পাইলট এখন ফুড ডেলিভারি ম্যান!

করোনা সংকটে

করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আছে। এমনকি লকাডাউনের কারণে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটও বন্ধ হয়ে গেছে। করোনার প্রভাবের কারণে বিশ্বে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। গত এপ্রিল ও মে মাসে আমেরিকার বেকারত্বের হার ‘গ্রেট ডিপ্রেশন’ বা ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার পর থেকে ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গিয়েছিল। অনেক ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিশ্বের বাণিজ্যিক এয়ারলাইনসগুলোরও একই দশা। কর্মীদের বেতন দিতে পারছে না। এ কারণে কিছু কিছু এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বসে না থেকে এভাবে ভিন্ন উপায়ে অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের এয়ারলাইনসগুলোরও একই অবস্থা। তবে দেশটিতে লকডাউন শিথিল করায় সম্প্রতি কয়েকটি অভ্যন্তরীন ফ্লাইট চালু হয়েছে। আর বেশিরভাগ এয়ারলাইনস অস্তিত্ব রক্ষায় আকাশপথ থেকে সোজা সড়ক পথে নেমে এসেছে। এসব কোম্পানি এখন ফ্লাইট পরিচালনার বদলে মোটরসাইকেল কার হেইলিং অ্যাপের মাধ্যমে দেশটিতে ফুড ডেলিভারির কাজ শুরু করেছে। এমন একজন হতভাগ্য পাইলটে গল্প তুলে ধরেছে সিএনএন ট্রাভেল।

নাকারিন ইনতা। থাই লায়ন এয়ারের কো-পাইলট (৪২) এখন মোটরসাইকেলে করে ফুড ডেলিভারি বয়ের কাজ করেন। এখন আকাশের বদলে সড়কপথ, ককপিটের বদলে মোটরসাইকেলের সিট, জরুরি বার্তার বদলে ক্রেতার বার্তা আসে ফোনে আর এয়ার সিগন্যালের বদলে ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলতে হচ্ছে ইনতাকে।

Travelion – Mobile

৪২ বছর বয়সী ইনতা কো-পাইলট হিসেবে গত চার বছর ধরে আকাশে বিচরন করেছেন। কখনও ভাবতেও পারেননি আকাশ থেকে সোজা মাটিতে নেমে আসতে হবে-আজ সেই বাস্তবতাই মেনে নিতে হয়েছে ইনতাকে। কিন্তু কেন এই অবতরণ।

নাকারিন ইনতা বলেন, ‘করোনার প্রভাবে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে এয়ারলাইনের কিছু কর্মী বিনা বেতনে ছুটি নিয়েছেন। আর যারা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদের অধিকাংশের বেতন ৭০ শতাংশেরও বেশি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে প্রতি মাসেই ব্যয় করতে হয়, এ কারণে আমাকে নিজের প্রয়োজনেই অন্য কিছু খুঁজে নিতে হয়েছে।’

আগের খবর : ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পাইলট এখন ভ্যান ড্রাইভার!

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে থাইল্যান্ডে গত মার্চ মাসে লকডাউন জারি করে দেশটির সরকার। এরপর থেকে ব্যাংককে অ্যাপসের মাধ্যমে ফুড ডেলিভারি সেবা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই সুযোগে এয়ারলাইনও এই সেবায় নেমে গেছে। এ কারণে ইনতা ভেবেছেন, বেকার বসে না থেকে খাবার ডেলিভারি করে যে সামান্য আয় হবে তা দিয়ে কোনোমতে স্ত্রী ও চার বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে সংসারটা টেনে নিয়ে যাওয়া যাবে। এই ভাবনা থেকেই কিছুদিন আগেও যিনি পাইলট ছিলেন, এখন তিনি মোটরসাইকেলে করে ফুড ডেলিভারি করছেন। চরম দুর্যোগেও টেনে নিয়ে যাচ্ছেন এক সময়ের সুখের সংসারটাকে।

নাকারিন ইনতা বলেন, ‘আমি আমার পরিবারের জন্য সংগ্রাম করছি। পরিবারের জন্য আমাকে কিছু না কিছু করতেই হতো। নিজের একটা মোটরসাইকেল ছিল। এটা নিয়েই খণ্ডকালীন একটা চাকরি খুঁজছিলাম। পেয়েও গেলাম এই ফুড ডেলিভারির কাজ। এখন আমি ডেলিভারি ম্যান।’

পাইলট হিসেবে ইনতা প্রতি মাসে খুব কম করে হলেও ছয় থেকে আট হাজার মার্কিন ডলার আয় করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে মধ্য মার্চ থেকে সেই কাজ বন্ধ। এখন দিনে মাত্র ৩০ ডলার আয় করতে পারাটাই অনেক বেশি বলে মনে করেন ইনতা। তিনি বলেন, এই কাজে কেবল তিনি একা নন। অনেক এয়ারলাইনসেরই এই হাল। তাঁর পরিচিত কমপক্ষে ৫০ জন পাইলট নানা ভেন্ডরের অধীনে এই ফুড ডেলিভারির কাজ করছেন। এমন না যে, তাঁরা চাকরি হারিয়েছেন। তাঁদের চাকরি এখনো আছে। কিন্তু কাজ বন্ধ, বেতন নেই। এ কারণেই ফুড ডেলিভারির কাজ করে অর্থ আয় করছেন। এই কাজে অনেকে নিজের বিলাসবহুল বিএমডব্লিউ মোটরবাইক বা সেডানও ব্যবহার করছেন। আসলে যার যে গাড়ি আছে, সেটা ব্যবহার করেই এই খণ্ডকালীন ফুড ডেলিভারির কাজ করতে হচ্ছে। নিজের জন্য, নিজের পরিবারের প্রিয় মুখগুলোর জন্য এই সংগ্রামটা করতেই হবে।

আগের খবর : ভিয়েতনামে কোমা থেকে জাগলেন করোনাক্রান্ত ব্রিটিশ পাইলট

ইনতার ফুড ডেলিভারি কাজের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা খুব ভালো। এই কাজটা যথাযথভাবে পেরেছিলেন বলে নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব হয়েছিল তাঁর। এখন তিনি আবারও ককপিটে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। তাঁর বিশ্বাস, শিগগির তিনি প্রিয় অফিস ও ককপিটে ফিরতে পারবেন।

থাই সরকার লকডাউন শিথিল করে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে। দিনে দিনে ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়ছে। আগামী আগস্টের পর ইনতার আবার কাজ শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আমার কর্মজীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মিস করছি, সহকর্মী, ক্যাপ্টেন, কেবিন ক্রুসহ সব কর্মীদের অনেক মিস করছি। আসলে আমরা অনেকদিন এক সঙ্গে কাজ করি। আর সবচেয়ে বেশি করছি আমার আকাশের অফিস।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!