পুরানো কবর খুঁড়ে করোনায় নতুন মৃতদের সমাধি

ব্রাজিলে চলতি সপ্তাহে এত মৃত্যু হয়েছে যে, মরদের কবর দেওয়ার জায়গা হচ্ছে না সমাধিক্ষেত্রে। তাই খুঁড়তে হচ্ছে পুরানো কবর। আগের মৃতদের দেহাবশেষ বের করে নিয়ে করোনায় নতুন মৃতদের কবর দেওয়া হচ্ছে সেখানেই। আমেরিকার পর করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছে ব্রাজিলেই। প্রতিদিন গড়ে ৩১০০ করে লোক মরছে। গত সপ্তাহে প্রতিদিন ৭৪,০০০ জন নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে।

ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর সাওপাওলোর উত্তর প্রান্তে অবস্থিত ভিলা নোভা সাকইরিনহা সমাধিক্ষেত্রের ছবি এখন বিশ্ব নাড়িয়ে দিয়েছে। হ্যাজম্যাট স্যুট পরে খননকারীরা একে একে পুরনো কবরের ঢাকনা খুলছেন সিমেন্ট ভেঙে। কবরের ভেতরকার পচন ধরা দেহাবশেষ, অস্থি ইত্যাদি ব্যাগে ভরে নিয়ে আবার নতুন মৃতদেহের স্থান বরাদ্দ করছেন। রাত ১০টা অবধি সমাধিস্থল খোলা থাকা সাধারণ নিয়ম। কিন্তু এখন ফ্লাড লাইট কিংবা পূর্ণিমার আলোতেও জোরকদমে চলছে কবর দেওয়ার কাজ। মধ্যরাতেই কবর দিতে আসছেন বেশি সংখ্যক মৃতের পরিবার, এমনটাই জানালেন সেমেটারি কর্তৃপক্ষ।

ব্রাজিলের স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ গত বৃহস্পতিবার ৩,৭৬৯ জন মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ব্রাজিল গত বছরের তুলনায় এবছরই যেন বেশি করোনা জর্জরিত। প্রতিদিন এই সংখ্যা এমন বিপুল হারে বেড়ে চলেছে যে অনেক সময় নথিভুক্তই করা যাচ্ছে না। এরকম চলতে থাকলে সমাধিক্ষেত্রগুলোয় জায়গা পাওয়া মুশকিল। সেমেটারি অপারেশনের সময় প্রয়োজন পড়লে পুরনো কবর পরিষ্কার করেই কাজ চালাতে হয়। নির্মম হলেও এটাই যে প্রথা। তাই এখন পরিস্থিতি অনুযায়ী সেভাবেই স্থান সংকুলান করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন ফিউনারেল সার্ভিসের মিউনিসিপাল সেক্রেটারি।

হ্যাজম্যাট স্যুট পরে খননকারীরা পুরনো কবরের  ভেতরকার পচন ধরা দেহাবশেষ, অস্থি ইত্যাদি ব্যাগে ভরে নিচ্ছে
হ্যাজম্যাট স্যুট পরে খননকারীরা পুরনো কবরের ভেতরকার পচন ধরা দেহাবশেষ, অস্থি ইত্যাদি ব্যাগে ভরে নিচ্ছে

প্রতিবেশী বলিভিয়া ঘোষণা করেছে, ব্রাজিল সংলগ্ন সীমান্ত পুরো বন্ধ করে দিয়ে তারা করোনা রোখার চেষ্টা করবে। কারণ ইতিমধ্যেই আরও মারাত্মক স্ট্রেনের কিছু করোনা ভাইরাসের খোঁজ আশেপাশে মিলছে। ব্রাজিলিয়ান বায়োমেডিকাল ইন্সটিটিউট বুতানতান দুদিন আগেই জানিয়েছে যে তারা এখানে একটা নতুন প্রজাতির হদিশ পেয়েছে যেটা প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা গিয়েছিল। এই প্রজাতি আরও বেশি ছোঁয়াচে। নতুন ভ্যাকসিন এদের কাবু করতে পারবে না। ব্রাজিলে সম্ভবত এই নতুন প্রজাতির করোনা ভাইরাসই ছড়িয়ে পড়ছে।

Travelion – Mobile

চিলিও গত বৃহস্পতিবার বাইরের দেশের মানুষের আনাগোনা নিষিদ্ধ করে সীমান্ত আটকে দিয়েছে। শুরু থেকে আজ অবধি করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সেখানে লক্ষেরও বেশি। ফলত আরও কড়াভাবে লকডাউন পালনের নির্দেশিকা জারি হয়েছে।

প্রতিবেশী দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্কের আঁচ। ব্রাজিলে এখন নতুন প্রকার করোনা ভাইরাসের চাষ। হাসপাতালগুলির সদর এবং অন্দর মিলিয়ে ৯০ শতাংশই করোনা রোগীতে ভর্তি। এদিকে প্রেসিডেন্ট জায়ের বোলসোনারো মাস্ক ব্যবহার কিংবা লকডাউনের তোয়াক্কা করেন না। তিনি শুরু থেকেই ভ্যাকসিন নেওয়ার বিরোধী। স্পষ্ট জানিয়েছেন ব্রাজিলের সকলের আগে ভ্যাকসিন নেওয়া শেষ হোক, যদি ফলাফল আশানুরূপ হয়,ত তারপর তিনি ভেবে দেখবেন। এখনও পর্যন্ত ব্রাজিলের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ প্রথম ডোজ নিয়েছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!