‘ফিলিস্তিনের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল দ্ব্যর্থহীন সমর্থন’

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালিকি বলেছেন, বাংলাদেশ একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে সব সময়ই বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের পাশে থেকেছে। দখল ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বহু বছরের সংগ্রামের কারণে বঙ্গবন্ধু আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের বেদনা দৃঢ়ভাবে অনুধাবন করেছিলেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যে বক্তব্য রাখেন সেখানেও তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি দ্ব্যর্থহীন সমর্থন ব্যক্ত করেন। ফিলিস্তিনের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সেই সমর্থনের ঘোষণার প্রতি আজও বাংলাদেশ অবিচল রয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়ন দৃশ্যমান হওয়া ফিলিস্তিনের জনগণের জন্যও উৎসাহের বিষয়।

মঙ্গলবার মুজিববর্ষ উপলক্ষে জর্ডানের বাংলাদেশ দূতাবাস উদ্যোগে ‘স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা’ শীর্ষক ওয়েবিনারের এই কথাগুলো বলেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালিকি।

ওয়েবিনারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন প্রধান অতিথি এবং ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি বিশেষ অতিথি ছিলেন। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই ওয়েবিনারে আরো বক্তব্য রাখেন জর্ডানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী শাহ আলি ফরহাদ ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। অতিথি আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন জর্ডানের কুটনৈতিক ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা।

Travelion – Mobile

ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকারের প্রতি যে ভ্রাতৃত্ববোধ অব্যাহত রেখেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়। বাংলাদেশের বাস্তবভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান বলেন, বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আম্মান দূতাবাস বছরব্যাপী একাধিক সেমিনারের পরিকল্পনা করেছে। তারই অংশ হিসেবে আয়োজিত প্রথম সিমানারটি নিঃসন্দেহে বিশেষ গুরত্ব বহন করে। বাংলাদেশ সব সময়ই তার সাফল্য ও সমৃদ্ধি লাভের ক্ষেত্রে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশগুলোকে পাশে পেয়েছে। তাই বাংলাদেশের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে আজকের সোনার বাংলার সাফল্য গাঁথার আনন্দঘন উদযাপনে জর্ডান ও ফিলিস্তিনের জনগণকে উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করছে।

নাহিদা সোবহান আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ও আমদের স্বাধীনতার ইতিহাস উতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখতেন তাঁরই কন্যার হাত ধরে বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে সেই স্বপ্নের বাংলাদেশের।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখতেন। তিনি যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা এবং সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত দেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আজ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, তথ্য, প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি খাত বিশ্ব অর্থনীতিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। আমরা এখন খাদ্য ও মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ক্ষুধার কারণে এখানে কেউ মারা যায় না। ২০১০ সাল থেকে ৮ মিলিয়ন মানুষকে দারিদ্র্যের বাইরে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে সফলভাবে এমডিজির লক্ষ্য সমূহ অর্জন করেছে এবং বর্তমানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ পরবর্তী শতাব্দীতে নিজেকে সর্বাধিক উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে ডেল্টা প্ল্যান -২১০০ গ্রহণ করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সফল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরলস চেষ্টা বাংলাদেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি স্বপ্নের নাম। বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। স্বাধীন রাষ্ট্রের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের কূটনীতিক আদর্শ নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টার কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আত্মপ্রত্যয় ও আপন মহিমায় আজ উড়ে চলেছে লাল সবুজের পতাকা।

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী শাহ আলী ফরহাদ বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের অবিসংবাদিত নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার বাস্তবায়নের সফল কারিগর। যে সপ্ন একদিন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

শাহ আলী ফরহাদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার মর্মার্থ ব্যাখ্যা করে বলেন, ক্ষুধা, দারিদ্র ও শোষণ মুক্ত যে অসম্প্রদায়িক স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়নে শেখ হাসিনাকে নানা ঘাত প্রতিঘাত মোকাবেলা করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির পথ চলাকে যারা অঙ্কুরেই বিনষ্ট করতে চেয়েছিল তাদের সকল ঘৃণ্য চক্রান্তকে নস্যাৎ করে দিয়ে বাংলাদেশ শেখ হাসিনার হাত ধরে হেঁটে চলেছে উন্নয়নের মহাসড়কে। শাহ আলী ফরহাদ তার বক্তব্য শেষে বাংলাদেশের উন্নয়নবিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য বঙ্গবন্ধুর যে আকাঙ্ক্ষা, যে স্বপ্নের বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু দেখতে চেয়েছিলেন তা বাস্তবায়নে দলমত নির্বিশেষে একই জাতীয়তা বোধ ও চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

পুরো আলোচনার ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!