধরনের হয়রানি নিরসনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের সেবার মান ও পরিধি বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আমিরাতগামী যাত্রীদের হয়রানির বিষয়ে বিশেষ সর্তকতা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিমানবন্দর ইমিগ্রেসন কর্তৃপক্ষ।

বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে টার্মিনাল ভবনের সম্মেলন কক্ষে প্রবাসীদের নিয়ে দায়িত্বরত সকল সংস্থার অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত স্টেকহোল্ডার সভায় এসব কথা জানানো হয়।

বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার মো. ফরহাদ হোসেন খান পিএসসির সভাপতিত্বে সভায় প্রবাসী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস, প্রবাসী কল্যাণ কার্যালয়, পর্যটন কর্পোরেশন, সোনালী ব্যাংক, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, এয়ারলাইন্স প্রতিনিধি, সিএন্ডএফ এজেন্ট, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সকল সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Travelion – Mobile

এনআরবি-সিআইপি এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী বিমানবন্দর কেন্দ্রিক প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরে বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি রেমিট্যান্সযোদ্ধা প্রবাসীর যেন বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার না হন সেই ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে আরও সর্তক ও সচেতন হতে হবে। যদি কোনো বিশেষ ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে পারে। সবাইকে এক পাল্লায় মাপা উচিত নয়।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রবাসীদের বিশেষ বৈঠক
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রবাসীদের বিশেষ বৈঠক

চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের সহ-সভাপতি আশরাফুর রহমান সিআইপি আগমনি ইমিগ্রেসন লাউঞ্জের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরগুলোর মতো সামর্থ্যবান প্রবাসী ও বয়স্ক যাত্রীদের জন্য “অনপেমেন্ট” বিশেষ সেবা ব্যবস্থা চালুর বিষয়ে পরামর্শ রাখেন।

বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান জনি বলেন, বর্তমানে বিমানবন্দরে সবচেয়ে বেশি হয়রানি হচ্ছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতের যাত্রীরা। বিশেষ করে ভিজিট ভিসা নিয়ে আমিরাতে যেতে আগ্রহীদের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও এয়ারপোর্ট কন্ট্রাক্টের নামে তাদের থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এটি সাধারণ প্রবাসীদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা।

কাতার বাংলাদেশ কমিউনিটির সম্পাদক নুর মোহাম্মদ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মতো মহিলা যাত্রীদের জন্য আলাদা ইমিগ্রসন কাউন্টার স্থাপনের অনুরোধ জানান। এছাড়া তিনি প্রবাসীদের জন্য ট্রাভেল ট্যাক্স রহিত করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান।

চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন প্রধান এসপি জকির হোসেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণ ভিসায় যেতে আগ্রহী যাত্রীদের দূতাবাসের প্রত্যায়ন সঙ্গে রাখতে বিশেষ অনুরোধ করেন। জকির হোসেন জানান, ডিসেম্বর মাসে প্রায় ১৬ হাজার ৫শত যাত্রী চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে দেশে বাইরে গমন করেন। এরমধ্যে মাত্র ২৫৫ জন যাত্রী সঠিক তথ্য না দিতে পারায় অফলোড করা হয়। এ ছাড়া ২৫৬ জনকে অফলোড কাটিয়ে দেশের বাইরে যাবার অনুমতি দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রবাসীদের বিশেষ বৈঠক
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকল সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রবাসীদের বিশেষ বৈঠক

কোনো ফ্লাইটে সিট খালি যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘অফলোড হওয়া শেষ কথা নয়, যেসব কাগজপত্র ঘাটতি থাকে সেগুলো জমা করে যাত্রীদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ঝামেলা এড়াতে দূর সর্ম্পকীয় আত্মীতয়তা সূত্রের ভিজিট ভিসার যাত্রীদের দূতাবাসের সত্যায়িত কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। এ ছাড়াও যেকোনো হয়রানি হলে তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। সত্যতা পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিমানবন্দর কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার রোকসানা খাতুন বলেন, ‘অধিকাংশ যাত্রীরা সহজ সরল। অন্যের ব্যাগ বহন করতে গিয়ে তারা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। অনেক সময় দেখা যায় আইনের বহির্ভূত জিনিসপত্র কিংবা কাস্টমসকে ফাঁকি দিয়ে পণ্য বহনের চেষ্টা করা হয়। ধরা পড়লে যাত্রীরা সেসব মালামাল নিজের নয় বলে ঘোষণা দেন কিন্তু এমন অভিযুক্তদের আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা হতে পারে। তাই যার যার অবস্থান থেকে যাত্রীদের অন্যের ব্যাগ বা পণ্য বহনের নিরুৎসাহিত করতে হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান অধিদপ্তরের চট্টগ্রামের উপপরিচালক জহিরুল আলম মজুমদার মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদা জানান, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বহির্গামী কর্মীদের সুবিধার্থে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের মতাে বিদেশ থেকে প্রত্যাগত কর্মীদের সুবিধার্থে, সেবা প্রদান ও তথ্য সংরক্ষণের জন্য আগমনি এলাকায় প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের দ্বিতীয় কাউন্টার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিমানবন্দর ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার মো. ফরহাদ হোসেন খান পিএসসি বলেন, ২০২০ সালে এসে দেশের দ্বিতীয় প্রধান এই বিমানবন্দর ২০ বছর অতিক্রম করেছে। বর্তমানে প্রায় ৩০০ জন কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে বিমানবন্দররের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর উদ্যোগ চলমান রয়েছে এবং আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরো অনেকাংশে পরিবর্তন আসবে।

অন্যদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স’সহকারী স্টেশন ম্যানেজার আলাউদ্দিন আল মামুন, বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার আরাফাত চট্টগ্রাম সমিতি ওমানের অর্থ সম্পাদক নাসির মাহমুদ ও প্রচার সম্পাদক বাবলু চৌধুরী এবং জেষ্ঠ্য সাংবাদিক এজাজ মাহমুদ সভায় বক্তব্য রাখেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!