প্রবাসীদের ফ্লাইট চালু রাখার দাবি বায়রা-আটাবের

প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর বিদেশ যাত্রা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে বলে উল্লেখ করে এক সপ্তাহের লকডাউন চলাকালে বিদেশগামী এসব কর্মীদের ফ্লাইট চালু রাখার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) ও অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আলাদা সংবাদ সম্মেলনে বায়রা ও আটাব নেতারা এ দাবি জানান।

উভয় সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, এক সপ্তাহের জন্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞার কারণে অনেক কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সময়মতো না যেতে পারলে নিয়োগকর্তা চাহিদাপত্র বাতিল করতে পারে। বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ করে দিলে কর্মী নেওয়া দেশগুলো যখন জানবে, করোনা মহামারির জন্যে ফ্লাইট বন্ধ করা হয়েছে, তখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করে দেওয়ার পরেও কর্মী নেওয়া দেশগুলো কর্মী নিতে অনীহা পোষণ করতে পারে।

Travelion – Mobile

বায়রা ও আটাব নেতারা মহামারির এই সময়ে লকডাউন চলাকালীন পরিস্থিতিতে বিদেশগামী কর্মীদের কথা বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ না করে বরং জনশক্তি পাঠানো এই খাতকে ‘জরুরি সেবা খাত’ হিসেবে ঘোষণা করে তা লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বায়রার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির সাবেক অর্থসচিব ফখরুল ইসলাম। আটাবের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে সংগঠনের সভাপতি মনসুর আহমেদ কালাম।

বায়রার পক্ষ থেকে বলা হয়, এক সপ্তাহের জন্যে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের কারণে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকের নিজ নিজ কর্মস্থলে যাওয়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। তাদের সবাই অধিক মূল্যে ফ্লাইটের টিকিট সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া, আরও হাজারো বিদেশগামী কর্মী টিকিটের অপেক্ষায় আছেন। ফলে হঠাৎ ফ্লাইট বন্ধের ঘোষণায় বিদেশ গমন অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় সংশ্লিষ্ট সবাই উৎকণ্ঠা ও হতাশায় নিমজ্জিত।

বায়রার পক্ষ থেকে বলা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সব ফ্লাইট বন্ধ করা হলে মারাত্মক ক্ষতি হবে বিদেশগামী কর্মী, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও সর্বোপরি দেশের। কাতার ও ওমানগামী হাজারো যাত্রী লাখো টাকা দিয়ে কোয়ারেন্টিনের জন্যে হোটেল বুকিং করে রেখেছে সেসব দেশে যেগুলো নন-রিফান্ডেবল। এতে তাদের বড় অংকের লোকসান গুনতে হবে।

আটাব সভাপতি বলেন, এর আগে গত বছর লকডাউনের সময় প্রায় দুই মাস আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধের কারণে হাজারো প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তাদের অনেকেই আবার নতুন করে বিদেশ গমনের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শুধু ফ্লাইটের অপেক্ষায় আছেন। এক সপ্তাহের লকডাউনে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আটাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, লকডাউনের এই সাত দিনে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক সৌদি আরব, দুবাই, ওমান ও কাতার যাওয়ার উদ্দেশ্যে উচ্চমূল্যে টিকিট কিনেছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট নন-রিফান্ডেবল।

আটাব ও বায়রার নেতারা বলেন, হাজারো নতুন শ্রমিক ভিসা পেয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। নির্দিষ্ট সময়ে কর্মস্থলে যোগদান করতে না পারলে নিয়োগকর্তা অনেক শ্রমিকের ভিসা বাতিল করবেন। যেহেতু কর্মী নেওয়া দেশগুলো কোনোরকম বিধি-নিষেধ দেয়নি, সেহেতু বাংলাদেশ থেকে বিদেশগামী কর্মী পাঠানোর নিমিত্তে আবশ্যিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু রাখা উচিত। অন্যথায় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি খাতসহ সংশ্লিষ্ট সব খাত শতভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বায়রার পক্ষ থেকে বলা হয়, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইনসহ কর্মী পাঠানো দেশগুলো লকডাউনের মধ্যেও জরুরি খাত হিসেবে বিভিন্ন দেশে কর্মী পাঠাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে কর্মী পাঠানো বন্ধ হলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে যাবে।

আটাব নেতারা বলেন, পরিস্থিতি যাই হোক, যতদিন পর্যন্ত কর্মী নেওয়া দেশগুলো, বিশেষ করে সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করবে, অন্তত ততদিন সংশ্লিষ্ট সবার তথা দেশের স্বার্থে বিদেশগামী কর্মীদেরকে লকডাউনের আওতার বাইরে রেখে বিদেশ গমনের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!