ইতিহাসের পাতায় আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস

আজ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। অভিবাসী কর্মীদের মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার প্রয়াসে প্রতিবছর ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৪ ডিসেম্বর, ২০০০ সালে দিনটি বিশ্বব্যাপী উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। মূলতঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ব্যাপক হারে অভিবাসন ও বিপুলসংখ্যক অভিবাসীদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়াদিকে ঘিরেই এ দিবসের উৎপত্তি। ১৮ ডিসেম্বর, ১৯৯০ সালে সাধারণ পরিষদ অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক চু্ক্তি ৪৫/১৫৮ প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করে।

১৯৯৭ সাল থেকে ফিলিপিনো এবং অন্যান্য এশীয় অভিবাসী সংগঠনগুলো দিবসটি পালন করতে শুরু করে। শুরুর দিকে তারা ১৮ ডিসেম্বরকে নির্ধারণ করে এবং অভিবাসীদেরকে ঘিরে ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯০ সালে জাতিসংঘ অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে রেখে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছিল।

স্পেনের মাদ্রিদের শহরতলি ইউসেরায় ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদযাপন
স্পেনের মাদ্রিদের শহরতলি ইউসেরায় ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদযাপন

এর প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বর দিনটিকে লক্ষ্য করে মাইগ্রেন্ট রাইটস্‌ ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটস্‌-সহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালায়। অবশেষে ১৯৯৯ সালের শেষার্ধে অন লাইনে ব্যাপক প্রচারণার ফলে জাতিসংঘের মুখপাত্র এ দিবসটিকে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হন।

Travelion – Mobile

বিশ্বের বহু দেশ, সরকারের সংগঠন কিংবা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা, সংগঠন যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান পালন করে। তন্মধ্যে আলোচনা সভা, পথসভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মানববন্ধন উল্লেখযোগ্য। এ সকল বিষয়গুলোর সবটুকুই অভিবাসীদের উপজীব্য করে অনুষ্ঠিত হয়। অভিবাসীদের মানব অধিকারের বিষয়ে তথ্যের বিস্তৃতি ঘটানো এবং সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব্ব-সংঘাত থেকে মুক্তি লাভ, অভিজ্ঞতা বিনিময়, অভিবাসীদের রক্ষার লক্ষ্যে নিশ্চয়তা বিধানে রূপরেখা প্রণয়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো এতে প্রাধান্য পায়।

প্রবাসী শ্রমিক
প্রবাসী শ্রমিক

‘দক্ষ হয়ে বিদেশ গেলে, অর্থ সম্মান দুই-ই মেলে’- প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের ক্রমবর্ধমান ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার দক্ষতা উন্নয়নের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপের প্রেক্ষিতে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

অভিবাসী বাংলাদেশিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেন, অভিবাসী কর্মীরা দেশের গর্ব। বিপুল সংখ্যক অভিবাসী জনগোষ্ঠী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে তাদের পারিবারিক ও সামাজিক জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিদ্যমান শ্রমবাজার সুসংহত ও নতুন নতুন শ্রমবাজার অনুসন্ধান অব্যাহত রাখবে বলে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে প্রত্যাশা করেন।

 প্রবাস জীবনে বাংলাদেশি
প্রবাস জীবনে বাংলাদেশি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি আশা করি, বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য প্রবাসীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করবেন। অভিবাসীদের কল্যাণ ও অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার বিশ্বময় সুষ্ঠু, নিরাপদ ও নিয়মিত অভিবাসন এবং অভিবাসন ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!