যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে আগামী ৬ ও ৭ মে দুই দিনব্যাপী ‘উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব ২০২৩’ অনুষ্ঠিত হবে।
উৎসবে থাকবে খ্যাতিমান রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পীদের পরিবেশনা, রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি প্রদর্শনী, সেমিনার, বিদেশী শিল্পীদের কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন, ভেন্যুতে রবীন্দ্র ভাস্কর্য স্থাপনসহ নানা আয়োজন।
রবীন্দ্র সম্মিলন পরিষদ ইউএসএ’র আয়োজনে উৎসবে সহযোগী ভারতীয় বাঙালিদের সবচেয়ে বড় সংগঠন কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-সিএবি ও বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইড।
শনিবার বিকেলে জ্যামাইকার আশা হোম কেয়ার অডিটরিয়ামে আয়োজিত সংবাদ সম্মলেনে উদ্যোক্তারা জানান, বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের ২৫টি অঙ্গরাজ্য থেকে লেখক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কলাকুশলী ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা রবীন্দ্র উৎসবে যোগ দেবেন।
রবীন্দ্র উৎসবের আহ্বায়ক হাসানুজ্জামান সাকীর উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রবীন্দ্র উৎসবের উপদেষ্টা ও সাপ্তাহিক বাঙ্গালীর সম্পাদক কৌশিক আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র উৎসবের উপদেষ্টা কালচারাল এসোসিয়েশন অব বেঙ্গল-সিএবি’র প্রেসিডেন্ট রণদেব সরকার, অ্যানি ফেরদৌস-সহ আয়োজকরা।
কৌশিক আহমেদ বলেন, নোবেলজয়ী প্রথম বাঙালি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দর্শন, চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ অভিবাসী জীবনে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতেই আমাদের এ উদ্যোগ। দু’দিনের রবীন্দ্র উৎসবে আমরা এমন কিছু ব্যতিক্রমী আয়োজন করছি যা উৎসবকে ভিন্নমাত্রা দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
তিনি উল্লেখ করেন, বেশ কিছু নিরীক্ষাধর্মী অনুষ্ঠান আয়োজনেরও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, যেমন রবীন্দ্র সংগীতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, কীর্তন, রাগ ও শাস্ত্রীয় সংগীতের ধারা প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি, শ্রেষ্ঠ চরিত্রগুলো নিয়ে প্রীতি বিতর্ক, রবি ঠাকুরের জীবনে নারীর ভ‚মিকা শীর্ষক দুটি অনুষ্ঠান ‘ওরা সন্ধ্যার মেঘমালা’ এবং ‘কার মিলন চাও বিরহী’ পরিবেশিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, উৎসবে ‘তাসের দেশ’, ‘রক্ত করবী’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘ভানু সিংহের পদাবলী’ গীতি নৃত্যনাট্য এবং স্ত্রীর পত্র ও মিছে কোলাহল নামে দুটি নাটক মঞ্চস্থ হবে। রবীন্দ্র সংগীত গাইবেন নিউইয়র্কের শ্রী চিন্ময় সেন্টারের তিরিশজন বিদেশি শিল্পী। উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠান হবে শতকণ্ঠে। দেখানো হবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে অস্কারখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায় নির্মিত একটি তথ্যচিত্র, নিউইয়র্ক প্রবাসী বরেণ্য সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিরল বইয়ের সংগ্রহ নিয়ে ডক্যুফিল্ম ‘স্টাডিরুম’ এবং সুমন মুখোপাধ্যায়ের চলচ্চিত্র ‘শেষের কবিতা’।
দুদিনের উৎসবে বাংলাদেশি আমেরিকান শিল্পীরা রবি ঠাকুরকে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরবেন তাদের চারুশিল্পের মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নিজস্ব আঁকা ছবিও প্রদর্শনী হবে। উৎসব প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হবে রবি ঠাকুরের একটি ভাস্কর্য। নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথ, রবীন্দ্রনাথ তর্কে-বিতর্কে এবং বিদেশিদের চোখে রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক তিনটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
উৎসবের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী ড. রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মভূষণপ্রাপ্ত নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাককে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ।
উৎসবে বিশেষ অতিথি উপস্থিত থাকবেন মেক্সিকোতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মো. মনিরুল ইসলাম ও ভারতের কনসাল জেনারেল রণধীর জয়সুয়াল।
এছাড়াও আয়োজনের বিভিন্ন পর্বে উপস্থিত থাকবেন একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ড. জ্যোতিপ্রকাশ দও, একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক, বিজ্ঞানী ড. নূরুন নবী, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. পবিত্র সরকার, ভারতীয় লেখক আলোলিকা মুখোপাধ্যায়, ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত গীতিকার, প্রাবন্ধিক ও বক্তা চন্দ্রিল ভট্টাচার্য ও ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরসহ অনেকে।
এছাড়াও ভারত, বাংলাদেশ, ব্রিটেন, জার্মানী, কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত: ২৫টি অঙ্গরাজ্য থেকে কবি, লেখক, সাহিত্যিক, শিল্পী, কলাকুশলী ও রবীন্দ্র অনুরাগীরা অংশ নেবেন। বাংলাদেশি, ভারতীয়দের অন্তত: ১৫টি সংগঠন উৎসবে অংশ নিচ্ছে। অনুষ্ঠানে ভিন্ন ভাষাভাষী বিদেশি সংগঠনও পারফর্ম করবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, প্রখ্যাত রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী অমিয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পারফর্মিং আর্টস বিপা’র কর্ণধার সেলিমা আশরাফকে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে কলকাতার সংগীত শিল্পী শ্রেয়া গুহঠাকুরতা সংগীত পরিবেশন করবেন।
কৌশিক আহমেদ বলেন, উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব দুই বাংলার বাঙালিদের আয়োজন। এতে আয়োজক সংগঠন, অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন, শিল্পী-সাহিত্যিক, কলাকুশলী, রবীন্দ্র অনুরাগী সবাই দুই দেশের বাঙালি। উত্তর আমেরিকা রবীন্দ্র উৎসব বিদেশের মাটিতে বাংলা সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার এক অনন্য নজির হয়ে থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বেশ কয়েক ঘন্টাব্যাপী প্রবাসী শিল্পীদের নিয়ে সঙ্গীতের বিশেষ মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। শিল্পী মহীতোষ তালুকদার তাপসের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মহড়ায় প্রচুর সংখ্যক শিল্পী অংশ নেন।
প্রবাসের সব খবর জানতে, এখানে ক্লিক করে আকাশযাত্রার ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকার অনুরোধ