দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উদ্ধারে তৎপর রাষ্ট্রদূত

দক্ষিণ কোরিয়ায় কিছু বাংলাদেশির কারণে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে অবিরত। বাংলাদেশিদের মধ্যে নানা গ্রুপিং, নিজেদের মধ্যে স্বার্থেরদ্বন্দ্ব, অতীতে দূতাবাসকে ব্যবহার করে নানা অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তবে বর্তমান রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দুতাবাসের ভেতরে কিছুটা শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা ফিরেে এসেছে। তার কঠোর অবস্থানের কারনে দূতাবাসের ভেতরে থাকা দূর্নীতিবাজ চক্র এখন কোণঠাসা।

কোরিয়ায় বসে এক শ্রেনীর লোকের বাংলাদেশ বিরোধী অপতৎপরতার কারনে নানামূখি হয়রানীর শিকার শান্তি প্রিয় পরিশ্রমী দেশপ্রেমিক রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। কিছু গুটিবাজের অপতৎপরতার কারণে বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জায়গা দখল করছে এখন নেপাল ও ভিয়েতনামের শ্রমিকরা। বাংলাদেশ সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না নিলে কোরিয়াতে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে,একই সাথে ইমেজ ক্ষুন্ন হতে পারে।

তবে আশার কথা যে কোরিয়ায় নিযুক্ত বর্তমান রাষ্ট্রদুত আবিদা ইসলাম দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এরই মধ্যে জারী করেছেন নানা অফিস আদেশ। দুতাবাসের ভেতরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতার সাথে কাজ করার তাগিদ দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।

Travelion – Mobile

এদিকে বাংলাদেশের পরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাং কিউন হোয়ার সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন। বাংলাদেশে আটকে পড়া কর্মী ও শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন ড. মোমেন। গত ৬ অক্টোবর টেলিফোন আলাপে এ অনুরোধ জানান তিনি। ড. মোমেন বলেন, কোভিড মহামারির প্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে আসা কর্মী ও শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আটকে পড়েছেন। তারা ভিসা জটিলতায়ও পড়েছেন। তাদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ড. মোমেন বাংলাদেশে একটি ভোকেশনাল ট্রেনিং সেন্টার খোলার জন্য কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এই সেন্টার থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়োগদাতারা যেন দক্ষ কর্মী নিতে পারেন। এছাড়াও ফোনালাপে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি তুলে ধরেন ড. মোমেন। এ সময় কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একযোগে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। আটকেপড়া বাংলাদেশিদের ফেরাতে রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম অনবরত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বলছেন, রাষ্ট্রদূত স্বচ্ছতা জবাবদিহিতার সাথে দূতাবাস পরিচালনা করছেন এতেই তারা সন্তুষ্ট। দক্ষিণ কোরিয়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খুলে তিনি নজির স্থাপন করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বাংলাদেশি শিশুদের জন্য বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রমও হাতে নেয়া হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোরিয়ায় যেসব বাংলাদেশি রয়েছেন তাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে গুটি কয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্টাণের কারণে। কতিপয় ব্যক্তির কারনে কোরিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসেরও সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। শেষপর্যন্ত দূতাবাসকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে আবু বক্কর সিদ্দিক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে সূত্র জানায়। তিনি আবার বঙ্গবন্ধু পরিষদ কোরিয়া শাখার সভাপতি। সম্প্রতি তাকে সভাপতি পদ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।

দুতাবাস সূত্র জানায়, গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রদুত আবিদা ইসলাম ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি অফিস আদেশ জারি করেন। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিগত ১৩ আগস্ট ২০২০ তারিখের পত্রের ভিত্তিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট পরিচালনা সম্পর্কিত বিষয়ে প্রাইম ট্রাভেলস লিমিটেড এর স্বত্বাধিকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোরিয়ার নাগরিক জনাব আবু বক্কর সিদ্দিক গত জুন ২০২০ বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমাগত যে প্রচারণা চালিয়ে আসছেন তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা উদ্দেশ্যমূলক ভিত্তি হিসেবে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশে অবস্থানরত দক্ষিণ কোরিয়ার ইপিএস কর্মী, শিক্ষার্থী ও অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে দূতাবাসের কার্যক্রম সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানো, দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অনুমতি প্রদানের পূর্বে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, ব্যক্তিগত আর্থিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর অনুমতি ছাড়াই টিকিট বিক্রি করে সাধারন মানুষকে প্রতারিত করা ইত্যাদি সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কর্মকাণ্ডের সাথে প্রাইম ট্রাভেলস লিমিটেড এর স্বত্বাধিকারী প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। এছাড়া একজন বিদেশী নাগরিক হয়ে এই স্বত্তাধিকারী সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশের বর্শবর্তি  হয়ে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিশেষত সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে নৈতিকতাবিবর্জিত অপ প্রচার চালানোর ধৃষ্টতা দেখান- যা দক্ষিণ কোরিয়ার আইনেরও পরিপন্থী।”

বর্ণিত অবস্থায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোরিয়ার নাগরিক আবু বক্কর সিদ্দিক এর মালিকানাধীন ‘প্রাইম ট্রাভেলস লিমিটেডকে’ বাংলাদেশ দূতাবাস সিউল কতৃক কালো তালিকাভুক্ত করা হলো এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে প্রাইম ট্রাভেলস লিমিটেডের সঙ্গে সকল প্রকার যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেন করা থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’ 

জানা গেছে, দুতাবাস থেকে এ অফিস আদেশ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব,প্রশাসন ও কন্সুলারের অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সচিবসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়েছে।’

সুত্র জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল দূতাবাস এর পক্ষ থেকে পাওয়া আবু বকর সিদ্দিকের বিষয়গুলো সরকার গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করেছে। বিভিন্ন মহলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা ও দূর্নীতি দমন কমিশনও এ বিষয়ে অবহিত। কোরিয়ার নাগরিক আবু বক্কর সিদ্দিক রাজনৈতিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ এর সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি দক্ষিণ কোরিয়া শাখার সভাপতি। তার বিরুদ্ধে দুতাবাস বিভিন্ন পর্যায়ে অভিযোগ দেয়ার পর বঙ্গবন্ধু পরিষদকে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বলে দলের হাইকমান্ড।

শেষপর্যন্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারন সম্পাদক ডা. এস এ মালেক ২৯ সেপ্টেম্বর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরন করেন। তাতে উল্লেখ করা হয় ‘বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী তৎপরতায় সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারণে বঙ্গবন্ধু পরিষদ, দক্ষিণ কোরিয়া শাখার সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক রানাকে সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হলো। অচিরেই তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগসমূহ বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে যা অবহিত করা হয়েছে তা তাকে জানানো হবে। তদন্তে দোষী প্রমানিত হলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ বাজেয়াপ্ত করা হবে।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!